নিলামে আগ্রহ হারাচ্ছেন বিডাররা

কাস্টমসে অনুমোদন বিলম্ব

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ৫ জানুয়ারি, ২০২১ at ৬:৫৪ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম কাস্টমসে নিলাম সম্পন্ন হওয়ার পর অনুমোদন বিলম্বে ভোগান্তিতে পড়ছেন বিডাররা (নিলামে অংশগ্রহণকারী)। চলতি ২০২০-২০২১ অর্থবছরে প্রথম ছয় মাসে নিলাম কার্যক্রমে গতি বাড়লেও সর্বোচ্চ দরদাতার অনুকূলে পণ্য বিক্রয় অনুমোদন হচ্ছে শম্ভূকগতিতে। ফলে অনেক বিডার উল্টো নিলামে অংশ নিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন। বিডাররা বলছেন, নিলামের মাধ্যমে পণ্য নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে জারি করা নিলামের স্থায়ী আদেশ মানা হচ্ছে না। এতে অনেক বিডার আগ্রহ হারিয়ে এখন আর অংশ নিচ্ছেন না। তবে নিলাম শাখা সংশ্লিষ্টরা অনুমোদন বিলম্বের বিষয়টি স্বীকার করে বলছেন, নিলাম শাখায় দীর্ঘদিনের জট পরিষ্কার করা হচ্ছে। বন্দরের শেডে দীর্ঘ সময় পড়ে থাকা নিলামযোগ্য পণ্য নিলামে তোলা হচ্ছে। এছাড়া ধ্বংসযোগ্য বিপজ্জনক রাসায়নিক পদার্থও ধ্বংস করা হচ্ছে। ফলে নিলাম অনুমোদনে খানিকটা বিলম্ব হচ্ছে।
এদিকে গত ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের (জুলাই-ডিসেম্বর) তুলনায় চলতি ২০২০-২০২১ অর্থবছরের একই সময়ে নিলাম থেকে প্রায় ৫ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আয় হয়েছে বলে জানিয়েছেন নিলাম শাখার কর্মকর্তারা। নিলাম শাখা সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২০-২০২১ অর্থবছরের জুলাই মাসে ১৮৯ লট পণ্যের বিপরীতে রাজস্ব আয় হয় ১০ কোটি ৩৮ লাখ ২০ হাজার ৮৩৭ কোটি টাকা। এছাড়া সেপ্টেম্বরে ৪৯ লট পণ্যের নিলামে তুলে রাজস্ব আয় হয় ৯ কোটি ৯৪ লাখ ৪ হাজার ১১২ টাকা এবং অক্টোবরে ৩৭৭ লটের বিপরীতে ৭ কোটি ৪৭ লাখ ৯৮ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা, নভেম্বরে ১২৭ লটের বিপরীতে ৬ কোটি ৩৫ লাখ ৪৪ হাজার ৭৮৩ টাকা এবং ডিসেম্বরে ১৫৩ লটের বিপরীতে ৯ কোটি ৯০ লাখ ২৮ হাজার ২৬০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়। সব মিলিয়ে চলতি ২০২০-২০২১ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ৮টি নিলামে মোট ৮৯৫ লট পণ্য তোলা হয়। এরমধ্যে অনুমোদনের পর খালাস হয়েছে ১৬৬ লটে মোট ২৫৩ কন্টেনার পণ্য। এছাড়া সরকারি কোষাগারে রাজস্ব জমা পড়েছে ৪৪ কোটি ৫ লাখ ৯৬ হাজার ৭১০ টাকা।
অপরদিকে গত ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে প্রথম ছয় মাসে ৬টি নিলামে এক হাজার ১৬৭ লট পণ্য তোলা হয়। অনুমোদনের পরে ১৩৭টি লটে ১৮৭ কন্টেনার পণ্য খালাস হয়। বিপরীতে রাজস্ব আয় হয়েছে ৪০ কোটি ৯০ লাখ ৪২ হাজার ৫৪৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের তুলনায় রাজস্ব আয় বেড়েছে প্রায় ৫ কোটি টাকা। রাজস্ব আয় বাড়লেও নিলাম অনুমোদনের ধীর গতির কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কয়েকজন বিডার।
নিলাম শাখার একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আগে নিলামের স্থায়ী আদেশ মতে, ‘সংরক্ষিত মূল্য নির্ধারণ’ কমিটির বৈঠক হতো না। এখন পণ্য নিলামে তোলার আগেই বৈঠকে মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সেকশন থেকে মূল্য নিয়ে ক্যাটালগে অন্তর্ভূক্ত করা হচ্ছে। এছাড়া নিলাম সম্পন্ন হওয়ার পর অনুমোদনের জন্য আবার বৈঠক করতে হচ্ছে। একই কমিটি দুইবার বৈঠক করার কারণে সময়ক্ষেপণ হচ্ছে। চট্টগ্রাম কাস্টমসের নিয়মিত বিডার এবং ‘আর রেজা’ প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী সৈয়দ জহিরুল ইসলাম নাঈম দৈনিক আজাদীকে বলেন, নিলাম পণ্যের অনুমোদন দিতে দেরি হওয়ায় আমাদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। সবাই একটা নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে নিলামের পণ্য কিনেন। কিন্তু অনুমোদন ও নিলামের বিভিন্ন ধাপে ধীরগতির কারণে আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। অনেক সময় আমদানিকারকরা মামলা করে দেন, এতে আমাদের জামানাতের ব্যাংক পে অর্ডারও আটকে যায়। এখন যেহেতু আগেই মূল্য নির্ধারণ করা হচ্ছে, তাই স্থায়ী আদেশ মতে ৬০ শতাংশ দর উঠলেই সাথে সাথে বিক্রয় অনুমোদন দেয়ার কথা। কিন্তু সেখানেও বিলম্ব হচ্ছে। নিলামের স্থায়ী আদেশ মতে যদি ঠিক সময়ে পণ্যের অনুমোদন দেয়া হয়, তাহলে বিডাররা আরো বেশি নিলামে অংশ নিতে উৎসাহী হবে। আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে-এখন পর্যন্ত গত ৩১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নিলামে সর্বোচ্চ দরদাতার তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। এছাড়া গত ৩০ নভেম্বর এবং ২১ ডিসেম্বর সম্পন্ন হওয়া নিলামের অনুমোদন হয়নি। আর আগেও কিছু কিছু নিলামের ৩০ শতাংশ মতো লটের পণ্যের অনুমোদন পাওয়া যায়নি। এটি দুঃখজনক।
এদিকে নিলাম নিষ্পত্তিতে এনবিআর থেকে জারি করা নিলামের স্থায়ী আদেশে বলা হয়েছে, নিলাম কমিটি সংরক্ষিত মূল্য ও প্রাপ্ত দরপত্রমূল্য যাচাই করে নিলাম অনুমোদন বা প্রত্যাখান বিষয়ে কমিশনারের নিকট সুপারিশ করবেন। প্রথম নিলামে সংরক্ষিত মূল্যের কমপক্ষে ৬০ শতাংশ দরপত্র মূল্যের পাওয়া গেলে তখন পণ্য বিক্রয়ের সুপারিশ করা যাবে। প্রথম নিলামে ৬০ শতাংশ দরপত্র মূল্য পাওয়া না গেলে ৬০ শতাংশের নিচের সর্বোচ্চ দরদাতাকে এবং পর্যায়ক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় সর্বোচ্চ দরদাতাকে কমপক্ষে ৬০ শতাংশ মূল্যে পণ্য কেনার জন্য পাঁচ কার্যদিবসের সময়সীমা দিয়ে নিলাম কমিটির আহ্বায়ক লিখিত অফার করতে পারবেন। এক্ষেত্রে সংরক্ষিত মূল্যের ৬০ শতাংশ মূল্যের অফার পাওয়া গেলে তখন পণ্য বিক্রির সুপারিশ করা যাবে। এছাড়া প্রথম নিলামে ৬০ শতাংশ দরপত্র মূল্য পাওয়া না গেলে দ্বিতীয়বার নিলামে তুলতে হবে। দ্বিতীয় নিলামে প্রথম নিলাম অপেক্ষা বেশি মূল্য পাওয়া গেলে পণ্য বিক্রির সুপারিশ করা যাবে। প্রথম ও দ্বিতীয় নিলামে পণ্য বিক্রি না তখন তৃতীয় নিলামে তুলতে হবে। সেক্ষেত্রে তৃতীয় নিলামে যে মূল্য পাওয়া যাবে সেই মূল্যে পণ্য বিক্রির সুপারিশ করা যাবে। অপরদিকে পণ্যের নিলাম সম্পন্ন হওয়ার ১০ দিনের মধ্যে নিলাম কমিটি দরপত্র যাচাই বাছাই করে সর্বোচ্চ বিডারের (নিলাম অংশগ্রহণকারী) অনুকূলে বিক্রয় অনুমোদন দিবে। তবে যৌক্তিক কারণে সেটি আরো পাঁচদিন বাড়ানো যেতে পারে। কিন্তু এক্ষেত্রে সেটি মানা হচ্ছে না। ফলে ভোগান্তিতে পড়ছেন বিডাররা।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের যুগ্ম কমিশনার (নিলাম শাখা) মোহাম্মদ মাহবুব হাসান দৈনিক আজাদীকে বলেন, নিলাম শাখাতে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ চলছে। পণ্য নিলামে তোলার পাশাপাশি আমরা ধ্বংস কার্যক্রমও অব্যাহত রেখেছি। একসাথে অনেক কাজ শুরু হওয়ার পণ্য অনুমোদনে কিছুটা ধীরগতিতে হচ্ছে। তবে সেটি সাময়িক। এটি দীর্ঘায়িত হবে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচসিক পরিচালিত স্কুলের ভর্তির লটারিতে স্বচ্ছতা বজায় রাখার নির্দেশ
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