আলকরণে শান্তিপূর্ণ ভোট মাসুম কাউন্সিলর

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ১ মার্চ, ২০২১ at ৬:৩৭ পূর্বাহ্ণ

আওয়ামী লীগ সমর্থিত আবদুস সালাম মাসুম বেসরকারিভাবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) ৩১ নং আলকরণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ হয়েছে এ ওয়ার্ডে।
সকালে কয়েকটি কেন্দ্রে মোটামুটি ভোটার উপস্থিতি ছিল। তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে কমে আসে। দিনভর পুরো ওয়ার্ডে প্রচুর বহিরাগত দেখা গেছে। নগরের বিভিন্ন এলাকা থেকে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ কর্মীরা এসে দলবদ্ধভাবে অবস্থান নেয় ভোটকেন্দ্রের বাইরে। ছিলেন আশেপাশের ওয়ার্ডের কয়েকজন সাধারণ ও সংরিক্ষত কাউন্সিলরও। সাড়ে ১১ টার দিকে সদরঘাট স্কলার স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে পুলিশ ধাওয়া দেয় বহিরাগতদের। এসময় দুইজনকে আটক করলেও পরে ছেড়ে দেয়া হয়। এছাড়া সকাল ৯টার দিকে ইউনুচ মিয়া মাতৃসদন শিশু সেবা ভোটকেন্দ্রে ইভিএম মেশিনে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। সেটি সারিয়ে তুলতে আনুমানিক ১০ মিনিট সময় লাগে। এসময় ভোট কারচুপির অভিযোগ করে বাইরে হৈ চৈ করেন প্রার্থীর সমর্থকরা।
গত ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় চসিক নির্বাচন। কাউন্সিলর প্রার্থী তারেক সোলায়মান সেলিমের মৃত্যুর কারণে স্থগিত করা হয় আলকরণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ভোটগ্রহণ। পরবর্তীতে তারিখ নির্ধারণ করা হয় ২৮ ফেব্রুয়ারি (গতকাল)। গতকাল ভোটগ্রহণ শেষে আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয় থেকে ফলাফল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান। প্রতিটি কেন্দ্রে ৬ জন পুলিশ ও ১২ জন আনসার দায়িত্ব পালন করেন। একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও তিনজন স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া ভোটকেন্দ্রের আশেপাশে প্রচুর সংখ্যক পুলিশ দেখা গেছে। সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. কামরুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। কোনো ধরনের সমস্যা হয়নি। অভাব অভিযোগও ছিল না।
ভোটের ফলাফল :
আলকরণ ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ১৫ হাজার ১৯০। ভোট পড়েছে চার হাজার ৫০৩টি। যা মোট ভোটারের ২৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ। ওয়ার্ডটিতে ভোটকেন্দ্র সাতটি।
ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী, আবদুস সালাম লাটিম প্রতীক নিয়ে তিন হাজার ৩৫০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইয়াসির আরাফাত মিষ্টি কুমড়া প্রতীকে পান ৭৭০ ভোট। তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক। বিএনপি সমর্থিত দিদারুর রহমান রেডিও প্রতীকে পান ৩৫৮ ভোট। ঠেলা গাড়ি প্রতীকে মো. হানিফ ভূঁইয়া পেয়েছেন ২৫ ভোট। আবদুস সালাম শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এবং ইয়াছির আরাফাত নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ.জ.ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী বলে পরিচিত।
সরেজমিন চিত্র :
