থাকবে না ওয়াসার ডিপ টিউবওয়েল

নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পানির স্তর ৮ থেকে ১০ ফুট উন্নীত ।। ভূপৃষ্ঠের তলদেশের পানি ব্যবহার না করা দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম শহর হবে চট্টগ্রাম

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৬:০৪ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামে ওয়াসার সব ডিপ টিউবওয়েল বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। আগামী বছর খানেকের মধ্যে নগরীতে ওয়াসার কোনো টিউবওয়েল থাকবে না। আর এর মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠের তলদেশের পানি ব্যবহার না করা দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম শহর হতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম। অপরদিকে টিউবওয়েল বন্ধ করে দেয়া এলাকাগুলোতে পানির স্তর অন্তত ৮ থেকে ১০ ফুট পর্যন্ত উন্নীত হয়েছে। টিউবওয়েল বন্ধ করে দেয়ার বিষয়টি নগরীর ভূপ্রাকৃতিক উন্নয়নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম মহানগরীতে পানি সরবরাহের একমাত্র নিয়ন্ত্রক সংস্থা চট্টগ্রাম ওয়াসা। দীর্ঘদিন ধরে এই সংস্থা নগরীর পানির চাহিদা মিটাতে হিমশিম খেয়ে আসলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করেছে। একসময় চট্টগ্রাম ওয়াসা পুরোপুরি ডিপ টিউবওয়েল নির্ভর ছিল। বৈদ্যুতিক গোলযোগে ডিপ টিউবওয়েলের উৎপাদন ব্যাহত হলে নগরজুড়ে পানির হাহাকার শুরু হত। ওয়াসার দীর্ঘদিনের পুরনো ৪৬টি টিউবওয়েল দিয়ে চাহিদা মেটানো সম্ভব না হওয়ায় ২০০৯ সালের পরবর্তীতে নতুন প্রকল্প গ্রহণ করে আরো ৫০টি টিউবওয়েল স্থাপন করা হয়। সর্বমোট ৯৬টি ডিপ টিউবওয়েল থেকে দৈনিক সর্বোচ্চ ৮ কোটি লিটার পর্যন্ত পানি উত্তোলন করা হয়েছিল। ভূপৃষ্ঠের তলদেশ থেকে ডিপ টিউবওয়েল দিয়ে কোটি কোটি লিটার পানি উত্তোলনের প্রভাব পড়তে শুরু করে ভূপ্রকৃতিতে। মাটির তলদেশে পানির স্তর দ্রুত নামতে শুরু করে। বিভিন্ন এলাকায় কয়েকশ ফুট পর্যন্ত পানির স্তর নেমে যায়। মরে যায় মাটি। জীব বৈচিত্র্যে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করে।
বিদ্যমান সংকটজনক পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম ওয়াসা ডিপ টিউবওয়েল বন্ধ করে দেয়ার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু পানির বিকল্প উৎস তৈরি হওয়ার আগে টিউবওয়েল বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে চট্টগ্রাম ওয়াসা এখন পানিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ। তবে পাইপলাইন সংকট এবং সংযোগ না থাকায় ওয়াসা বিভিন্ন পানি শোধনাগারে পুরোদমে উৎপাদন চালাতে পারছে না। উৎপাদন কমিয়ে রাখার ব্যাপারে ওয়াসাকে রেশনিং করতে হচ্ছে। এই অবস্থায় ওয়াসা ডিপ টিউবওয়েল পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়ে শুধুমাত্র ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগের পানি দিয়ে নগরবাসীর চাহিদা মেটানোর লক্ষ্য নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে।
সূত্র বলেছে, চট্টগ্রাম ওয়াসার ৯৬টি টিউবওয়েলের মধ্যে ৬৬টি পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বাকি ৩০টিও রেশনিং করে উৎপাদন চালানো হয়। বর্তমানে উক্ত ৩০টি টিউবওয়েল থেকে ৩ কোটি লিটারের মতো পানি উত্তোলন করা হয়। চালু না রাখলে নষ্ট হয়ে যাবে বিধায় টিউবওয়েলগুলো চালু রাখতে হচ্ছে বলেও সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন। তারা বলেন, শেখ হাসিনা-২ পানি শোধনাগার থেকে বর্তমানে ট্রায়াল বেসে ৫ কোটি লিটার পর্যন্ত পানি উত্তোলন করা হচ্ছে। এটির ট্রায়াল রান শেষ হলে ডিপ টিউবওয়েল বন্ধ করে দিয়ে এই পানি শোধনাগার থেকে ১৪ কোটি লিটার পানি উত্তোলন করা হবে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম ফজলুল্লাহ দৈনিক আজাদীকে জানান, ডিপ টিউবওয়েলের পানি আমাদের আর প্রয়োজন হবে না। এটি তোলা উচিতও হবে না। তাই আমরা ডিপ টিউবওয়েল বন্ধ করে দিচ্ছি। বছর খানেকের মধ্যে টিউবওয়েল পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হবে।
তিনি বলেন, এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভারত, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম, মিয়ানমার, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ডসহ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে চট্টগ্রামই হবে প্রথম শহর যেখানে ভূপৃষ্ঠের তলদেশের পানি ব্যবহৃত হবে না। তিনি বলেন, জাপান আইন করে ভূপৃষ্ঠের তলদেশের পানির ব্যবহার নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। উন্নত বিশ্বেও ভূপৃষ্ঠের পানি ব্যবহার নিরুৎসাহিত করা হয়। চট্টগ্রাম ওয়াসার পানির সংকট নেই এবং আগামী অনেক বছরের চাহিদা মেটাতে ওয়াসা সক্ষম বলেও ইঞ্জিনিয়ার একেএম ফজলুল্লাহ মন্তব্য করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবান্দরবানে ভ্রমণকারীদের গাড়িতে পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের গুলি
পরবর্তী নিবন্ধনিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস খাদে, ৯৯৯ এ ফোন পেয়ে উদ্ধার