দুরের দুরবিনে

অজয় দাশগুপ্ত | শুক্রবার , ৫ মার্চ, ২০২১ at ৫:২৭ পূর্বাহ্ণ

খুলে যাচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
আশা ও উদ্বেগ থাকছে সাথে
স্কুল কলেজ খুলছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ এবং শিক্ষামন্ত্রীর কথামতো স্বাধীনতার এই মাসেই খুলতে যাচ্ছে সব। বলে রাখি আমি যে দেশে আছি বা সিডনি শহরে ঘোর করোনা কালের কিছুদিন বাদে সবকিছু খোলা রেখেছিল সরকার। বাস্তবতা ভিন্ন দু দেশের। মূলত জনসংখ্যার পার্থক্য আর সমাজ নিয়ন্ত্রণ এখানে বড় বিষয়। উন্নত দেশ অস্ট্রেলিয়ার সাথে বাংলাদেশের তুলনা করা অনুচিত। এখানে স্কুল কলেজ বন্ধ রাখার বিপদ ভিন্ন ধরনের। জব মার্কেট কথাটা আমরা শুনি বা জানি কিন্তু এটাই যে সব তা বুঝতে হলে উন্নত নামে পরিচিত দেশগুলোতে আসতে হবে। অর্থ টাকা পয়সার যোগান এসব দেশের মূল বিষয়। এখানে যৌথ পরিবার বা প্রতিবেশী ধারণাটা একেবারে আলাদা। যৌথ পরিবার বলতে কিছু নাই। আর প্রতিবেশী আছে বটে তার কোন হদিশ জানা যায় না। আমি এমন প্রতিবেশীর সাথেও ছিলাম বা আছি কোনদিন তাদের নামও জানা হয় নি। দেখা হলে হাসি বিনিময় ছাড়া আর কোন কথাও হয় না। এসব সমাজে মা বাবা দুজন কাজ না করলে সচ্ছল ভাবে চলা অসম্ভব। সমস্যা ছিলো দু জন কাজে গেলে বাচ্চাদের দেখভাল করবে কে? চাইল্ড কেয়ার বা শিশু যত্ন নেয়ার প্রতিষ্ঠান বা ইস্কুলগুলো সম্ভবত অল্প ক দিন বন্ধ ছিলো। বাকী গুলো খোলা বন্ধ করতে করতে এখন প্রায় কয়েকমাস ধরে নিয়মিত চলছে।
বাংলাদেশের বাস্তবতায় তা ছিলো অসম্ভব। আমাদের ঘনবসতির দেশে সোশ্যাল ডিসটেন্সিং মানা কঠিন। বাচ্চাদের বেলায় এটা কে আসলে চোখে চোখে রাখতো বা রাখবে? সেই সাথে অভিভাবকদের মানসিক ভীতিও কাজ করেছে। কে পাঠাবে তার সন্তানকে? কে নেবে ঝুঁকি? সব মিলিয়ে এটা বলতেই হবে সরকারের সিদ্ধান্ত ছিলো সঠিক। তবে এই লম্বা দীর্ঘ বন্ধ ও সুখকর না। এমনিতে আমাদের দেশের লেখাপড়ার মান আছে চরম ঝুঁকিতে। সামপ্রতিক সময়ে বিশ্বের যতগুলো জরীপ দেখেছি কোথাও আমাদের অবস্থান সুখকর কিছু না। ক্রমাগত পিছিয়ে পড়ছি আমরা। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এখন আর আগের জায়গায় নাই। সেখানে যতোটা পড়াশোনা তার চেয়ে বেশি পলিটিক্স। নূর ভিপি এখন সংবাদ শিরোনাম হবার জন্য এমন সব কান্ড করে যা না তার জন্য মঙ্গলের না জাতির জন্য। এটা বুঝতে কষ্ট হয় না কারা তার পেছনে। বাংলাদেশে রাজনীতি নাই একথা আমরা বলি বটে আসলে অপ রাজনীতি আছে এবং সমানে চলছে। এইসব অপরাজনীতি ভর করে আছে ছাত্রছাত্রীদের ওপর।
এ কথাও বলা উচিত দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের প্রায় সবটাই আছে তোপের মুখে। আজকাল ডিজিটাল যুগে চাইলেই অনেককিছু আড়াল করা যায় না। বিশেষত বিশ্বায়নের ফলে সবকিছু সুলভ। আপনি ইউ টিউব বা অনলাইনে গেলেই দেখবেন রগরগে দগদগে সত্য মিথ্যায় ভরা প্রচার প্রচারণা । বলাবাহুল্য আওয়ামী লীগ এ ব্যাপারে সবসময় পিছিয়ে। তারা বঙ্গবন্ধুর আমলেও জবাব দিতে সময় পায় নি। এখনো সে গড়িমসি চলছে। ফলে আজকের প্রজন্ম বা আমরাও অনেক বিষয়ে ভীষণ দ্বন্দ্বে ভুগি। কোনটা সত্য বা কোনটা মিথ্যা বোঝা মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়। এই যে লেখাপড়ার জগতটা খোলার ব্যাপার সেটাও এখন তর্কের। একদল বলছিল সরকার নাকি আন্দোলনের ভয়ে ভিত হয়ে খুলতে দিচ্ছে না। এখন তারা ই আবার মোড় ঘুরিয়ে বলছে এটা কি ঠিক হচ্ছে? ঝুঁকি নিচ্ছে না তো জাতি? ঝুঁকি যে কিছুটা থাকবে সেটা নিশ্চিত। কিন্তু যে মহামারী কোভিডের টিকা এসে গেছে। টিকা দেয়া শুরু হয়েছে। এখন তো ধীরে ধীরে বাচ্চাদের স্কুলে কলেজে যেতেই হবে। এটা জানি দীর্ঘ সময়ের অভ্যাস আর রুটিনে গোড়ার দিকে সমস্যা হবে। ছেলেমেয়েরা অনলাইনের পর এখানে এসে নিজেদের মানিয়ে নিতে সময় লাগবে। একইভাবে টিচারদের বেলায়ও আমরা এইসব কারণ কাজ করতে দেখবো। কিন্তু বসে বসে আর কতোদিন?