শহিদ এম এ গণি ইনস্টিটিউশন ভোটকেন্দ্র ও বন্দর মনোহরখালী আবাসিক এলাকা প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র। রাস্তার পশ্চিম পাড়ে শহিদ গণি এবং পূর্ব পাড়ে বন্দর মনোহরখালী কেন্দ্রের অবস্থান। দুই কেন্দ্রে মোট ভোটার চার হাজার ৯৪৩। যা পুরো ওয়ার্ডের ভোটারের ৩২ শতাংশ। স্বাভাবিকভাবেই কাছাকাছি অবস্থিত ভোটকেন্দ্র দুটির প্রতি আলাদা আগ্রহ ছিল প্রার্থীদের। হয়তো সে আগ্রহে দুপুর ১২টা থেকে কেন্দ্র দুটির মাঝখানের সড়কে অবস্থান নেন কাউন্সিলর প্রার্থী ইয়াছির আরাফাত। প্রায় পৌনে দুইটা পর্যন্ত ছিলেন সেখানে। কিছুক্ষণ শহিদ এম এ গণি এবং কিছুক্ষণ মনোহরখালী ভোটকেন্দ্রে ছুটে যান তিনি। কথা বলেন এজেন্টদের সাথে। ইয়াছির আরাফাত দাবি করেন, গলির মোড়ে তার সমর্থক ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে বাধা দেয়া হচ্ছে।
এর কিছুক্ষণ পর ছুটে আসেন আরেক প্রার্থী আবদুস সালাম মাসুম। এসময় দুই প্রার্থী পরষ্পরের সাথে হাসিমুখে কথা বলেন। তিনিও ভোট চান লাটিম প্রতীকে। সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে আবদুস সালাম মাসুম বলেন, ‘অনেক সাংবাদিক এখানে। কি দেখলেন ?’ এসময় দুই কেন্দ্রের বাইরে প্রচুর পুলিশ দেখা গেছে।
দীর্ঘক্ষণ অবস্থান করেও দুই কেন্দ্রে ভোটারের কোনো সারি দেখা যায় নি। অবশ্য সকাল সাড়ে ১০ টায় শহিদ এম এ গণি ইনস্টিটিউশন ভোটকেন্দ্রে ভোটার দেখা গেছে। দুই কেন্দ্রে প্রবেশমুখে পুলিশ সদস্যদের সর্তক অবস্থান দেখা গেছে। কেন্দ্রটির প্রিসাইডিং অফিসার অর্পণ কুমার চৌধুরী আজাদীকে বলেন, কেন্দ্রের মোট ভোটার সংখ্যা দুই হাজার ৪৮৯। ১২ টা পর্যন্ত ৬৬৫ ভোট কাস্ট হয়েছে। সকাল থেকে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ চলছে। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। কেন্দ্রের বাইরে কি ঘটছে সেটা আমার দেখার বিষয় না। শহিদ এম এ গণি ইনস্টিটিউশন ভোটকেন্দ্রে দায়িত্বপালনরত আনসার কেরামত বলেন, বাউন্ডারির ভেতর চুল পরিমাণ ঝামেলা হয়নি।
সাড়ে ১২টার দিকে রুহুল আমীন তপন নামে লাটিম প্রতীকের এজেন্ট বন্দর মনোহরখালী আবাসিক এলাকা প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মোহাম্মদ তোফাজ্জলকে অভিযোগ করে বলেন, ‘বিএনপি প্রার্থীর এজেন্ট ভোটারদের বিভ্রান্ত করছে। আমাদের এজেন্টের সাথে ঝামেলা করছে’। অভিযোগের বিষয়ে প্রিসাইডিং অফিসার মোহাম্মদ তোফাজ্জল বলেন, এমন কিছু ঘটেনি। তিনি আজাদীকে বলেন, মোট ভোটার দুই হাজার ৪৫৪। সাড়ে ১২ টা পর্যন্ত কাস্ট হয়েছে ৬৪০ টি। কেন্দ্রে সব প্রার্থীর এজেন্ট আছে। শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ চলছে।
এদিকে সাড়ে ১১ টায় ‘ইউনুচ মিয়া মাতৃসদন ও শিশু সেবা কেন্দ্র’ ভোট কেন্দ্রেও ভোটারের লাইন দেখা যায় নি। প্রিসাইডিং অফিসার সুমন দে বলেন, মোট ভোটার এক হাজার ৫৪৯। কাস্ট হয়েছে ৩৪২টি। সব প্রার্থীর এজেন্ট আছে। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ইভিএম মেশিনে সামান্য ত্রুটি দেখা দেয়। তবে ১০ মিনিটের মধ্যেই সারিয়ে তোলা হয়।
এর আগে সোয়া ১১টার দিকে সদরঘাট স্কলার স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে মুখোমুখি অবস্থান নেয় আবদুস সালাম ও ইয়াছির আরাফাতের সমর্থকরা। এসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ধাওয়া দেয়। ইয়াছির আরাফাতের দুই সমর্থককে আটক করলেও পরে ছেড়ে দেয়া হয়। স্কলার স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মো. আব্বাস বলেন, মোট ভোটার এক হাজার ৮৮৩। কাস্ট হয়েছে ৫০০। শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ চলছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধতিনটিতেই নৌকার জয়
পরবর্তী নিবন্ধসুইস ব্যাংকে কার কত টাকা জানতে চায় হাই কোর্ট