নান্দনিক সৃষ্টিতে নান্দীমুখ

সংস্কৃতি চর্চায় চট্টগ্রাম

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ২৩ ডিসেম্বর, ২০২১ at ১১:১১ পূর্বাহ্ণ

স্বাধীনতা উত্তরকালে বাংলাদেশের শিল্প-সাহিত্য, সংস্কৃতিতে বিরাট এক পরিবর্তন আসে। শিল্পের অন্যান্য শাখার মধ্যে নাটক একটা অগ্রণী ভূমিকা নিয়ে অগ্রসর হতে থাকল। বহু চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে বাংলাদেশের নাটক আজ একটা পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। নান্দীমুখ সেই চর্চার একজন অন্যতম অংশীদার। মানুষের বাঁচার তাগিদে বিদ্রোহের কথা, বিপ্লবের গান, মুক্তিযুদ্ধের কথা, স্বাধীকার আন্দোলনের কথা, মানবিকতার কথা, অসম্প্রদায়িক চেতনার কথা নাটকের মাধ্যমে শিল্পসম্মতভাবে প্রকাশ করতে আগ্রহী। সেই কথা বলার ভাবনা থেকে জন্ম নান্দীমুখের।
১৯৯০ সালের স্বৈরাচার বিরোধী গণআন্দোলনের চূড়ান্ত বিজয়ের প্রাক্কালে একদল উৎসাহী নাট্যকর্মীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নান্দীমুখের আবির্ভাব। নান্দনিক সৃষ্টি এবং নতুন ভাবনায় নিজেদের সৃজনকে তুলে ধরা। একদল স্বপ্নচারী তরুণ নিজেদের আত্মনিয়োগ করেছিল শিল্পের এই শাখায় নতুন ভাবনাকে সঞ্চারিত করবে বলে। সেদিন ছিল আবেগ, উদ্দীপনা, প্রাণ চঞ্চল তারুণ্য ও সৃষ্টির নেশায় একদল সহযাত্রীর পদযাত্রা। সে পদযাত্রা আজও অব্যাহত আছে এটাই আনন্দের। ‘শিল্প সাহিত্য বিপ্লবকে দিক ভাষা, বিপ্লব শিল্প সাহিত্যকে দেবে মুক্তি’ এই স্লোগানকে চূড়ান্ত করে নান্দীমুখ যাত্রা পথের সূচনা করে। ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ নভেম্বর এক ঝাঁক তরুণের কণ্ঠে দৃঢ় প্রত্যয় ও অঙ্গীকার ধারণ করে নিজেদের আত্মপ্রকাশ করল মঞ্চের পাদ প্রদীপের আলোয়।
নান্দীমুখ তার পথ চলার ২৮ বছরে ১৪টি প্রযোজনা মঞ্চে এনেছে এবং সহস্রাধিক মঞ্চায়ন করেছে। নান্দীমুখ নিয়মিতভাবে মঞ্চের পাদপ্রদীপের আলোয় নিজেদের উদ্ভাসিত করেছে এবং বাংলাদেশের নাট্যচর্চায় সক্রিয়ভাবে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছে। নান্দীমুখের প্রযোজনা সমূহ হলো অন ডিউটি, জ্বালা, অলকানন্দার পুত্রকন্যা, সংবাদ কার্টুন, লাল লণ্ঠন, দর্পন স্বাক্ষী, দূর রজনীর স্বপন, ক্রান্তিকাল, অর্ফিয়ুস, বেলা শেষের গল্প, ঊর্ণজাল, খেঁকশিয়াল, তবুও মানুষ, আমার আমি ইত্যাদি। নান্দীমুখের প্রযোজনা দেশে ও বিদেশে সমানভাবে সমাদৃত হয়েছে।
নান্দীমুখ তার পথ চলার ৩১ বছরে বহু আন্তর্জাতিক ও জাতীয় নাট্যোৎসবের আয়োজন করে। আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য লিরিল নান্দীমুখ নাট্যোৎসব ১৯৯৮, গোয়ালিনী নান্দীমুখ নাট্যোৎসব ২০০৪, নান্দীমুখ নাট্যোৎসব ২০১৩, নান্দীমুখ দক্ষিণ এশিয়া নাট্যোৎসব ২০১৪, নান্দীমুখ আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব ২০১৭ এবং নান্দীমুখ আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব ২০১৯। এই সকল নাট্যোৎসবে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, স্পেন, ইরান ও নরওয়ের নাট্যদলসমূহ তাদের প্রশংসিত প্রযোজনাসমূহ মঞ্চস্থ করে। চট্টগ্রাম তথা বাংলাদেশে নিয়মিতভাবে এই ধরনের আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসবের আয়োজন একমাত্র নান্দীমুখই করে।
নান্দীমুখ আয়োজিত জাতীয় নাট্যোৎসবগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ত্রয়ী নাট্য সন্ধ্যা ২০০৫, নান্দীমুখ নাট্যত্রয়ী ২০১৩, নান্দীমুখ নাট্যত্রয়ী ২০১৪, নান্দীমুখ নাট্যত্রয়ী ২০১৫, নান্দীমুখ রঙ্গমেলা ২০১৫ এবং নান্দীমুখ রঙ্গমেলা ২০২১।
নান্দীমুখ দেশ ও দেশের বাইরে বিভিন্ন নাট্যোৎসবে অংশগ্রহণ করে সুনাম অর্জন করেছে। এর মধ্যে ঝিনুক থিয়েটার নাট্যোৎসব (কঙবাজার ১৯৯৪), ১০ম গঙ্গা যমুনা নাট্যোৎসব (কলকাতা ২০০৭), আইটিআই নাট্যোৎসব (ঢাকা ২০০৮), চট্টগ্রাম বিভাগীয় গ্রুপ থিয়েটার উৎসব (চট্টগ্রাম ২০১১), জাতীয় নাট্যোৎসব (ঢাকা ২০১৫), রঙ্গেবঙ্গে বাংলাদেশ নাট্যোৎসব (গোবরডাঙ্গা, ভারত ২০১৬), মাঙ্গলিক নাট্যোৎসব (কলকাতা, ভারত ২০১৬), শরৎ নাট্যোৎসব (করিমপুর, ভারত ২০১৬), রঙ্গপীঠ আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব (শান্তিপুর, ভারত ২০১৬), চাকদহ নাট্যজন আযোজিত শ্রেষ্ঠ নাটকের উৎসব (চাকদহ, ভারত ২০১৯) এবং রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় আমন্ত্রিত নাট্য প্রদর্শন ( কলকতা, ভারত ২০১৯) উল্লেখযোগ্য।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫ম নাট্যোৎসব আজ
পরবর্তী নিবন্ধবিপ্লব উদ্যানের সৌন্দর্যবর্ধন কাজ দ্রুত শেষ করার নির্দেশ