দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনা টিকা পাবেন অভিবাসীরাও

উদ্বিগ্ন ইন্স্যুরেন্স না থাকা বাংলাদেশীরা

অসীম বিকাশ বড়ুয়া, সিউল (দক্ষিণ কোরিয়া) থেকে | সোমবার , ২৫ জানুয়ারি, ২০২১ at ১১:৩২ অপরাহ্ণ

পৃথিবীতে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী প্রথম সারির দেশগুলোর একটি এবং এশিয়ার ড্রাগন বলে খ্যাত অন্যতম উন্নত দেশ দক্ষিণ কোরিয়ায় কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন প্রদান শুরু হলে কোরীয়দের পাশাপাশি সকল অভিবাসীকেও বিনামূল্যে টিকা প্রদান করার ঘোষণা দিয়েছে দেশটির সরকার।
কোরিয়াতে এখনো টিকা প্রদান কার্যক্রম শুরু না হলেও গত ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে দেশটিতে অবস্থানরত মার্কিন সেনা বাহিনীর সদস্যরাই প্রথম টিকার ডোজ গ্রহণ করেছেন।
সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী আশা করা হচ্ছে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে টিকা দেওয়া কার্যক্রম শুরু হবে দক্ষিণ কোরিয়ায়।
সম্প্রতি কোরিয়া ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন এজেন্সি (কেডিসিএ)-এর প্রধান জং উইন কিয়ন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী চুং সি কিয়ন-এর সঙ্গে কোভিড-১৯ টিকাদান সংক্রান্ত প্রথম সরকারি বৈঠকে বলেছেন, করোনার টিকা দান শুরু হলে কোরিয়ার নাগরিক সহ সকল বিদেশীকে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে।
এদিকে গত ১৮ জানুয়ারি সোমবার সংবাদ সম্মেলনে দেশটির রাষ্ট্রপতি মুনজে-ইন বলেন, “কোভিড মোকাবেলায় অন্যান্য দেশের তুলনায় দক্ষিণ কোরিয়া অনেক এগিয়ে রয়েছে এবং দেশটি স্বাস্থ্য সর্ম্পর্কিত সকল সংকট কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে বিশ্বের সকল দেশকে নেতৃত্ব দেবে। ভবিষ্যতে দৈনন্দিন জীবনযাপন ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে ফিরে আসার ক্ষেত্রে প্রথম সারির দেশে পরিণত হবে দক্ষিণ কোরিয়া।”
জানা যায়, মোট চারটি কোম্পানি থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার ৫ কোটি ৬০ লাখ নাগরিক এবং সকল অভিবাসীর জন্য টিকা আসবে ধাপে ধাপে। প্রথম এস্ট্রাজেনেকা, দ্বিতীয় রাউন্ডে জনসন ও মর্ডানা এবং তৃতীয় রাউন্ডে আসবে বায়োএনটেক-এর টিকা।
দক্ষিণ কোরিয়া সরকার টিকাদান কার্যক্রমকে সুচারুরুপে সফল করার জন্য প্রাথমিকভাবে আড়াইশটি টিকাদান কেন্দ্র তৈরি করার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। প্রত্যেক নগরীতে একটি করে কেন্দ্র এবং যে সমস্ত নগরীতে পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ বসবাস করে সেগুলোতে আরও বেশি কেন্দ্র করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা পার্ক জং বলেন, “সরকার আগামী সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে শতকরা ৭০ ভাগ মানুষকে টিকা দেয়ার লক্ষ্যে টিকাদান কার্যক্রমকে সফল করার জন্য ১০ হাজার স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরি করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে যা এক সপ্তাহ পরে সরকার কর্তৃক ঘোষিত হবে।”
