তিন শিল্পীর দৃষ্টিতে চট্টগ্রামের সঙ্গীতাঙ্গন

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ২১ জুন, ২০২২ at ৬:৪৮ পূর্বাহ্ণ

পরিশ্রম করলে এবং কমিটমেন্ট থাকলে সঙ্গীতে সাফল্য লাভ সম্ভব। বিশ্ব সঙ্গীত দিবস উপলক্ষে দৈনিক আজাদীর সাথে আলাপকালে এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন চট্টগ্রামের তিন বিশিষ্ট শিল্পী। তাঁরা মনে করেন, চট্টগ্রামের সঙ্গীতাঙ্গনের প্রসারে সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা বাড়ানো উচিত। আর সঙ্গীতের মানোন্নয়নে গুণী শিল্পীদের সম্মান করতে হবে।

চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত প্রশিক্ষক মোস্তফা কামাল বলেন, চট্টগ্রামের ছেলেমেয়েরা সঙ্গীত নিয়ে এখন দেশের বাইরে গিয়ে ভালো করছে। তাদের অনেকে ভারতের জি-বাংলার সা রে গা মা পাতেও যাচ্ছে। তবে বর্তমানের ছেলেমেয়েদের মধ্যে পরিশ্রম না করেই তারকাখ্যাতি পাওয়ার একটা প্রবণতা দেখা যায়। আগে যেমন আমরা কমিটেড হয়ে গানবাজনা করেছি এখনকার ছেলেমেয়েদের মধ্যে সেটা কম। তারা ফেসবুক-ইউটিউবে নিজের রেকর্ড করা একটা গান পোস্ট করে দিয়েই মনে করে যে তারা কিছু একটা করে ফেলেছে। এটা আমাদের পিছনের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু পরিশ্রম ছাড়াতো কোনো কিছু অর্জন করা যায় না। তাই সঙ্গীতে ভালো কিছু করতে হলে পরিশ্রম করতে হবে। যারা পরিশ্রম করছে তারা ফলাফল কিন্তু পাচ্ছে। মোট কথা পরিশ্রমের পাশাপাশি কমিটমেন্ট থাকতে হবে। পরিশ্রম ছাড়া ভালো কিছু অর্জন করা যাবে না। এটাই চিরন্তন সত্য।

তিনি বলেন, দেশীয় সঙ্গীতের পাশাপাশি আমরা বিদেশী সঙ্গীতও গ্রহণ করব ততটুকুই, যতটুকু আমাদের দেশীয় সঙ্গীতের সাথে যায়। সঙ্গীতের নামে উচ্ছৃংখলতা আমি কোনোভাবেই সমর্থন করি না। সত্যিকার অর্থে যারা সঙ্গীত চর্চা করেন বা দেশীয় সংস্কৃতিকে লালন করেন তারাও সঙ্গীতের নামে হৈ চৈ সমর্থন করবেন না।
আঞ্চলিক ও লোকসঙ্গীত শিল্পী সনজিৎ আচার্য্য বলেন, চট্টগ্রামে যারা সত্যিকার অর্থে গানবাজনা বুঝে এবং জানে তাদের মূল্যায়নটা খুবই কম হচ্ছে। যেমন, আমাদের পাশের দেশ ভারতে জি বাংলার সা রে গা মা পাতে অজয় চক্রবর্তীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সেখানে উনাকে আমন্ত্রণ না জানালে কোনো অসুবিধা ছিল না। কিন্তু এর মাধ্যমে উনাকে বিশেষ সম্মান জানানো হয়েছে। সেই ব্যাপারটা আমরা এখানে পাচ্ছি না। যে কারণে আমরা খুব হতাশ। আমাদের এখানে আয়োজকদের সাথে সম্পর্ক থাকার কারণে সঙ্গীত বিষয়ে কম জেনেও অনেকে বিচারকের আসনে বসে যাচ্ছেন। তাহলে আমাদের সঙ্গীতের মানটা ভালোর দিকে যাবে কীভাবে?

তিনি বলেন, আমাদের প্রত্যেকটি শিল্পীর নিজস্ব গান থাকতে হবে। যেকোনো অনুষ্ঠানে নিজের গান গাইতে হবে। দেশীয় মাটির যে সুগন্ধি সেটা গানের মধ্যে, সুরের মধ্যে থাকতে হবে। বিদেশী গান নিয়ে লাফালাফি করার কোনো প্রয়োজন নেই। আমাদের দেশে গানের বিশাল সম্ভার রয়েছে। সেগুলোকে নিয়ে কাজ করলেই আমরা প্রকৃত শিল্পী হতে পারব বলে আমি মনে করি।

রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী আইরিন সাহা বলেন, চট্টগ্রামের সঙ্গীতের প্রসারে সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা আরো বাড়ানো উচিত। সেইসাথে যারা মেধা থাকা সত্ত্বেও আর্থিক অসঙ্গতির কারণে সঙ্গীত চর্চা করতে পারছে না তাদের জন্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো এবং তাদের বৃত্তি দেওয়া উচিত। অনেকের কণ্ঠ ভালো কিংবা সঙ্গীতে ভালো দখল আছে, কিন্তু আর্থিকভাবে দুর্বল হওয়ার কারণে হয়ত এগুতে পারছে না। তাদের জন্য সরকারি সহযোগিতা বাড়াতে হবে।

তিনি বলেন, আমি মনে করি সারা বিশ্বের সঙ্গীত একরকমই। সঙ্গীত মনে প্রশান্তি আনে, মনের খোরাক জোগায়। তাই আমার দৃষ্টিতে সঙ্গীত সঙ্গীতই। বিশ্বের যেকোনো জায়গার সঙ্গীতই আমাকে মনেপ্রাণে স্পর্শ করতে পারে। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে বিশ্ব সঙ্গীতকে গ্রহণ করতে গিয়ে সেটা যেন কোনোভাবেই উচ্ছৃংখলতার পর্যায়ে না যায়। শিল্পীরা যেন সেটা মনে রেখে গান করে- আমি সেই আহ্বান জানাব। তাহলেই সঙ্গীতের মর্যাদা বজায় থাকবে বলে আমি মনে করি। তাই বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে সুর মিলিয়ে আমি বলতে চাই: বিশ্ববীণারবে বিশ্বজন মোহিছে।/ স্থলে জলে নভতলে বনে উপবনে/ নদীনদে গিরিগুহা-পারাবারে/ নিত্য জাগে সরস সঙ্গীতমধুরিমা,/ নিত্য নৃত্যরসভঙ্গিমা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএইচএসসির ফরম পূরণের সময় বাড়ল ৬ জুলাই পর্যন্ত
পরবর্তী নিবন্ধবিশ্ব সঙ্গীত দিবস আজ