ড. মইনুল ইসলামের কলাম

| বৃহস্পতিবার , ২৭ জানুয়ারি, ২০২২ at ৮:১৩ পূর্বাহ্ণ

১৯৭১ সালে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ঔপনিবেশিক শৃঙ্খল থেকে একনদী রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জনকারী বাংলাদেশ ছিল একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত এবং চরম দারিদ্র্যকবলিত দেশ, যেখানে জনসংখ্যার ৮২ শতাংশই ছিল দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থানকারী জনগোষ্ঠি। সুতরাং, ঐ পর্যায়ে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ দারিদ্র্যপীড়িত হলেও বাংলাদেশের মানুষের চাইতে জীবনযাত্রার মানে অনেকখানি এগিয়ে ছিল। এমনকি বিংশ শতাব্দীর আশির দশক ও নব্বই দশকে বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রার মানের তুলনা করলেও যে বিষয়গুলো সামনে চলে আসবে সেগুলো হলো, পশ্চিমবঙ্গের গ্রামের মানুষ বামফ্রন্টের দীর্ঘ শাসনামলে যথাযথ গুরুত্ব পাওয়ায় এবং অপারেশন বর্গার মত কৃষি সংস্কারের সুফল পাওয়ায় বাংলাদেশের গ্রামের মানুষের চাইতে জীবনযাত্রার মানে আরো এগিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু, সত্তর দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু করে গত সাড়ে চার দশকে বাংলাদেশ থেকে যে এক কোটি ত্রিশ লাখ অভিবাসী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত রয়েছেন তাঁদের ৯০ শতাংশ যেহেতু গ্রামের মানুষ তাই তাঁদের পাঠানো ক্রমবর্ধমান রেমিট্যান্সের অর্থপ্রবাহ এদেশের গ্রামীণ জনগণের জীবনে সচ্ছলতার একটা বড়সড় উপাদান নিয়ে এসেছে, যা পশ্চিমবঙ্গে তেমন উল্লেখযোগ্য নয়। এই একটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পশ্চিমবঙ্গকে এতখানি পেছনে ফেলে দিয়েছে যে এখন বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতি পশ্চিমবঙ্গের গ্রামীণ অর্থনীতির চাইতে অনেক বেশি গতিশীল ও স্বচ্ছল হয়ে উঠেছে। আমরা অনেকেই হয়তো জানি না যে গড় মাথাপিছু জিএনআই এর দিক্‌ থেকেও বাংলাদেশের গ্রামীণ জনগণ পশ্চিমবঙ্গের গ্রামীণ জনগণকে পেছনে ফেলে দিয়েছে। (জিএনআই হলো জিডিপি ও নীট রেমিট্যান্সের যোগফল)। পশ্চিমবঙ্গের মাথাপিছু জিএনআই ভারতের গড় মাথাপিছু জিএনআই এর সমান হলেও ওখানকার গ্রামীণ মাথাপিছু জিএনআই অনেক কম। কোলকাতা, দুর্গাপুর, খড়গপুর, হলদিয়া, বর্ধমান এবং শিলিগুড়ি পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতির মূল সমৃদ্ধিকেন্দ্র রয়ে গেছে।

