নিকাহ রেজিস্ট্রি প্রসঙ্গে

জেনে নিন আপনার যত অধিকার

এ এম জিয়া হাবীব আহসান | রবিবার , ২৫ এপ্রিল, ২০২১ at ৬:৩২ পূর্বাহ্ণ

প্রশ্ন : মুসলিম বিবাহ কি একটি চুক্তি ?
উত্তর : মুসলিম বিবাহ একটি দেওয়ানী চুক্তি। এ চুক্তি থেকে পক্ষদ্বয়ের মধ্যে কিছু দায়-দায়িত্ব সৃষ্টি হয়। একটি ছেলে ও মেয়ের বা পুরুষ ও নারীর সহবাস, জীবনযাপন ও সংসার ধর্ম পালন এর লক্ষ্যে, ধর্মীয় ও সামাজিক সুরক্ষা দিতেই বিবাহ প্রথার জন্ম। অধিকার প্রতিষ্ঠা, দায় দায়িত্ব নির্ধারণ, সন্তানের পিতৃত্ব, সম্পত্তির উত্তরাধিকার নির্ণয় ও বিভিন্ন প্রতারণা প্রতিরোধে বিবাহ রেজিস্ট্র্রি হওয়া আবশ্যক। এতদ সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়ে সম্যক ধারণা লাভের জন্য এ সম্পর্কে সাধারণ ধারণা অর্জন ও চর্চা করা আবশ্যক। এতদ সংক্রান্ত আইন সমূহ হচ্ছে- যথা (ক) মুসলিম বিবাহ ও তালাক (রেজিষ্ট্রীকরণ) আইন ১৯৭৪ (১৯৭৪ সনের ৫২ নং আইন), (খ) মুসলিম বিবাহ ও তালাক (রেজিষ্ট্রীকরণ) বিধিমালা, ১৯৭৫, সংশোধনী ২০০৯ (গ) মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১, (ঘ) মুসলিম পারিবারিক আইন বিধিমালা, ১৯৬১, (ঙ) মুসলিম বিবাহ ভঙ্গ আইন, ১৯৩৯ (১৯৩৯ সনের ৮ নং আইন), (চ) বাল্য বিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭ (ছ) নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এবং ২০০৩ এর সর্বশেষ সংশোধনী সহ, (জ) শিশু আইন ২০১৩, ইত্যাদি।
প্রশ্ন : কাবিননামা কি শুদ্ধভাবে পূরণ করা আবশ্যক?
উত্তরঃ তাড়াহুড়ো এবং ভুল তথ্যের কারণে কাবিননামা সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় এতে সঠিক তথ্যগুলো উপস্থাপিত হয় না। নাবালকের বয়স বাড়িয়ে দেয়া হয়। পূর্বে স্ত্রী বা স্বামী থাকার বিষয়ে তথ্য গোপন করা হয়। কিংবা নাবালক বিয়ের ক্ষেত্রে মা বাবা কিংবা অভিভাবকদের উপস্থিতিতে নিশ্চিত করা হয় না। এতে সম্মানিত কাজী সাহেব বা নিকাহ রেজিষ্ট্রারদেরও বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হয়। নিকাহনামা বা কাবিননামায় বর, কনে, সাক্ষী সহ সংশ্লিষ্ট সকলের নাম ঠিকানা বিভিন্ন তথ্য, দায় দায়িত্ব ইত্যাদি সঠিক শুদ্ধভাবে উভয় পক্ষের সম্মতিতে লিপিবদ্ধ করতে হয়। নিকাহনামায় বর কনে ও সাক্ষীদের জাতীয় পরিচয়পত্র / পাসপোর্ট / জন্ম সনদ এবং ছবি সংযুক্ত থাকা বাঞ্চনীয় ।
প্রশ্ন : নিকাহ রেজিষ্ট্রি করা কি বাধ্যতামূলক ?
