প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণভান্ডার থেকে গরীব ও দুস্থদের জন্য দেওয়া শাড়ি ’দুই বন্ধুর স্ত্রীকে’ উপহার দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন হবিগঞ্জের সংসদ সদস্য সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। তার দুই বন্ধু এ উপহার প্রত্যাখ্যান করে ফেসবুকে পোস্ট দিলে বিষয়টি সামনে আসে; যা নিয়ে আলোচনা–সমালোচনা শুরু হয়েছে সোশাল মিডিয়ার পরিচিত মুখ ব্যারিস্টার সুমনের নির্বাচনী এলাকা চুনারুঘাট ও মাধবপুরে। খবর বিডিনিউজের।
আব্দুল মুকিত ও সানু আহমেদ নামে দুই ব্যক্তি গত বুধবার উপহার পাওয়া শাড়ি স্বল্প মূল্যের হওয়ায় তা নিতে অস্বীকার করে ফেসবুকে আলাদা পোস্ট দেন। এ দুই ব্যক্তি সংসদ সদস্যের স্কুলের বন্ধু হিসেবে এলাকায় পরিচিত। রোজার ঈদ উপলক্ষে গত ২৭ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণভান্ডার থেকে সংসদ সদস্য সৈয়দ সায়েদুল হককে ৪০০টি শাড়ি, ৪৮টি থ্রি–পিসসহ বিভিন্ন ধরনের পোশাক বরাদ্দ দেওয়া হয়। পরে সংসদ সদস্য নিজেই বরাদ্দের চিঠি তার ফেসবুকে পোস্ট করেন। তখন এলাকাবাসী এ নিয়ে তার প্রশংসা করেন। তবে ত্রাণের শাড়ি ব্যারিস্টার সুমন তার বন্ধু চুনারুঘাট উপজেলার গাদি শাইল গ্রামের প্রাণিচিকিৎসক আব্দুল মুকিতের স্ত্রী এবং গেরারুক গ্রামের মো. সানু আহমেদের স্ত্রীকে দেওয়ার খবর ফেসবুকে আসার পর তা নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন এই সংসদ সদস্য। তবে এটিকে অপপ্রচার হিসেবে দাবি করেন হবিগঞ্জ–৪ আসনের এ সংসদ সদস্য। অন্যদিকে ত্রাণের শাড়ি স্ত্রীদের উপহার হিসেবে দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন তার ওই দুই বন্ধু।
আব্দুল মুকিত গত বুধবার রাতে ফেসবুকে লেখেন, ঈদের আগের রাত ১২টার সময় বউয়ের জন্য উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী রায়হানের মাধ্যমে একটি শাড়ি পাঠান ব্যারিস্টার সুমন। বাড়িতে নিয়ে খুলে দেখেন এটা জাকাতের শাড়ি। তৎক্ষণাৎ ফেরত পাঠানোর উপায় না পেয়ে অসহায় এক নারীকে দিয়ে দিই।
সানু আহমেদও একই দিন ফেসবুকে লেখেন, ‘ব্যারিস্টার সুমনের দেওয়া আমার বউয়ের জন্য জাকাতের সুতি শাড়ির বাজারমূল্য ২৮০ টাকা।…আমার বউ এসব শাড়ি পরে না। আগামীকাল একজন অসহায় মানুষকে শাড়িটি দিয়ে দেব।’
এরপর থেকে জানাজানি হতে থাকলে তাদের ফেসবুক পোস্টের কমেন্টে একের পর এক মন্তব্য যোগ হতে থাকে। কটাক্ষের পাশাপাশি পক্ষে– বিপক্ষে আলোচনা–সমালোচনা শুরু হয়। এ বিষয়ে আবদুল মুকিত বলেন, ‘ব্যারিস্টার সুমনের নির্বাচনের সময় আমি এত কষ্ট করেছি। সে কি করে আমার বউয়ের জন্য এ ধরনের শাড়ি পাঠায়। আমার অবস্থান পরিষ্কার, যা সত্য তাই তুলে ধরেছি। শাড়িটি দেখে অনেক কষ্ট পেয়েছি। তাই ফেসবুকে এ স্ট্যাটাস দেওয়া।’
সানু আহমেদ বলেন, “‘সুমন আমার বন্ধু হয়ে অন্য মানুষের মাধ্যমে আমার স্ত্রীকে কিভাবে শাড়ি পাঠাল, তা বুঝে উঠতে পারছি না। এ শাড়ি তো আমার পাওয়ার কথা না। এগুলো তো গরিব মানুষের মধ্যে বিতরণের কথা।’
এ বিষয়ে ব্যারিস্টার সুমন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর উপহার পেয়ে প্রথম আমি এই তালিকা জনগণের জন্য ফেসবুকের মাধ্যমে প্রকাশ করি। এর আগে আমার আসনের কোনো সংসদ সদস্য প্রকাশ করেননি। প্রধানমন্ত্রীর এ উপহার আমার দুই উপজেলায় বিতরণের জন্য আমি যাদেরকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম তাদের একজন উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী। তিনি হয়তো তার এক বন্ধুর স্ত্রীকে এ শাড়ি প্রদান করেন। আবার তারাই একই শাড়ি অন্যজনকে দিয়ে ফেসবুকে এ প্রচারণা করেন। প্রকৃত পক্ষে একটি পক্ষ আমার বিরোধিতা করছে, তারাই এখন শাড়ি নিয়ে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।’