গত বছর বাংলাদেশে আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করেছি। ২০২১ সালের ২৪ নভেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার সব শর্ত পূরণ করেছে। এর আগে ২০১৫ সালে বিশ্ব ব্যাংকের ‘নিম্ন আয়ের দেশ’ ক্যাটেগরি থেকে বাংলাদেশ ‘নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ’ ক্যাটেগরিতে উত্তীর্ণ হয়েছে। ডঃ ইউনূস উদ্ভাবিত ক্ষুদ্র ঋণ আন্দোলনের সাফল্য গ্রামের ভূমিহীন নারীদের কাছে প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ পৌঁছে দেওয়ার একটা অত্যন্ত কার্যকর হাতিয়ার বাংলাদেশকে উপহার দিয়েছে, এবং এই সফল উদ্ভাবনটি বিশ্বস্বীকৃতি অর্জন করেছে। গ্রামীণ ব্যাংক এবং কয়েক হাজার এনজিও’র ক্ষুদ্রঋণের সহায়তায় গ্রামীণ নারীর স্বকর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বাংলাদেশ বিশ্বে সফল দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশের গ্রামীণ দারিদ্র্য নিরসনে ক্ষুদ্রঋণ তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। বাংলাদেশের নারীদের প্রায় ৩৬ শতাংশ বাড়ীর আঙিনার বাইরে অর্থনীতিতে প্রত্যক্ষভাবে ক্রিয়াশীল। দেশের দ্রুত বিকাশমান পোষাক শিল্পে ৩৩ লাখের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। আর এই শ্রমিকদের ৬০ শতাংশেরও বেশি নারী, যাদের সিংহভাগই গ্রাম থেকে এসে শহরে কর্মসংস্থানকে বেছে নিয়েছেন। সমাজের দরিদ্র ও প্রান্তিক অবস্থানের এসব নারীর প্রাতিষ্ঠানিক শিল্পখাতে কর্মসংস্থান তাঁদের বঞ্চনা ও চরম দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে ভূমিকা রাখছে। গার্মেন্টস শ্রমিকদের বৃহদংশই তাদের আয়ের একটা অংশ গ্রামে থাকা মাবাবাসন্তানেেদর ভরণপোষণের জন্য গ্রামে পাঠিয়ে দেন, যা গ্রামের প্রান্তিক জনগণকে দারিদ্রের কষাঘাত থেকে রক্ষা করছে।

এর উল্টোদিকে পশ্চিমবঙ্গে গত তিন দশক ধরে এক ধরনের ‘বিশিল্পায়ন’ (ফবরহফঁংঃৎরধষরংধঃরড়হ) প্রক্রিয়া ক্রিয়াশীল হয়ে উঠেছিল আক্রমণাত্মক ট্রেড ইউনিয়ন ও রাজনৈতিক হানাহানির কারণে। অনেক শিল্পপতি পশ্চিমবঙ্গ থেকে ভারতের পশ্চিমাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে তাঁদের শিল্পকারখানা সরিয়ে নিয়েছেন বৈরী রাজনীতির শিকার হয়ে। এব্যাপারে হয়তো পাঠকদের মনে আছে, বামফ্রন্টের আমলে মমতা ব্যানার্জীর রাজনৈতিক আন্দোলনে নাজেহাল হয়ে টাটা গ্রুপ কর্তৃক তাদের ‘টাটা ন্যানো’ গাড়ীর কারখানা পশ্চিমবঙ্গের সিংগুর থেকে গুজরাটে স্থানান্তরের ঘটনাটি সারা বিশ্বে প্রচন্ড আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। পরবর্তীতে নন্দীগ্রাম থেকে ইন্দোনেশিয়ার একটি শিল্পগ্রুপকেও পাততাড়ি গুটাতে হয়েছিল মমতা ব্যানার্জীর আন্দোলনের কারণে। ২০১১ সালে মমতা ব্যানার্জীর তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতাসীন হওয়ায় পশ্চিমবঙ্গের এই নেতিবাচক ইমেজ এখনো দূর হয়নি। এটা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ যে পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ৫০ শতাংশ শ্রমজীবী মানুষ এখনো কৃষিখাতে কর্মরত। এক সময়ের ভারতের নেতৃস্থানীয় শিল্পায়িত রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ বর্তমানে মহারাষ্ট্র, গুজরাট, কর্ণাটক ও তামিলনাড়ুর তুলনায় শিল্পায়নের ক্ষেত্রে ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে। ফলে, পশ্চিমবঙ্গের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হারও আশানুরূপ বাড়ছে না এই তিন দশকে।