এদিকে দেশটির সরকার কোরিয়াতে অবস্থানরত বাংলাদেশীসহ সকল বিদেশী শিক্ষার্থীকে আগামী মার্চ মাস থেকে বাধ্যতামূলক স্বাস্থ্য বীমায় অন্তর্ভুক্ত করার ঘোষণা দিলেও অবৈধ বিদেশীদের এই টিকা দেওয়া হবে কি না এ বিষয়ে দেশটির জাতীয় দৈনিক কোরিয়া হেরাল্ড-এর এক প্রশ্নের জবাবে স্পষ্ট কোনো উত্তর দেয়নি সরকার।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশী অভিবাসী যাদের ভিসা থাকলেও বোহম বা ইন্স্যুরেন্স কার্ড নেই এবং অবৈধ বসবাসকারী প্রায় তিন থেকে চার সহস্রাধিক বাংলাদেশীর মধ্যে দুশ্চিন্তা ও উৎকন্ঠা দেখা দিয়েছে। এ ধরনের সমস্যায় থাকা অনেক প্রবাসী বাংলাদেশীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে তারা আতংকের মধ্যে কোরিয়াতে বাস করছে। বোহম বা ইন্স্যুরেন্স কার্ড না থাকা মো. কিবরিয়া ও টিপু সুলতান জানান, ইন্স্যুরেন্স না থাকাতে করোনা চিকিৎসায় অনেক বেশি খরচ হবে যা আমাদের সাধ্যের বাইরে। তাই আমরা করোনা সংক্রমণের ভয়ে দিন কাটাচ্ছি।
এ বিষয়ে রাজধানী সিউলের গিম্পু সিটির ফরেন রেসিডেন্টস এন্ড মাল্টিকালচারাল ফেমিলি এফেয়ারস-এর প্রধান উপদেষ্টা মো. তাজুল ইসলাম টনি বলেন, “যাদের ভিসা আছে কিন্তু ইন্স্যুরেন্স নেই তারা স্ব স্ব এলাকার ফরেন রেসিডেন্টস সাপোর্ট সেন্টারে গিয়ে ইন্স্যুরেন্স করার জন্য যোগাযোগ করতে পারেন।”
তিনি অবৈধ বাংলাদেশীদের বিষয়ে বলেন, “আশা করছি খুব শীঘ্রই সরকার অবৈধদেরও টিকা প্রদান করার ঘোষণা দিবে। সেটা সিটি মেয়র কিংবা ফরেন সাপোর্ট সেন্টারের মাধ্যমেও নিবন্ধন করা হতে পারে।”
বোহম বা ইন্স্যুরেন্স না থাকা এবং ভিসা না থাকা বাংলাদেশীদের টিকা প্রদান বিষয়ে সিউলের বাংলাদেশ দূতাবাসের দ্বিতীয় সচিব মিসপে সরেন বলেন, “আমরা সরকার কর্তৃক এ ধরনের তথ্য পাওয়া মাত্র দ্রুত দূতাবাসের ফেসবুক পেজে আপডেট করব।”
অপর একটি সূত্র মতে, অবৈধ অভিবাসীর কারো করোনা টেস্ট করার বা করোনা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নেওয়ার ক্ষেত্রে দক্ষিণ কোরিয়া ইমিগ্রেশন তাদের গ্রেফতার করবে না। এছাড়াও কোনো ধরনের উপসর্গ পরিলক্ষিত হলে কোনো ভয়ভীতি ছাড়াই করোনার ফ্রি পরীক্ষা সংক্রান্ত তথ্য এবং অন্য যেকোনো বিষয়ে পরামর্শ ও সেবা নেয়ার জন্য কোরিয়ার ইমিগ্রেশনের নির্দিষ্ট ১৩৪৫ নম্বরে ফোন করে অফিস চলাকালীন সময়ে অন্য ভাষার পাশাপাশি সরাসরি বাংলা ভাষায়ও কথা বলা যাবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাতকানিয়ায় ডলুনদীর বেইলি ব্রিজের পাটাতন ভেঙে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামের দুজনসহ ১০ বিশিষ্ট ব্যক্তি পেলেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার