দু’টি কবিতা

কমলেশ দাশগুপ্ত | শুক্রবার , ২২ জানুয়ারি, ২০২১ at ৫:৪৭ পূর্বাহ্ণ

ষোড়শীকুঞ্জ-১
মহিম দাশ রোডের মুখে
চাঁপা, শিউলি আর নারকেল পাতার ছায়াঘেরা
সেই পুরনো পাড়াটির ছবি।
আকাশে গোঁৎ মারা ঘুড়ির মতো কতো পুরনো জল উঠে আসে
একটি কো-অপারেটিভ ব্যাংক ও ক’জন আইনজীবী
পাড়ার ছেলেপুলে, মুহুরী, পঙ্গপাল;
রাত্রিদিন কতো মামলাবাজ উধোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে
কতো বুধোর মুখ হয়েছে চুন, কত মামলার কতো ঝাল!
বাঁদিকে বিনোদবাবুর দরমার বৈঠকখানা
তাকে সারি সারি আইন বইগুলো একে অপরকে জড়িয়ে থাকা
এখনো মনে পড়ে! এখনো সেই সব শরীরের গন্ধ পাই;
পাই কোন এক মামলার পরাজয়ের অশ্রুজল বা জয়ের ঘ্রাণ;
মনে পড়ে রাত দশটায় এ পাড়ার হাওয়ায় বেহালা ও ছড়ির যৌথ ভ্রমণ;
বুঝিনি রাগ ললিত না কেদার, অনবদ্য দ্রুত চলন;
কোনদিন সেতারেও চলে অবাধ সুরসঙ্গম, মুগ্ধ ক্ষণ।
মনে পড়ে ঐ সব বন্ধুর কথা
যারা শিখিয়েছিল প্রথম যৌবন কাকে বলে? কী তার স্বাদ;
সে এক উন্মাদ আবেগের সময় ও সংবাদ;
ষোড়শীর ভরা জোয়ার এই পাড়া জুড়ে,
তখন চলেছি গুপ্তচরের বেশে
শুধু বাদাম তক্তি ও লাল সূর্যের মতো একটি
কাঠি লজেঞ্চের লোভে করেছি চিঠির চালান,
কত চিঠি চলে গেছে ভুল বাকসে;
কার চিঠি লিখেছে কে একি অদ্ভুত নামে!
প্রিয় টয়োটা বা তোমার একান্ত হেলিকপ্টার;
অথবা সমীপে ‘তিন চাক্কা’ লেখা খামে।
বড়ো অদ্ভুত কৈশোর!
সে একটি জীবন থাকেনি তো থেমে,
এক মুহূর্তও কোনদিন কোনছলে; প্রতিক্ষণ
কিশোর করেছে পর্যটন স্বপ্নের কিশোরীর দিকে;
তার মন ও শরীর জুড়ে কতো গোপন গভীর স্পন্দন
এই ষোড়শীকুঞ্জের অন্ধ অতলে আজও ঘোরে।

এই একটি স্বপ্নের ভেতরে দেখি;
কতো শুকনো রেশমের জালে জড়িয়ে আছে অনাঘ্রাত
গুটিপোকা; বাদামী শুষ্ক মৃত শরীর! মৃত এক ফ্যাকাশে খাতা
স্থির দু’চোখ যেন ধরে আছে এক দীর্ঘ অপেক্ষা।

ষোড়শীকুঞ্জ-২

এখনও মনে হয় সাত সকালে শীতের আলোয় লাল, নীল, বাদামী
ছোট বড়ো সোয়েটার যাচ্ছে মর্নিং ইশকুলে!
আটটা ও দশটার সময় বেঁধে আরো একদল যায়
তিনজন ব্যবহারজীবীর পেছন পেছন! একদম শেষে তিনজন মুহুরী
যায় তোষামোদীর মতন।
আজ এইসব পুকুরের জলে ছায়ার মতো দেখি।
চৌধুরীস (পিটম্যান) সর্টহ্যান্ড ইনস্টিটিউট, কমার্শিয়াল একাডেমি
বিকেল বেলায় ছোট্ট মাঠে ছোট জীবনের ফুলের উদ্যান;
ঘরে ঘরে হারমোনিয়াম, বেজে ওঠে প্রাথমিক কিম্বা অভ্যস্ত হাতে
আমরা ক’জন সাতচারা ও টেনিস্‌্‌ বলের দুরন্ত হাবেভাবে
প্রতিদিন উদ্দাম তারুণ্যের বিউগল বাজাতে বাজাতে
কোথায় কার গোয়ালে দিলাম ধোঁয়া।
কার যেন নিঃশ্বাস প্রশ্বাসে হলো ক্ষতি
চলে অজস্র তুমুল মা-বাপ তোলা খিস্তি
করিনি একটুও পরোয়া
ওইসব জীবনের স্বাদ, গন্ধ, ঘ্রাণ আজও প্রতিদিন গায়ে মাখি
কোঁচকানো চামড়ায়;
এইসব সুন্দর কৌটো ও ক্রীম বাতিলযোগ্য নয়;
অচেনা এক ফেরিওয়ালা বার বার বলে যায়!

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅপেক্ষা
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষা ও কিছুকথা