অন্যদিকে, কিছুদিন আগেও মনে করা হতো কৃষিখাতের অগ্রগতি বাংলাদেশের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গে বেশি। অপারেশন বর্গার সাফল্য পশ্চিমবঙ্গকে এই অগ্রগতি অর্জনে সহায়তা করেছিল। ফলে, বিংশ শতাব্দীর আশি ও নব্বই দশকে পশ্চিমবঙ্গ থেকে ধানচাল, মাছ, মুরগীর বাচ্চা ও ডিম, গরু ইত্যাদি বাংলাদেশে বৈধঅবৈধ পথে আসাটাই নিয়মে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু এখন বাংলাদেশের কৃষিখাতেও সমৃদ্ধির ছোঁয়া লেগেছে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর কৃষি ও কৃষকবান্ধব নীতিমালা গ্রহণের কারণেই কৃষিখাতে এই চমকপ্রদ সাফল্যের ধারা সূচিত হয়েছিল, এবং ১৯৯৮ সালের বন্যার ধ্বংসযজ্ঞ সত্ত্বেও ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ দীর্ঘ ৪২ বছর পর ধান উৎপাদনে স্বয়ম্ভরতা অর্জনের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছিল। কিন্তু, দুঃখজনকভাবে ২০০১ সালে বিএনপিজামায়াত জোট সরকার ঐ কৃষি নীতিমালা পরিত্যাগ করে। ২০০৯ সালে মহাজোট ক্ষমতাসীন হওয়ার পর তাদের নিষ্ঠাবান প্রয়াসের ফলে ২০১১ সালে বাংলাদেশ মোটা ধান উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। ১৯৭২ সালে দেড় কোটি টন ধান লাগতো আমাদের, অথচ উৎপাদন করতে পারতাম মাত্র এক কোটি দশ লাখ টন। গত বছর এদেশে তিন কোটি বিরাশি লাখ টন ধান উৎপাদিত হয়েছে। সতের কোটির বেশি মানুষের খাদ্যশস্য যোগান দিয়েও এখন প্রায় প্রতি বছর মোটা ধান উদ্বৃত্ত হচ্ছে আমাদের। ধান, গম ও ভুট্টা মিলে ২০২০ সালে খাদ্যশস্য উৎপাদন ছিল চার কোটি তিপ্পান্ন লাখ টন। সত্তর লাখ টন আলুর অভ্যন্তরীণ চাহিদার বিপরীতে ২০২০ সালে বাংলাদেশে এক কোটি দুই লাখ টন আলু উৎপাদিত হয়েছে। মিঠাপানির মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয়, তরকারী উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ। হাঁসমুরগীর ডিম ও মাংস উৎপাদনে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। গরুর মাংস ও দুধ উৎপাদনে দেশে এখনো ঘাটতি রয়ে গেলেও মাংস উৎপাদনে কয়েক বছরের মধ্যেই স্বয়ম্ভরতা অর্জন করা যাবে। ঈদুল আজহার সময় অতীতে চোরাচালানে আসা ভারতীয় গরু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও এখন তার প্রয়োজন হয় না, বরং মাঝে মাঝে কোরবানীর গরু উদ্বৃত্ত থাকছে। আম, আনারস, কলা, পেয়ারা ও কাঁঠালের মত কয়েকটি প্রধান ফল উৎপাদনেও বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। (প্রতি বছর আমরা ৫৫/৬০ লাখ টন গম আমদানি করি)। খাদ্যসাহায্য এখন আমাদের বৈদেশিক ঋণ/অনুদানের এক শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। উচ্চফলনশীল প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসার, সেচ ব্যবস্থার আওতায় আসায় দেশের অধিকাংশ জমিতে বোরো চাষের সম্প্রসারণ, যথাযথ ভর্তুকি প্রদান, কৃষিঋণ পদ্ধতির সহজীকরণ, ফসলের বহুধাকরণ, কৃষির লাগসই যান্ত্রিকীকরণ, উচ্চফলনশীল ফসল, তরিতরকারী, মাছ, হাঁসমুরগী ও ফলমূল চাষের ব্যাপক প্রচলন, রাসায়নিক সার, বীজ ও কীটনাশকের সহজলভ্যতা, ইত্যাদি কৃষিখাতের উল্লেখযোগ্য সাফল্য। ফলে, উৎপাদনশীলতার উল্লম্ফন বাংলাদেশেও একটি কৃষি বিপ্লবের সূচনা করেছে। অবশ্য বাংলাদেশের জিডিপি’র মাত্র ১৪ শতাংশ এখন কৃষিখাত থেকে আসছে, যা ক্রমহ্রাসমান। কিন্তু, কৃষিতে এখনো দেশের ৪০ শতাংশ শ্রমজীবী মানুষ কর্মরত রয়েছেন।

