ধুলায় বিবর্ণ সোয়া দুই কিলোমিটার

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ১৩ ডিসেম্বর, ২০২০ at ৪:৫৭ পূর্বাহ্ণ

করোনাকালে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। তবে যুবক খাইরুল ইসলাম ভাইয়ের অটোমোবাইলের দোকানে বসেছেন মুখে রুমাল বেঁধে। এই চিত্র নগরীর স্ট্র্যান্ড রোডের। দোকানের আসবাবপত্র ছাড়াও বিক্রির জন্য রাখা প্রায় সব পণ্যে ধুলোর আস্তর জমেছে।
খাইরুল আজাদীকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই সড়কটির অবস্থা খুবই খারাপ। এখন বাংলাবাজারের দিকে ড্রেনের কাজ চললেও স্ট্র্যান্ড রোডে কোনো ড্রেনের কাজ হচ্ছে না। ব্রিজের কাজও শেষ হয়েছে কয়েক মাস আগে। তারপরও এখানে রাস্তায় এক হাতের বেশি ধুলোর স্তর জমেছে। একটি ট্রাক কিংবা অন্য কোনো গাড়ি গেলেই ধুলোয় পুরো এলাকা ঢেকে যায়। সড়কটির আশেপাশে গাছপালায় ধুলোর আস্তর জমেছে। সকালে খোলার পর দোকানের সব পণ্য পরিষ্কার করা হয়। দুয়েক ঘণ্টা না যেতেই আবার ধুলো জমে। নিশ্বাসও বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। তাই নাকে রুমাল বেঁধে বসতে হয়।
পদ্মা অয়েল কোম্পানির প্রধান কার্যালয়, বিআইডব্লিউটিসির সদরঘাট টার্মিনাল, বন্দরের নতুন লাইটারেজ জেটি, পুরনো কাস্টমস-ভ্যাট-এক্সাইজ অফিস, সদরঘাট নৌ থানা, সদরঘাট মোড় থেকে বাংলাবাজার পর্যন্ত নৌযান থেকে পণ্য খালাসের অনেক জেটি ছাড়াও বেশ কয়েকটি লবণ মিল, কয়েকশ গোডাউন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় থাকায় সদরঘাট থেকে রশিদ বিল্ডিং পর্যন্ত সোয়া দুই কিলোমিটার সড়কটি সব সময় ব্যস্ত থাকে। এ সড়ক দিয়ে রাত-দিন শত শত ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও লরি আসা-যাওয়া করে। কিন্তু বেহাল সড়কটি নিয়ে কারো যেন মাথাব্যথা নেই।
সরেজমিনে দেখা যায়, নগরীর মাদারবাড়ি রশিদ বিল্ডিং মোড় থেকে শুরু করে বাংলাবাজার, স্ট্র্যান্ড রোড, মাঝিরঘাট হয়ে সদরঘাট মোড় পর্যন্ত পুরো সড়কটিতে ধুলোর রাজত্ব। পুরো সড়কটির আশেপাশে হাজারো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দোকানপাটের মালিকেরা বেকায়দায় দিন কাটাচ্ছেন। ধুলায় বিবর্ণ হয়ে গেছে আশেপাশের সবুজ গাছপালাও। প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়কটির রশিদ বিল্ডিং মোড় থেকে মাঝিরঘাট পর্যন্ত অসংখ্য গর্ত একেকটি ফাঁদে পরিণত হয়েছে। কর্ণফুলী ঘাটের রাস্তার মাথা থেকে সদরঘাটের দিকে রাস্তায় মেকাডামের কাজ চলছে।
মাঝিরঘাট এলাকার স্থানীয় ব্যবসায়ী নুরুল আলম বলেন, সড়কটি নিয়ে প্রায় দুই বছর ধরে নানা কাজ চলছে। প্রায় দেড় বছর গেছে তিনটি কালভার্ট নির্মাণে। কয়েক মাস আগে কালভার্টের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। এখন শুরু হয়েছে ড্রেনের কাজ। তবে ড্রেনের কাজ চলছে বাংলাবাজার এলাকায়। মাঝিরঘাটের দিকে কিছু রাস্তা কার্পেটিং করলেও তা নষ্ট হওয়ার পথে। আবার মাঝিরঘাট স্কেলের সামনে নতুন করে বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। রাস্তা ভেদ করে ওয়াসার লাইনের ফুটো দিয়ে ওঠা পানি পুরো রাস্তায় সয়লাব হয়ে গেলেও এসব সমস্যা সমাধানে কারো কোনো দায় নেই।
তিনি বলেন, স্ট্র্যান্ড রোড দিয়ে চলা কষ্টকর। হাঁটলেও শরীরের জামাকাপড় ধুলোয় নষ্ট হয়ে যায়। মাঝেমধ্যে সিটি কর্পোরেশন থেকে পানি ছিটানো হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।
পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ের পরিচালক নূরুল্লাহ নূরী আজাদীকে বলেন, সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসকের সাথে বিভিন্ন সরকারি সংস্থার সমন্বয় বৈঠকে রশিদ বিল্ডিং হতে সদরঘাট সড়কটির সমস্যার কথা তুলেছিলাম। প্রশাসক মহোদয় সড়কটির ধুলোর সমস্যা সমাধানের দিকটি দেখবেন বলেছিলেন। তারা পানি ছিটানোর কাজও শুরু করেছিলেন। এখন সিটি কর্পোরেশন যদি সঠিকভাবে সমস্যাটি না দেখেন তাহলে পরিবেশ দূষণের বিষয়টি আমরা দেখব।
চসিকের প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল সোহেল আহমেদ আজাদীকে বলেন, সড়কটিতে এখন দিনে তিনবার পানি ছিটানো হচ্ছে। তারপরও হচ্ছে না। কারণ এ সড়কে পণ্যবাহী গাড়ির চাপ বেশি থাকে। তাই ভালোভাবে পানি ছিটানো যায় না। আমি নিজেও সড়কটি একাধিকবার ভিজিট করেছি। সড়কটির এক প্রান্ত থেকে ড্রেন নির্মাণসহ নানা কাজ চলছে। কাজগুলো শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছুটা কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে আমাদের। তারপরও আরো বেশি পানি ছিটানোর দিকে জোর দেব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমেয়র পদে আওয়ামী লীগে আলোচনায় ৫ জন
পরবর্তী নিবন্ধখুনের পর লাশ গুম সাড়ে ৪ বছর পর পাওয়া গেল কঙ্কাল