দুই বন্ধুর ‘চাকরি’ যে কারণে নেই হয়ে গেল

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৫:২১ পূর্বাহ্ণ

চাকরির নিয়োগপত্র হাতে পেয়ে যোগ দিতে এসেছিলেন নতুন কর্মস্থলে। কিন্তু কর্মস্থলে এসে জানতে পারলেন তারা প্রতারণার শিকার। চাকরি দেওয়ার কথা বলে তাদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি চক্র। প্রতারণার শিকার দুই বন্ধু গতকাল সকালে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে কাজে যোগ দিতে এলে এ ঘটনা জানাজানি হয়। এ নিয়ে শিক্ষাবোর্ডে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। পাঁচলাইশ থানা পুলিশ এসে ভুক্তভোগী দুই শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরে আব্দুর রাজ্জাক, রুহুল আমিন ও তানজীব নামে তিন প্রতারককে আসামি করে এ ঘটনায় খুলশী থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থীর বাবা বাহার উদ্দিন বাদী হয়ে এ মামলা (নং-১১) করেছেন। মামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহীনুজ্জামান। তবে প্রতারকদের নাম ও মোবাইল নম্বর ছাড়া ভুক্তভোগীরা বিস্তারিত কিছু জানাতে পারেননি।
পুলিশ ও শিক্ষাবোর্ড সূত্রে জানা গেছে, সকাল ৯টার দিকে মেহেদী হাসান বাবু ও রবি দাশ নামের দুই বন্ধু শিক্ষা বোর্ডে আসেন। তাদের একজনের বাড়ি কুমিল্লার লাকসাম এলাকায়। অন্যজনের চন্দনাইশ উপজেলার মুহাম্মদপুরে। উচ্চ মাধ্যমিকে আশানুরূপ ফলাফল করতে না পারায় বেশ কিছু দিন ধরে তারা চাকরি খুঁজছিলেন। জুলাইয়ের শেষ দিকে আমবাগান এলাকায় চাকরির বিষয়ে নিজেদের মাঝে আলাপকালে আব্দুর রাজ্জাক নামের এক ব্যক্তি দুই বন্ধুর সামনে এসে দাঁড়ান। এ সময় তাদের চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
তবে দুই বন্ধু বুঝতে পারেননি তারা জালিয়াত চক্রের খপ্পরে পড়ছেন। বিশ্বাস করে দুই বন্ধু প্রথমে ২ হাজার টাকা করে ৪ হাজার এবং দ্বিতীয় দফায় ৫ হাজার টাকা করে ১০ হাজার টাকা রাজ্জাকের হাতে তুলে দেন। পরে তারা শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান প্রদীপ চক্রবর্তীর স্বাক্ষর করা নিয়োগপত্র হাতে পান। একজনকে অফিস সহকারী এবং অন্যজনকে অফিস কো-অর্ডিনেটর পদে নিয়োগ দিয়ে এ নিয়োগপত্র দেওয়া হয়। দুজনের নিয়োগ ৫ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকরের কথা উল্লেখ করা হয় নিয়োগপত্রে।
তবে নির্ধারিত তারিখে শিক্ষামন্ত্রীর সাথে শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যানের ভার্চুয়াল মিটিংয়ের কারণে তাদের যোগদান ক্যানসেল করা হয়েছে বলে জানায় জালিয়াত চক্র। চলতি মাসের শুরু থেকে নিয়মিত শিক্ষাবোর্ডে যাওয়া-আসা শুরু করেন দুই ভুক্তভোগী। এর ধারাবাহিকতায় গতকাল সকালেও তারা আসেন। বোর্ডে আসার উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে দায়িত্বরত আনসার সদস্যদের তারা বিষয়টি খুলে বলেন। পরে আনসার সদস্যরা বোর্ডের কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবহিত করেন। ঘটনা জেনে প্রথমে দুজনকে উপ-সচিবের কক্ষে বসিয়ে রাখা হয়। পরে পাঁচলাইশ থানা পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। খবর পেয়ে থানার এসআই এনামুল শিক্ষাবোর্ডে আসেন। এসময় ভুক্তভোগী দুই শিক্ষার্থীকে বোর্ড চেয়ারম্যানের কক্ষে নিয়ে তাদের কাছে বিস্তারিত জানতে চাওয়া হয়। প্রতারক আব্দুর রাজ্জাক, তার সহকারী রুহুল আমিন এবং তানজিম আহমেদ চৌধুরী তাদের সাথে এ বিষয়ে যোগাযোগ করে বলে জানান ভুক্তভোগী দুই শিক্ষার্থী। দুজনে মোট ১৪ হাজার টাকা তাদেরকে দেন। পরে দুজনকে পাঁচলাইশ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
প্রতারণার ঘটনাস্থল আমবাগান খুলশী থানার অধীন হওয়ায় ভুক্তভোগীদের খুলশী থানায় মামলা দায়েরের পরামর্শ দেওয়া হয় বলে জানান পাঁচলাইশ থানার এসআই এনামুল। এর প্রেক্ষিতে ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থীর বাবা বাদী হয়ে খুলশী থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
শিক্ষাবোর্ডের সচিব প্রফেসর আব্দুল আলীম বলেন, শিক্ষাবোর্ড থেকে নিয়োগ সংক্রান্ত কোনো বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়নি। কোনো পরীক্ষাও হয়নি। যে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে সেটি সঠিক নয়। স্বাক্ষর জালিয়াতি করে এ নিয়োগপত্র ইস্যু করা হয়েছে। এটি কোনো জালিয়াত চক্রের কাজ। ভুক্তভোগীরা মামলা করেছে। এ নিয়ে আইনশৃক্সখলা বাহিনী আইনগত পদক্ষেপ নেবে। তবে এ ধরনের প্রতারক চক্রের কার্যক্রমের বিষয়ে সকলকে সচেতন হতে হবে। শিক্ষাবোর্ডের পক্ষ থেকেও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সিদ্ধান্ত রয়েছে।
উল্লেখ্য, স্বাক্ষর জালিয়াতি থেকে শুরু করে ফলাফল জালিয়াতি, ছাড়পত্র জালিয়াতি, ইয়াবার কারবার, এমনকি হাই কোর্টের রিট জালিয়াতির ঘটনাও ঘটেছে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে। সামপ্রতিক সময়ে শিক্ষাবোর্ড ঘিরে জালিয়াত চক্র ফের সক্রিয় উঠেছে বলে মনে করছেন বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধতালেবান সরকারকে এখনই স্বীকৃতি দিচ্ছে না বাংলাদেশ