দর্শকরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে বিপিএলের চট্টগ্রাম পর্ব থেকেও

ক্রীড়া প্রতিবেদক | শুক্রবার , ২০ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৬:২৭ পূর্বাহ্ণ

এবারের বিপিএল নিয়ে সমালোচনার যেন শেষ নেই। এবারের বিপিএলে যেন নেই আর নেই। ভাল মানের বিদেশী ক্রিকেটার নেই, ডিআরএস নেই, আম্পায়ারদের সঠিক সিদ্ধান্ত নেই, ক্রিকেটারদের শৃংখলা মানার বালাই নেই। সে সাথে নেই ক্রিকেটের প্রাণ দর্শক। ঢাকার প্রথম পর্বে দু একটি ম্যাচে দর্শক দেখা গিয়েছিল। আশা করা হয়েছিল চট্টগ্রামে দর্শকরা অন্তত বরন করবে বিপিএলকে। অবশ্য গত ১৩ জানুয়ারি ঠিকই দর্শকরা বরন করেছিল বিপিএলকে সাদরে। প্রথম দিনেই দর্শকরা জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের গ্যালারী ভর্তি করে রেখেছিল। উইকেটে রান ছিল, গ্যালারীতে দর্শক ছিল। তাই শুরুতেই বিপিএলের চট্টগ্রাম পর্ব নিয়ে যেন আশায় বুক বেধেছিল আয়োজকরা। যাক কিছুটা হলেও তৃপ্তির ঢেকুর তোলা যাবে বিপিএলের চট্টগ্রাম পর্ব নিয়ে। কিন্তু সে আশা গুঁড়েবালি। প্রথম দিনের পর থেকে চট্টগ্রামের জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের গ্যালারী খাঁ খাঁ করছে। দর্শকরা আর আসেনি স্টেডিয়ামে।

গত মাসে ভারতের বিপক্ষে একটি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছিল বাংলাদেশ এই জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। সে ম্যাচের জন্য রীতিমত যুদ্ধ হয়েছে। এম এ আজিজ স্টেডিয়াম এবং সাগরিকাস্থ বিটাক মোড়ে স্থাপিত টিকেট কাউন্টারে মারামারি হয়েছে একাধিকবার। একটা টিকেট যেন সোনার হরিণ। অথচ সে ম্যাচটি যখন খেলতে এসেছিল দু’দল এই চট্টগ্রামে তখন বাংলাদেশ সিরিজ জিতে নিয়েছিল। আর সে ম্যাচকে ঘিরে ছিল দারুণ উত্তাপ। কিন্তু দেশের সবচাইতে বড় ফ্রাঞ্জাইজি লিগ বিপিএলের মত আসরে দর্শক নেই চট্টগ্রামেও। সেই ১৩ জানুয়ারির পর দুটি টিকেট বুথে নেই কোন মানুষ। নেই টিকেটের জন্য হাহাকার। টিকেট বিক্রেতারা যেন অলস সময় পার করছে। সেই প্রথম দিনের পর মাঝে বড়জোর দুই থেকে তিন হাজার দর্শক হয়েছে। কোন কোন ম্যাচেতো তারও কম দর্শক হয়েছে। এখন জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের গ্যালারী দেখে বুঝার কোন উপায় নেই যে টেস্ট ক্রিকেট নাকি টিটোয়েন্টি ক্রিকেট চলছে। অবশ্য রঙিন জার্সি দেখে হয়তো বলা যাবে এটা অন্তত টেস্ট ক্রিকেট নয়। কিন্তু টিটোয়েন্টি ক্রিকেটের সাথে গ্যালারীর যেন মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

কেন এমন হলো? কেন এভাবে দর্শকরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে বিপিএল থেকে। যদিও নানাজন নানা কথা বলছে। তবে বেশিরভাগই বলছেন এবারের বিপিএল নিয়ে এতবেশি নেতিবাচক প্রচারণা হচ্ছে যে দর্শকরা যেন আর বিপিএলে দেখার আগ্রহ পাচ্ছে না। বিশেষ করে মাঠে এবং মাঠের বাইরে বিপিএল যেন দর্শকদের আস্থা অর্জন করতে পারছে না। খোদ ক্রিকেটারদেরও যেন আস্থা নেই বিপিএলের উপর। তাইতো ক্রিকেটাররা সবচাইতে বেশি সরব বিপিএলের সমালোচনায়। বর্তমান বিশ্বে ক্রিকেট মাঠে প্রযুক্তির ব্যবহারটা খুব বেশি হচ্ছে। তার একমাত্র কারণ হচ্ছে আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত যেন নিখুঁত হয়। সারা বিশ্বে ডিআরএস নামক প্রযুক্তিটি ব্যবহার করা হলেও বিপিএলে নেই সেই প্রযুক্তি। ফলে দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তের কারনে ফিরে আসছেন ব্যর্থ হয়ে। যা দর্শকদের বিমুখ করছে মাঠ থেকে। হয়তো বেশিরভাগ দর্শকই সেই ক্রিকেটারটির খেলা দেখতে মাঠে গিয়েছিল। তাছাড়া ভাল মানের কোন বিদেশী ক্রিকেটারতো নেই এবারের বিপিএলে।

একই সময়ে চলছে অস্ট্রেলিয়ান ফ্রাঞ্জাইজি লিগ বিগ ব্যাশ, দক্ষিণ আফ্রিকান লিগ এবং দুবাইতে ইন্টারন্যাশনাল লিগ। বিশ্বের সেরা সব ক্রিকেটরাররা সেখানে খেলছে। আর বিপিএলে খেলছে পাকিস্তানের কিছু ক্রিকেটার। হাতেগোনা কয়েকজন উচুঁ মানের ক্রিকেটার যারা এসেছিল শুরুতে তারা চলে গেছেন কয়েকটি ম্যাচ খেলে। তাই বলা যায় একেবারে বিবর্ণ এবং তারকাশূন্য বিপিএল। আর এমন বিপিএল কেনইবা দেখবেন দর্শকরা। সাকিবমাশরাফিদের মত ক্রিকেটাররা যখন বলেন বিপিএল এর চাইতে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ অনেক ভাল। তখন কেন দর্শকরা সে বিপিএল দেখতে আসবে। গতকালও জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সর্বসাকূল্যে হাজার তিনেক দর্শক এসেছিল। তাদের বেশিরভাগই আবার এসেছে বিনা পয়সায় পাওয়া টিকেটে। কোন দল কিংবা কোন কর্মকর্তা বা বন্ধু, নিকটজনের কাছ থেকে পাওয়া টিকেট নিয়েই বেশিরভাগ দর্শক এসেছিল মাঠে খেলা দেখতে। পকেটের পয়সায় টিকেট কিনে খেলা দেখতে আসা দর্শকের সংখ্যা ছিল একেবারেই নগণ্য। দেখতে দেখতে বিপিএলের চট্টগ্রাম পর্ব শেষ হতে চলল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআজ পর্দা নামছে বিপিএল চট্টগ্রাম পর্বের
পরবর্তী নিবন্ধটানা তৃতীয় জয়ে দারুণভাবে ফিরল কুমিল্লা