দারিদ্র্য বিমোচনে ইসলামের ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনৈতিক বিধান যাকাত

আ ব ম খোরশিদ আলম খান | বুধবার , ১৯ এপ্রিল, ২০২৩ at ৫:০৪ পূর্বাহ্ণ

ইসলামের অন্যতম মূল স্তম্ভ যাকাত। নামাজ রোজার মতোই যাকাতও ইসলামের ফরজ বিধান। নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে সামর্থ্যবান সচ্ছল মুসলমানদের ওপর যাকাত দেয়া ফরজ। ধনী দরিদ্রের ভেদাভেদ ও বৈষম্য দূর করতে ইসলামের অর্থনৈতিক ভারসাম্যপূর্ণ বিধানই হলো যাকাত। যাকাতের অর্থই হলো পবিত্রতা বা বৃদ্ধি, প্রবৃদ্ধি। দারিদ্র্য জিইয়ে রাখতে নয় বরং দারিদ্র্যকে স্থায়ীভাবে রুখে দিতেই আল্লাহপাক যাকাতের বিধান দিয়েছেন। আল্লাহ পাক কোরআন মজিদে বহু স্থানে নামাজের মতোই বারবার যাকাতের কথা উল্লেখ করেছেন। মহান প্রভু প্রতিপালক রাব্বুল আলামিন বলছেন, ‘তোমরা সালাত আদায় করো এবং যাকাত প্রদান করো। তোমরা যে উত্তম কাজ নিজেদের জন্য অগ্রে প্রেরণ করবে তা আল্লাহর কাছে পাবে। নিশ্চয়ই তোমরা যা করো আল্লাহ তা দেখছেন।’ (সূরা বাকারা, ১১০)। যাকাত না দিলে পরকালে ভয়াবহ শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। দুনিয়াতেও সম্পদহানি রোগ শোকসহ নানা বিপদাপদ আসে যাকাত না দেয়ার কারণে। যাকাত না দেয়ার শাস্তি প্রসঙ্গে কুরআন মজিদে ইরশাদ হচ্ছে সেদিন জাহান্নামের আগুনে তা (যাকাতের সম্পদ) উত্তপ্ত করা হবে আর এটি দিয়ে তাদের ললাট, পার্শ্বদেশ ও পৃষ্ঠদেশে দাগ দেয়া হবে। সেদিন বলা হবে এটিই তা যা তোমরা নিজেদের জন্য পুঞ্জীভূত করতে। সুতরাং তোমরা যা পুঞ্জীভূত করেছিলে তার স্বাদ আস্বাদন করো।’ (সূরা তাওবাহ, ৩৫)। পাঁচ প্রকারের সম্পদের যাকাত দেয়া ফরজ। ১. নগদ টাকা, . সোনা রুপা, . বিচরণশীল উট গরু ছাগল ইত্যাদি গৃহপালিত পশু, . ব্যবসায় বা বিক্রয়ের উদ্দেশে রক্ষিত দ্রব্য ৫. কৃষি উৎপাদিত ফল ও ফসল। যাকাত যাদেরকে দেয়া যাবে বা যাকাত বণ্টনের খাত সম্পর্কে কোরআন মজিদে সূরা তাওবাহ্‌্‌র ৬০ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-‘যাকাত তো কেবল নিঃস্ব, অভাবগ্রস্ত ও যাকাতের কাজে নিযুক্ত ব্যক্তিদের জন্য, যাদের মনোরঞ্জন উদ্দেশ্য তাদের জন্য, দাসমুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে জিহাদকারী ও মুসাফিরের জন্য। এটাই আল্লাহর বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।’

মূলত যাকাতের বিধান দেওয়া হয়েছে দরিদ্র গরিবদের ভাগ্য বদলে দেওয়ার জন্য। দারিদ্র্য বিমোচন ও অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীভূত করতেই ধনীদের ওপর যাকাতের মতো ফরজ বিধান দিয়েছেন আল্লাহপাক। একটি বছর নিসাব বা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা বা সম্পদ নিজের কাছে গচ্ছিত থাকলে যাকাত দিতে হবে। শতকরা আড়াই টাকা, হাজারে পঁচিশ টাকা বা প্রতি লক্ষ টাকার বিপরীতে আড়াই হাজার টাকা যাকাত দেয়া ফরজ। সাবালাক সজ্ঞান মুসলমান নিসাব পরিমাণ (অর্থাৎ সাড়ে সাত তোলা বা ৮৭ গ্রাম কিংবা তার সমপরিমাণ সম্পদের টাকা অথবা ঐ পরিমাণ টাকার ব্যবসায়িক মাল) সম্পদের মালিক হওয়ার পর চান্দ্র মাস হিসেবে এক বছর অতিবাহিত হলে তার ওপর যাকাত আদায় করা ফরজ বা অবশ্য কর্তব্য। তবে তা তার মৌলিক চাহিদা তথা জীবন অতিবাহিত করার প্রয়োজনীয় বিষয়াবলি অতিরিক্ত হতে হবে। সম্পদে চল্লিশ ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ ২.% হারে যাকাত হিসেবে নির্দিষ্ট শ্রেণির ব্যক্তিবর্গের মধ্যে বণ্টন করা ফরজ। এক হিসেবে দেখা যায়, ধনী সচ্ছল মুসলমানরা সঠিক নিয়মে হিসেব করে যাকাত দিলে বছরে প্রায় ৬০/৭০ হাজার কোটি টাকা যাকাত খাত থেকে সংগৃহীত হবে। ধনীরা সঠিক নিয়মে পরিকল্পিতভাবে যাকাত দিলে এক দশকেই দেশ থেকে দারিদ্র্য দূর করা সম্ভব। বিক্ষিপ্তভাবে ১০০/৫০০/১০০০ টাকা করে নয়, বরং মোটা অংকের টাকা দিয়ে যাকাতের টাকায় গরিব মানুষের ভাগ্য বদলে দিতে হবে। যাতে এ বছর যাকাত গ্রহীতা পরের বছর আর যাকাত নিতে না আসে। তবে যাকাত সংগ্রহ ও বিতরণে রাষ্ট্রীয়ভাবে উদ্যোগ নেয়া হলে দ্রুত এর সুফল মিলবে বলে আশা করা যায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধইবাদত বন্দেগিতে পবিত্র লাইলাতুল কদর পালিত
পরবর্তী নিবন্ধদ্বিতীয় দিনেও কয়েকটি ট্রেনে বিলম্ব, দুর্ভোগ