তিনটিতেই নৌকার জয়

মীরসরাই বারইয়াহাট রাঙ্গুনিয়া বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ, কাউন্সিলর প্রার্থীসহ আহত ১৪

আজাদী ডেস্ক | সোমবার , ১ মার্চ, ২০২১ at ৬:৩৬ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের তিন পৌরসভা মীরসরাই, বারইয়াহাট ও রাঙ্গুনিয়ায় মেয়র পদে জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। এর মধ্যে মীরসরাইয়ে মেয়র প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। এদিকে মীরসরাই ও বারইয়াহাটে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ হয়েছে। এতে আহত হয়েছেন ১০ জন। রাঙ্গুনিয়ায় সংঘর্ষে এক কাউন্সিলর প্রার্থী ও পুলিশের এএসআইসহ আহত হয়েছেন ৪ জন।
মীরসরাই ও বারইয়াহাটে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ : মীরসরাই প্রতিনিধি জানান, গতকাল রোববার মীরসরাই উপজেলার মীরসরাই ও বারইয়াহাট পৌরসভার নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলে। কিছু কেন্দ্রে কাউন্সিলর প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ হয়েছে। এতে আহত হয়েছেন ১০ জন।
বারইয়াহাট পৌরসভায় ৪,৮৭৮ ভোট পেয়ে নৌকার প্রার্থী রেজাউল করিম খোকন বিজয়ী হয়েছেন। বিএনপির প্রার্থী দিদারুল আলম মিয়াজী পেয়েছেন ১৩১ ভোট। মীরসরাই পৌরসভায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী গিয়াস উদ্দিন।
বারইয়াহাট পৌরসভায় ভোটকেন্দ্রে প্রবীণ ও মহিলা ভোটারদের বেশি দেখা গেছে। মীরসরাই পৌরসভায়ও সুন্দরভাবে ভোট হয়েছে। তবে কাউন্সিলর প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের মাঝে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ হয়েছে। মীরসরাই পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডে পাঞ্জাবি প্রতীকের প্রার্থী আরিফের সমর্থক জুয়েলের মাথা ফাটিয়ে গুরুতর আহত করে প্রতিপক্ষ গাজরের কর্মীরা। একই ওয়ার্ডের পাঞ্জাবির এজেন্ট পৌর আওয়ামী লীগ কর্মী সালাউদ্দিন রাসেল অভিযোগ করেন, তার ওপর হামলা করে প্রতিপক্ষ কাউন্সিলর প্রার্থীর কর্মীরা।
৮ নং ওয়ার্ড নাজিরপাড়া এলাকায় অনেক ভোটার অভিযোগ করেন, বাড়ি থেকে বের না হতে তাদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছে প্রতিপক্ষ। এ সময় দুই বোন সীমা আক্তার ও সুলতানা রাজিয়া আহত হন। এই কেন্দ্রের কাউন্সিলর প্রার্থী মেজবাহ উদ্দিন দাবি করেন, তার ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে বাধা দেয় প্রতিপক্ষ।
তবে উক্ত কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা মীরসরাই থানার ওসি মুজিবুর রহমান বলেন, এখানে কেন্দ্রের পাশে মাঠ ও বাড়ি থেকে কিছু যুবক ঝামেলা পাকানোর চেষ্টা করে। তাদের ধাওয়া দিয়ে লাঠিপেটা করা হয়। পরবর্তীতে আর গোলযোগ হয়নি। কয়েকেটি কেন্দ্রে এ রকম গোলযোগে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে।
মীরসরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মিনহাজুর রহমান বলেন, টুকটাক গোলযোগের চেষ্টা থাকলেও সুষ্ঠু, সুন্দর পরিবেশে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে।
বারইয়াহাটে বিএনপির প্রার্থী দিদারুল আলম মিয়াজী অভিযোগ করেছেন, সব কেন্দ্র থেকে তার নির্বাচনী এজেন্টদের বের করে দিয়েছে আওয়ামী লীগের লোকজন। কয়েকজন কর্মীর ওপর হামলার অভিযোগও করেন তিনি।
তবে বিএনপি প্রার্থীর অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রেজাউল করিম খোকন বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটাররা ভোট দিয়েছেন। বিএনপিকে জনগণ প্রত্যাখান করায় তাদের প্রার্থী মিথ্যাচার করছেন।
বারইয়ারহাট পৌরসভার রিটার্নিং কর্মকর্তা আতাউর রহমান বলেন, ভোটার উপস্থিতি অনেক ভালো ছিল। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। আইনশৃক্সখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তৎপর ছিলেন।
মীরসরাই পৌরসভায় সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩৭ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। মীরসরাইয়ে মোট ভোটার ১২,৮৫৫ জন। বারইয়ারহাট পৌরসভায় মেয়র পদে দুজন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৫৪ জন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৭ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। বারইয়ারহাটে ভোটার ৮,৬৫৫ জন।
রাঙ্গুনিয়ায় কাউন্সিলর প্রার্থী আহত : রাউজান প্রতিনিধি জানান, রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার নির্বাচন বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবে গতকাল শেষ হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা ১১টার দিকে উত্তর নোয়াগাঁও সরকারি প্রাইমারি স্কুল কেন্দ্রে দুই কাউন্সিলর প্রার্থী এহসান ও জালাল উদ্দিনের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় কয়েক রাউন্ড গুলির আওয়াজ শোনা যায়। লাঠির আঘাতে কাউন্সিলর প্রার্থী এহসান (৩০), পুলিশের এএসআই মুনির (৩৪), মোহাম্মদ বাদশা (২৬) ও মোহাম্মদ সোহেল (৩১) আহত হয়েছেন। তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা দেয়া হয়। আহত বাদশা ও সোহেলকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শাহজাহান সিকদার। তিনি পেয়েছেন ১৪ হাজার ৮০৪ ভোট। বিএনপির প্রার্থী হেলাল উদ্দিন শাহ’র অভিযোগ, প্রতিপক্ষ প্রার্থীর লোকজন ভোট কেন্দ্র দখল করে তার ভোটারদের ভোটদানে বাধা দিয়েছে। তার এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। তিনি নির্বাচনী ফলাফল প্রত্যখ্যান করছেন বলে জানান।
রিটার্নিং অফিসার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান বেসরকারিভাবে নৌকার প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন জানিয়ে বলেন, বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনকালীন ৯ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, ১ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করেছেন।
উল্লেখ্য ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত রাঙ্গুনিয়া পৌরসভা ‘খ’ শ্রেণিভুক্ত। ২০১৫ সালে মেয়র পদে নির্বাচিত হন নৌকার প্রার্থী শাহজাহান সিকদার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধটিকা গ্রহীতাদের দীর্ঘ লাইন
পরবর্তী নিবন্ধআলকরণে শান্তিপূর্ণ ভোট মাসুম কাউন্সিলর