উত্তর : হ্যাঁ, বিয়ে রেজিষ্ট্রি না করাকে শাস্তিমূলক অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। মুসলিম বিয়ে ও তালাক রেজিস্ট্রেশন এ্যাক্ট ১৯৭৪ এর ৩ অনুযায়ী সরকারের কাছ থেকে লাইসেন্স প্রাপ্ত বিয়ে বা নিকাহ রেজিস্ট্রারের উপর বিয়ের রেজিষ্ট্রেশনের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে। রেজিষ্ট্রার বিয়ে সম্পাদন করেননি সেক্ষেত্রে যে ব্যক্তি সম্পাদন করেছেন তিনিই রেজিষ্ট্রারের কাছে রেজিস্ট্রির উদ্দেশ্যে রিপোর্ট করবেন। এ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার জন্য ২(দুই) বছর পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা পাঁচ হাজার টাকা থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা পর্যন্ত বর্ধনযোগ্য অর্থদণ্ড কিংবা দুটোই হতে পারে। বরকে নিকাহ রেজিস্ট্রি ফি আদায় করতে হয়।
প্রশ্ন : বিয়ে ও তালাক রেজিস্ট্রির ক্ষেত্রে কী কী সতর্কতা রয়েছে?
উত্তর : তালাকের নোটিশ মেয়র/চেয়ারম্যান কর্তৃক প্রদত্ত হওয়ার নব্বই দিন পরে কাজী অফিসে তালাক রেজিস্ট্রি করা যাবে, এর আগে নয়। বিবাহের মতো নিকাহ রেজিষ্ট্রারগণ যখন তখন তালাক রেজিস্ট্রি করতে পারেন না। এজন্যে তার কাছে আবেদন আসলে তিনি অবশ্যই পরীক্ষা করে দেখবেন তালাকটি আইনানুগ ভাবে কার্যকরী হয়েছে কিনা। অর্থাৎ মুসলিম পারিবারিক আইনের বিধান মতে তালাক কার্যকরী হলেই তিনি তা রেজিস্ট্রি করবেন। তালাক ই-তফইজ এর ক্ষেত্রে কাবিন নামার সত্যায়িত কপি ছাড়া তা রেজিষ্ট্রি করা যাবে না। (সূত্র ও মুসলিম বিবাহ ও তালাক রেজিঃ আইন) মুসলিম বিবাহ ও তালাক রেজিষ্ট্রি বিধিমালা ১৯৭৫ এর বিধি মোতাবেক বিবাহ- রেজিষ্ট্রির পূর্বে কাজীকে বিবাহের পক্ষগণকে, সাক্ষীকে, উকিলকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে নিজেকে পরিতুষ্ট করার ক্ষমতা দিয়েছে। এজন্যে তাকে এ ব্যাপারে তুষ্ট হতে হবে। যৌথ তালাক বা ‘খুলা’ তালাক কাজী সাহেব রেজিষ্ট্রি করতে পারেন তবে তা মেয়র বা চেয়ারম্যান বরাবরে নোটিশ দিতে হবে, যা ৯০ দিন পর কার্যকর হবে ।
প্রশ্ন : নিকাহ সংক্রান্ত তথ্য গোপনের শাস্তি কী?
উত্তর : নিকাহ রেজিস্ট্রার কর্তৃক অনুষ্ঠিত হয়নি এমন বিবাহ মুসলিম বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রেশন আইনের অধীনে রেজিস্ট্রিকরণের উদ্দেশ্যে তার নিকট যে ব্যক্তি কর্তৃক বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে সে ব্যক্তি কর্তৃক প্রতিবেদন দাখিল বাধ্যতামূলক। কোন ইমাম বা মৌলভী সাহেব বিবাহ পড়ালে তিনি সংশ্লিষ্ট নিকাহ রেজিষ্ট্রারের নিকট বিবাহটি সম্পর্কে প্রতিবেদন দাখিল করবেন অথবা নিকাহ রেজিস্ট্রারের উপস্থিতিতে বিবাহ সম্পন্ন করবেন। নইলে যিনি বিবাহটি পড়ালেন তিনি শাস্তি ভোগ করবেন। এজন্যে আইনে তিন মাস পর্যন্ত পাঁচ হাজার থেকে দশ হাজার টাকা পর্যন্ত বর্ধনযোগ্য জরিমানা বা উভয়বিধ শাস্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পরবর্তী সংখ্যায় এ সংক্রান্ত আরো তথ্য প্রদানের ইচ্ছা রাখি ।
লেখক : আইনজীবী, সুশাসন ও মানবাধিকার কর্মী।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপিতার বক্ষে রেখেছো মোরে
পরবর্তী নিবন্ধদেশ হতে দেশান্তরে