কর্মপ্রবাহের নিয়মই হচ্ছে যখন তা শুরু হয়ে যায় সে নিজেই ভাসিয়ে নেয়। দেশের মানুষদের এটাও জানা উচিত করোনা চলে যেতে আসে নি। এটা জানার পর দুনিয়ার সবদেশ তাদের সাধ্য মতো ব্যবস্থা নিয়েছে। যারা নেয় নি তাদের সামনে এখন অনেক উদাহরণ। তারা আসলেই নানা দেশ থেকে অভিজ্ঞতা নিতে পারেন। মনে রাখা দরকার বাংলাদেশের কোবিড পরিস্থিতি বহু দেশের বিশেষত ধনী দেশের চাইতে ভালো। ভালো ভাবে তা দমিয়ে রাখা বা নিয়ন্ত্রণ করা গেছে। কারণ এটা আমরা সবাই জানি জনবহুল ঘনবসতির সমাজ তার ওপর লেখাপড়া না জানা মানুষ ছিলো অপপ্রচার। এসব বাধা পেরিয়ে দেশ মোটামুটি নিয়ন্ত্রণ করেছে করোনা। তাই আমার ধারণা স্কুল কলেজ খোলা যেমন একদিকে ঝুঁকির আরেকদিকে তার বিকল্প নাই। বাংলাদেশের এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা প্রমাণ করবে আমরা কতোটা সাবধানী হয়ে উঠেছি।
শিশু কিশোর তরুণ তরুণীদের মনোজগতেও এসেছে পরিবর্তন । বড়দের মতো তারাও ভয় পেয়েছে। তারাও জানে এই মহামারী কতোটা সাংঘাতিক। তাদের ভেতর সাবধানতার এই বীজ যেন বড় হয়ে ওঠে। যারা তাদের অভিভাবক বা টিচার বা কর্তা সবার উচিত এই বিষয়ে খোলামেলা কথা বলা। সবসময় তাদের মনোভাবের দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখা। করোনা কালে বাড়ি ঘরে থাকা কোমলমতি এরা বেশির ভাগ সময় কাটিয়েছে মোবাইল কম্পিউটার বা ডিজিটাল মিডিয়ায়। এদের বাস্তব জগতে ফিরিয়ে আনার বিষয়টি সহজ হবে না। এসব যন্ত্র নির্ভরতা কাটিয়ে তাদের বিদ্যালয় মুখি করাটা চ্যালেঞ্জ।
একটা বিষয় মাথায় রাখা উচিত যাতে বড় কোন মাশুল দিতে না হয়। আমাও দের হুজুগে সমাজ তাহলে এর সুযোগে সরকার ও সমাজের বারোটা বাজাতে ছাড়বে না। বাচ্চাদের নিরাপত্তা মা বাবার কাছে যেমন তেমনি দেশ জাতির কাছেও বড় বিষয়। সেটা যেন তোপের মুখে না পযে। দুঃখ এই সদিচ্ছা থাকলেও পরিকল্পনা থাকে না। আর পরিকল্পনা থাকলেও তার কোন বাস্তবায়ন হয় না। এতোদিন পর মাসের পর মাস বন্ধের পর স্কুল কলেজ খুলবে কোথায় আনন্দের বন্যা বয়ে যাবে তা না হয়ে এখন প্রশ্ন পাহাড়ের মতো মাথা তুলছে। আশাকরি আবার কলকাকলি মুখর হবে সবকিছু। সরকার ও কর্তাব্যক্তিরা এমন কোন কিছু করবেন না যাতে ভবিষ্যত হয়ে ওঠা নিদারুণ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজুম্‌’আর খুতবা
পরবর্তী নিবন্ধমীরসরাইয়ে বাকখোলা গিরিধারী ধামে উৎসব