দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও অস্থির সামাজিক অবস্থা

ফারজানা আজিম | বৃহস্পতিবার , ১ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ১০:১২ পূর্বাহ্ণ

আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ একসময় বিভিন্ন কারণে বিশ্বজোড়া সুখ্যাতি লাভ করেছিল। কিন্তু সেদিনের সুজলা সুফলা শস্য-শ্যামলায় ভরপুর বাংলাদেশ আজ শ্রীহীন হয়ে পড়েছে। অধিকাংশ মানুষের ভেতরেই অসৎ উপায়ে স্বল্প সময়ে ধনী হওয়ার প্রবণতা বর্তমানে দেখা যাচ্ছে অধিক হারে। অভাব আর দারিদ্র্যের কষাঘাতে আজকের জনজীবন দুঃখ আর হাহাকারে পরিপূর্ণ। মানুষের উপর চেপে বসেছে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির অতিরিক্ত বোঝা যা বহন করা তাদের জন্য সম্পূর্ণ অসম্ভব। জীবন ধারণের উপযোগী প্রতিটি জিনিসই অগ্নিমূল্য। চাল, ডাল, মাছ, মাংস, তেল, তরি তরকারি, ফলমূল, চিনি, লবণ, গম, আটা, রুটি, বিস্কিট, গ্যাস, কারেন্ট ইত্যাদি দ্রব্যের মূল্য আগের তুলনায় কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, ফলে সাধারণ মানুষ বিশেষ করে খেটে খাওয়া মেহনতি মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। অতিরক্ত মুনাফা লোভী ব্যবসায়ীদের জন্যই সাধারণ মানুষকে এসব দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। স্বাধীন দেশে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের এমন অসহনীয় অবস্থা দরিদ্র ব্যক্তির পক্ষে বজ্রাঘাত তুল্য। বিভিন্ন শ্রেণির ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি করেছেন।
বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য তালিকা টাঙ্গানো এবং নির্ধারিত মূল্যে পণ্য বিক্রয় করা হচ্ছে কিনা সেটা পর্যবেক্ষণের জন্য সব বাজারে দ্রব্যমূল্য মনিটরিং কমিটি গঠনের ব্যবস্থা করতে হবে। সরকার ও ব্যবসায়ীদের সদিচ্ছাই পারে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের উর্ধ্বগতি মূল্য রোধ করে দেশে সাধারণ মানুষকে শান্তি ও স্বস্তি দিতে এবং দেশের মানুষকে একটু সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা দিতে। বাংলাদেশ কোভিড ১৯ এর ধাক্কা কাটিয়ে উঠেছিল। প্রায় অনেকে চাকরি হারিয়েছে, কমেছে আয়। গবেষণায় দেখা গেছে করোনা পরবর্তী সময়ে মানুষ দারিদ্র্যসীমারেখার নিচে নেমে এসেছে প্রায় ৪২ শতাংশ। বিপরীতে দেখা গেছে মুষ্টিমেয় পুজিপতিদের আয় বেড়েছে অস্বাভাবিক রকমের। সমাজে তৈরি হয়েছে অর্থনৈতিক বৈষম্য।
ঠিক এমন সময় জিনিসপত্রের দাম আকাশ ছোঁয়া হওয়ায় জীবন আর চলছে না। হাপিত্যিশ উঠেছে খোদ মধ্যবিত্তে। দ্রব্যমূল্য লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি বাংলাদেশে এখন সবচেয়ে বেশি আলোচিত বিষয়। টিসিবিকে ব্যবহার করে দ্রব্যমূল্য কিছুটা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হবে বলে মনে হয়। দেশে আমদানিকে সক্রিয় করে এবং সেই সঙ্গে দেশের কৃষিপণ্য আধুনিক পদ্ধতিতে স্টোরেজ করার সুযোগ সৃষ্টি করার পাশাপাশি সুশৃংখলা বাজার ব্যবস্থার প্রবর্তন করলে দ্রব্যমূল্য কিছুটা স্থিতিশীল রাখার স্থায়ী সমাধান খুঁজে পাওয়া যেতে পারে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকতোটা নিরাপদ আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ
পরবর্তী নিবন্ধমাইজভাণ্ডারী গানের ভুবনে- রীনা মন্দাকিনী