নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ চাই

| বৃহস্পতিবার , ৮ জুন, ২০২৩ at ৫:৪৪ পূর্বাহ্ণ

এ দেশের প্রতিটি মানুষ অবগত যে, বেশ কিছুদিন ধরে বিভিন্ন ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর মূল্য অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে জনজীবনে নেমে এসেছে অনেক ভোগান্তি ও দুর্ভোগ। সবাই প্রত্যক্ষ করছে, বাজারের ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণই নেই! ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে বিভিন্ন অজুহাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষকে বিপাকে ফেলছেন। চারদিকে কেবল সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের গণ্ডিতে বন্দি বাংলাদেশ। ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর প্রতিটি কাজেও এখন চলছে সিন্ডিকেটের তৎপরতা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিন্ডিকেটে অর্থনৈতিক বিপর্যয়, টাকা পাচার ও দেশ অবনত হচ্ছে। জনসাধারণ খাদ্য জোগানে দিনের পর দিন ধুঁকছে। এসব দেখে প্রতিহিংসা বাড়ছে ও দুর্নীতিতে ঝুঁকে যাচ্ছে সমাজ। তরুণ প্রজন্ম তা দেখে শিখছে, যা ভবিষ্যতের জন্য মোটেও মঙ্গলজনক নয়। তাঁরা বলছেন, বর্তমানে সিন্ডিকেটের থাবায় অস্থির হয়ে উঠেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার। বিভিন্ন পণ্যের দাম মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। এ অবস্থায় ‘সরকারের ভেতর যে সরকার’ সিন্ডিকেট চক্রকে উৎসাহিত করে যাচ্ছে, তা ভেঙে দিতে হবে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালে এ সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া সম্ভব। এ ক্ষেত্রে সরকারের উদ্যোগ ও সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন। দেশের মানুষ মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কাজ করে যাচ্ছে। কৃষিপণ্য উৎপাদন করছে। প্রতিনিয়ত শ্রম দিয়ে ভালো ফলন ফলাচ্ছে। কিন্তু তারা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত। সব মহলে সিন্ডিকেট। প্রতিটি মহল্লা থেকে শুরু করে উর্ধ্বতন জায়গা পর্যন্ত সিন্ডিকেটবাজদের শিকড় উপড়ে ফেলে সিন্ডিকেটমুক্ত বাংলাদেশ গড়া এখন সময়ের দাবি। এদের কারণে দেশের বাজারে একবার যে পণ্যের দাম বাড়ে, তা আর কমে না! সরকারি বিভিন্ন সংস্থা এ ব্যাপারে কাজ করলেও তা তেমন কার্যকর ভূমিকা না রাখায় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আসছে না। বাজার কারসাজি প্রসঙ্গে খোদ সরকারের মন্ত্রী পর্যায় থেকে বলা হচ্ছে, এর পেছনে মধ্যস্বত্বভোগী ও সিন্ডিকেট জড়িত। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরও বলছে, দেশে পেঁয়াজ, আদাসহ সব পণ্যের যে মজুত আছে, তাতে কুরবানির ঈদের আগে সংকট হওয়ার কথা নয়। পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা অযৌক্তিকভাবে দাম বাড়াচ্ছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যে বলা হয়েছে, সমপ্রতি পেঁয়াজের অযৌক্তিক দাম বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের পক্ষ থেকে আমদানির হুমকি দেওয়া হলে কিছুদিনের জন্য তা সহনীয় হয়। কিন্তু কিছুদিন বাদেই পরিস্থিতি আগের অবস্থায় ফিরে যায়। এভাবে কিছু পণ্যের দাম সরকার বেঁধে দেওয়ার পরও যে তা কার্যকর হচ্ছে না, এটা বাজার ব্যবস্থাপনার বড় সমস্যা। সব মিলে এখন বাজারব্যবস্থায় সরকারের কঠোর হস্তক্ষেপ জরুরি হয়ে পড়েছে। ভোক্তা অধিকারসহ বাজার ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোকে লোক দেখানো তদারকি থেকে বেরিয়ে এসে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।

সর্বশেষ বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাঁচ কারণে দেশে মূল্যস্ফীতির হার বাড়ছে। রাশিয়াইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হওয়া এবং বিশ্ববাজারে বিভিন্ন পণ্যের দাম বৃদ্ধির প্রভাবে দেশের বাজারে পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন ও করোনার পর থেকে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধি মূল্যস্ফীতির ওপর প্রভাব ফেলেছে। গ্যাসবিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি মূল্যস্ফীতিকে উসকে দিচ্ছে। সমপ্রতি এক অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর বলেছেন, এখন যে মূল্যস্ফীতি হচ্ছে, তা নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের খুব বেশি কিছু করার নেই। কারণ এখন যে মূল্যস্ফীতি হচ্ছে, তা টাকার প্রবাহ বৃদ্ধিজনিত কারণে হয়নি। রাশিয়াইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে বিভিন্ন পণ্যের দামে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এ অবস্থায় বিভিন্ন পণ্যের ক্ষেত্রে আমদানিনির্ভরতা পরিহার করে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে গুরুত্ব বাড়াতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সব ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন সম্ভব নয়। কাজেই যেসব ক্ষেত্রে সম্ভব সেসব ক্ষেত্রে সফল হওয়ার পদক্ষেপ নিতে হবে। গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে ইতোমধ্যে দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। এসব পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে নিত্যপণ্যের দামেও। এ অবস্থায় নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের বিকল্প নেই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে