চেয়ারম্যান পদে প্রবীণ নবীনের মধ্যে লড়াই

সীতাকুণ্ড উপজেলা পরিষদ নির্বাচন

লিটন কুমার চৌধুরী, সীতাকুণ্ড | শুক্রবার , ১৯ এপ্রিল, ২০২৪ at ৬:২৮ পূর্বাহ্ণ

বন্দরনগরীর প্রবেশদ্বার সীতাকুণ্ড উপজেলা। ভৌগোলিকভাবে যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবেও এর গুরুত্ব বেশী। সীতাকুণ্ড উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হবে আগামী ৮ মে। এই উপজেলায় এবারের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দুইজন এবং ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন এবং বাছাইয়ে সকলের মনোনয়নপত্র বৈধ হয়েছে। এবার চেয়ারম্যান পদে প্রবীণ ও নবীনের মধ্যে লড়াই হবে।

চেয়ারম্যান পদে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মহিউদ্দিন আহমেদ মঞ্জু, অপরজন হচ্ছে বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আরিফুল আলম রাজু। এই উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান (সাধারণ) পদে নির্বাচন করছে সলিমপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মহিউদ্দিন ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জালাল আহম্মদ। নারী ভাইস চেয়ারম্যান (সংরক্ষিত) পদে নির্বাচন করছেন সীতাকুণ্ড মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদিকা শাহিনুর আক্তার বিউটি, উপজেলা শ্রমিক লীগের মহিলা সম্পাদিকা শামীমা আক্তার লাভলী ও হামিদা আক্তার।

উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, সীতাকুণ্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ৩২০১৯৩। তার মধ্যে পুরুষ ভোটার ১, ৬৭, ৩৮৩ এবং মহিলা ভোটার ১, ৫০, ৭০৯ ও তৃতীয় লিঙ্গের একজন ভোটা রয়েছে। মোট ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৯২ ও বুথ রয়েছে ৬৮৭। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান প্রার্থী চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মহিউদ্দিন আহমেদ মঞ্জু ১৯৯১ সাল থেকে ১৭ বছর সৈয়দপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৮২ সালে ছিলেন উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সীতাকুণ্ড ডিগ্রি কলেজের ভিপি। পরে তিনি জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৯৬ সাল থেকে মহিউদ্দিন মঞ্জু প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনে সংসদ সদস্য পদে দলের মনোনয়ন চেয়ে আসছেন। কিন্তু প্রতিবারই দল সেটার মূল্যায়ন করেনি। এবার তিনি উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গে মহিউদ্দিন আহমেদ মঞ্জু বলেন, সীতাকুণ্ড উপজেলার মানুষের সুখেদুঃখে পাশে থাকার জন্য আমার এই সিদ্ধান্ত। দলীয় একাধিক প্রার্থী হওয়ায় দলে বিভেদ আরও বাড়বে বলে তৃণমূল আওয়ামী লীগের মন্তব্যের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবার জন্য নির্বাচনকে উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে সীতাকুণ্ডে আওয়ামী লীগ রাজনীতি করে যাচ্ছি। আমি প্রায় ১৭ বছর ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। জনগণ যার কাছে নিরাপদ, জনগণ তাকেই বেছে নেবে।

তার প্রতিদ্বন্দ্বী আরিফুল আলম চৌধুরী রাজু ১৯৯২ সালে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত হন। ২০০৩ সাল থেকে ২০১৩ পর্যন্ত তিনি বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ২০১৩ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত ছিলেন সভাপতি। বর্তমানে দ্বিতীয় মেয়াদে তিনি সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় কাজ করছি। জনগণ আমাকেই ভোট দিবে এবং বিপুল ভোটে আমি জয়লাভ করবো।

সীতাকুণ্ডের রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বয়স ও রাজনীতিতে কনিষ্ঠ হলেও রাজু চৌধুরী বর্তমান সংসদ সদস্যের বিশ্বস্ত হওয়ায় তিনি হতে পারেন উপজেলা চেয়ারম্যান। অপরপক্ষের মত হচ্ছে, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দিন মঞ্জু দলের দীর্ঘদিনের ত্যাগী ও পরীক্ষিত সিনিয়র নেতা। নির্বাচনে যেহেতু অন্য দলগুলো অংশ নেয়নি, এখানে ভোট পড়বে আওয়ামী লীগ সমর্থক ও কিছু ভাসমান ভোটারের। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে যেতে পারেন। কেননা জ্যেষ্ঠতার কারণে দলে বেশির ভাগ নেতাকর্মী তার সঙ্গে থাকবেন।

সীতাকুণ্ড আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব এস এম আল মামুন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবার জন্য নির্বাচনকে উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। তাই আওয়ামী লীগ সমর্থিত একাধিক প্রার্থী থাকতে পারে। এছাড়া নির্বাচন আচরণবিধিতে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের এ নির্বাচনে প্রভাব কাটানোর কোন সুযোগ নেই। নির্বাচন সুস্থ ও গ্রহণ যোগ্য হবে। তবে সৎ, যোগ্য এবং দলের দীর্ঘদিনের ত্যাগী ও পরীক্ষিত প্রার্থী নির্বাচনে জয়লাভ করবে এ প্রত্যাশা করি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধত্রাণের শাড়ি‘২ বন্ধুর স্ত্রীকে’, সমালোচনার মুখে ব্যারিস্টার সুমন
পরবর্তী নিবন্ধরুমায় অপহরণের শিকার ব্যাংক ম্যানেজারকে চট্টগ্রামে বদলি