ধর্ষণ : দিন দিন বেড়েই চলেছে এই নৃশংসতা

শর্মিষ্ঠা চৌধুরী | রবিবার , ২১ আগস্ট, ২০২২ at ৪:৫৫ পূর্বাহ্ণ

ধর্ষণ এখন একটা সামাজিক আতঙ্ক। পুরো সমাজ আজ কলুষিত এই আতঙ্কে। আগেও মেয়েরা ধর্ষিত হতো, কিন্তু সেটা ততটা প্রকাশ পেতোনা লোকলজ্জার ভয়ে। এখন মিডিয়ার কল্যাণে কোন কিছুই আর গোপন থাকেনা,একের পর এক সমস্ত ঘটনা চোখের সামনে চলে আসে। তাই এসব নরপিশাচদের মুখোশ উন্মোচন করাও অনেক সহজ। ছোট ছোট শিশুরাও রেহাই পাচ্ছেনা ধর্ষণ নামক জঘন্যতম নির্লজ্জ অপরাধ থেকে। নারী ও শিশুর প্রতি এই সহিংসতা সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। দেখা যায় একটি ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর আরও বেশ কটি একইরকম ঘটনা ঘটতে থাকে, আবার ধর্ষণের পর তার জীবন প্রদীপও নিভিয়ে ফেলা হচ্ছে।
দিন দিন বেড়েই চলেছে এই নৃশংসতা! প্রতিদিন খবরের কাগজ খুললেই ধর্ষণের খবর কোথায় হচ্ছে না এই নৃশংসতা বাসের ভেতর দলবেঁধে ধর্ষণ গৃহবধূ থেকে শুরু করে শ্রমিক, ছাত্রী কেউই বাদ পরছেনা, ধর্ষিত হচ্ছে প্রতিবন্ধী কিশোরী, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস, শাটল ট্রেনও আজ নিরাপদ নয় ছাত্রীদের জন্য, আবার স্টিমারেও ধর্ষণ হয়। মাদ্রাসায় শিক্ষক বা স্কুল কলেজের শিক্ষক দ্বারাও ধর্ষিত হচ্ছে ছাত্রীরা। কিশোরীকে মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ করা হচ্ছে, স্কুল, কলেজে যাওয়া আসার সময় জোর করে ধরে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করা হচ্ছে, বাচ্চাকে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে গৃহবধূ ধর্ষিত হচ্ছে। স্বামীকে বাস থেকে নামিয়ে স্ত্রীকে ধর্ষণ করা হচ্ছে!
চকলেট, আইসক্রিমের লোভ দেখিয়ে, বেড়াতে যাওয়ার নাম করে ধর্ষণ করা হচ্ছে শিশুদের। অবুঝ শিশুরা কি বোঝে এই নৃশংসতার, জীবনের মানেই তো বুঝতে শেখেনি এই ফুটফুটে শিশুরা, তাদের উপর কেন এরকম অমানবিক অত্যাচার! আবার ধর্ষণের কারণ হিসেবে মেয়েদের পোশাককে দায়ী করা হয়, মেয়েরা অশ্লীল পোশাক পরে, তাদের চলাফেরা ভালোনা ইত্যাদি। তাহলে ছোট শিশুরা কেন ধর্ষিত হয়, তারা কি অশ্লীল পোশাক পরে!
এক সমীক্ষায় দেখা যায় শুধুমাত্র জুলাই মাসে কক্সবাজারে ৩০টি ধর্ষণ হয় তার মধ্যে তিনটি গণধর্ষণ। এ থেকেই বোঝা যায় দিন দিন কি ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে এই সামাজিক ব্যাধি। এখন হয়তো অনেকেই সচেতন এরকম জঘন্য অপরাধ সম্পর্কে, ধর্ষণের শিকার নারীরাও বেশ সোচ্চার। কিন্তু তারপরও অধিকাংশ নারী ভিকটিমরা সহজে তাদের প্রতি ঘটে যাওয়া পাশবিক নির্যাতনের কথা স্বীকার করতে চায়না। আমাদের দেশের নারীরা তো বটেই, উন্নত বিশ্বেও অনেক ক্ষেত্রে নারীরা মুখ খুলে না। ফলে অধিকাংশ ধর্ষণের ঘটনা সমাজের অজানা থেকে যায়, কুকর্ম করেও পার পেয়ে যায় ধর্ষকেরা! ধর্ষণ একটি অপরাধমূলক আচরণ, সামাজিক অবক্ষয়।
তাই শৈশব থেকেই পারিবারিক শিক্ষা, স্কুল কলেজে সামাজিক মূল্যবোধ, নৈতিক শিক্ষার বিকাশ ঘটাতে হবে, নারীদের সম্মান ও সমতার দৃষ্টিতে দেখতে হবে, নারীর প্রতি নেতিবাচক ও বিকৃত দৃষ্টিভঙ্গিকে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে সংশোধন করতে হবে। আসলে এখন ধর্ষকের কাছে ধর্ষণ ব্যাপারটা কেমন যেন আনন্দ উৎসবের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই যে বিকৃত মানসিকতা এর প্রধান কারণ হলো এসব অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হচ্ছে না, তাই এদের সাহস বেড়ে যাচ্ছে,তারা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে, এদের সংখ্যা কিন্তু খুবই নগণ্য। সামাজিকভাবে এদের প্রতিরোধ করতে হলে সকল পেশার লোকজনকে এগিয়ে আসতে হবে, সবাইকে সচেতন হতে হবে, সর্বোপরি কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে। এমন শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে যাতে ভবিষ্যতে কেউ কখনো এই ঘৃণ্য অপরাধ করার সাহস না পায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআরণ্যক
পরবর্তী নিবন্ধদেশ হতে দেশান্তরে