পিতার বক্ষে রেখেছো মোরে

শিউলী নাথ | রবিবার , ২৫ এপ্রিল, ২০২১ at ৬:৩১ পূর্বাহ্ণ

‘সংসারেরই সকল বোঝা, নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে/ সবার মুখে ফোটান হাসি, নিজের দুঃখ ভুলে গিয়ে’।- এ কাজটি যিনি প্রতিনিয়ত করে যান, তিনিই বাবা। সকল বাবারই প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠে ঐ দুটো লাইনে। আমরা এ জগৎ সংসার যে দুজনের হাত ধরে চিনেছি, তারা হলেন বাবা- মা। মায়ের কোলে জন্ম নিয়েছি আর বাবার অস্তিত্ব সমস্ত সত্তায় ধারণ করে আছি। আজ শুধু বাবার কথাই বলবো। আসলে বাবার রাজত্বে সকল সন্তানই তার কাছে ‘রাজকন্যা’ ও ‘রাজপুত্র’। “বাবা”- শব্দটির মাঝে একদিকে লুকিয়ে আছে আমাদের শক্তি, সাহস, নির্ভরতা, নিশ্চয়তা, সঠিক দিক নির্দেশনা। আর অন্যদিকে লুকিয়ে আছে অপ্রকাশিত, গোপন কুঠুরিতে জমানো পৃথিবীর সকল আদর, অপত্য স্নেহ- ভালবাসা। যাকে ধরা যায় না, ছোঁয়া যায়না। বাবার স্নেহ অদৃশ্য! কিন্তু সেই স্নেহের গভীরতা মাপার যন্ত্র পৃথিবীতে আজো আবিষ্কার হয়নি। যে কোনো সমাধানে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মানুষটি হলেন বাবা। বাবা যখন পাশে থাকেন তখন দুঃখ- বিপদ গুলোকে ক্ষুদ্র মনে হয়। তিনি মাথার উপর বটবৃক্ষের ছায়ার মত আগলে থাকেন যেন তীব্র দহনের আঁচ গায়ে না লাগে।ঐ ছায়াটা সরে গেলেই বোঝা যায় তাপের প্রখরতা কতটা প্রকট! সব বাবার কাছে সন্তান আজীবন ছোটটিই রয়ে যায়। সন্তানের ভবিষ্যৎ জীবন সুদৃঢ় করতে সকল বাবাই তৎপর থাকেন। ‘সন্তান যেন নিজের পায়ে নিজে দাঁড়াতে পারে’– এযেন বাবাদের বাঁধাধরা মন্ত্র। সকল বাবার মতো আমার বাবাও চেয়েছিলেন, সন্তান সামাজিক, সাংস্কৃতিক, আদর্শিক ও নীতিবান হবে। তিনি বলতেন, ‘সেবাই বড় ধর্ম’। হয়তো চিকিৎসক হিসেবে পেশাগত কারণেই তা বলতেন। কিন্তু যাকে আজ সেবা করার কথা তিনিই সকল সেবার ঊর্ধ্বে চলে গেলেন। নিজের কর্মক্ষমতা থাকতেই গুটিয়ে নিলেন জগৎ সংসার। আজ খুব ইচ্ছে করে, কিন্তু বাবা বলে ডাকতে পারিনা, জড়িয়ে ধরে গল্প করতে পারিনা, অবসরে গান- কবিতা কিছুই না। পৃথিবীর সব থেকে দুঃখী মনে হয় নিজেকে! বাবা না থাকার কষ্ট তারাই বোঝে, যাদের বাবা নেই। মাঝে মাঝে মনে হয় ইস্‌ একটিবার শুধু একটিবার কাছে পেতাম, জড়িয়ে ধরে বলতাম, বাবা তোমায় আর কষ্ট দেবোনা, শুধু আমাদের ছেড়ে যেওনা!আজ প্রার্থনা করি, আমার মতো বাবাকে হারিয়েছেন যারা, তাদের সকলের বাবাই শান্তিতে থাকুক ওপারে! আর এপারের বাবাদের জন্যও রইল অনেক শ্রদ্ধা, ভালবাসা!

পূর্ববর্তী নিবন্ধকরোনাকাল জীবন জীবিকা
পরবর্তী নিবন্ধনিকাহ রেজিস্ট্রি প্রসঙ্গে