উপরন্তু, বাংলাদেশের অভিবাসীরা ফরমাল চ্যানেলে প্রতি বছর যে ২২ বিলিয়ন ডলার অর্থ এবং হুন্ডির মত অপ্রাতিষ্ঠানিক চ্যানেলে যে আরো আটদশ বিলিয়ন ডলারের সমমূল্যের রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন তা গ্রামীণ অর্থনীতির জন্যে সবচেয়ে বড় শক্তির উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের গ্রামীণ জনগণের দারিদ্র্য দ্রুত নিরসনের বড় কারণ এই রেমিট্যান্স প্রবাহ। রেমিট্যান্স প্রবাহের সুফলভোগী পরিবারগুলোর বর্ধিত ভোগ, সঞ্চয় ও বিনিয়োগে গ্রামীণ অর্থর্নীতিতে বড়সড় সমৃদ্ধির জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। বাড়ীঘর পাকা হচ্ছে, অন্যান্য ধরনের বসতঘরেরও মান বৃদ্ধি পেয়েছে, ছেলেমেয়েরা ভাল স্কুলকলেজেবিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে, পরিবারের সদস্যদের আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের সামর্থ্য বাড়ছে, শিশুমৃত্যুর হার কমছে, সেনিটারী পায়খানার প্রচলন বাড়ছে, ঘরে ঘরে টিউবওয়েল বসে গেছে, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ চলে এসেছে, কৃষির যান্ত্রিকীকরণ ত্বরান্বিত হচ্ছে, গ্রামে শপিংমল স্থাপনের হিড়িক পড়েছে। গ্রামের রাস্তাঘাটেও আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থা চালু হয়ে গেছে। এর ফলে, গ্রামীণ জনগণের মধ্যে প্রায় আশি লাখ পরিবারের অন্তর্ভুক্ত ৪৫ কোটি মানুষ এখন নিম্নমধ্যবিত্ত কিংবা মধ্যবিত্ত অবস্থানে উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। কৃষিখাতের সাফল্যের পেছনেও বাংলাদেশী অভিবাসীদের অবদান অনস্বীকার্য। কৃষিতে উচ্চ ফলনশীল প্রযুক্তির প্রসার, সেচ ব্যবস্থার ব্যাপক প্রচলন, কৃষির যান্ত্রিকীকরণ, গ্রামীণ যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ, আধুনিক স্বাস্থ্য সুবিধা গ্রহণের পারঙ্গমতা বৃদ্ধি, গ্রামীণ জনগণের খাদ্যের পুষ্টিমান বৃদ্ধি, ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স বিপুল অবদান রাখছে। গ্রামীণ সড়কউন্নয়ন এবং আধুনিক পরিবহন চালুর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পশ্চিমবঙ্গকে পেছনে ফেলে দিয়েছে। গ্রামীণ বিদ্যুতায়নেও বাংলাদেশের সাফল্য পশ্চিমবঙ্গ থেকে বেশি।

পশ্চিমবঙ্গের গ্রামগুলোর সাক্ষরতার হার এখনো বাংলাদেশের গ্রামীণ সাক্ষরতার হারের চাইতে অনেক বেশি। পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষার মানও বাংলাদেশের চাইতে ভাল, উচ্চশিক্ষিত মানুষও পশ্চিমবঙ্গে অনেক বেশি। (মাদ্রাসা শিক্ষা বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে পেছনে টেনে ধরে রেখেছে)। তথ্য প্রযুক্তির প্রসারেও পশ্চিমবঙ্গ বাংলাদেশের চাইতে অগ্রগামী। পশ্চিমবঙ্গ থেকে আইটি সম্পর্কিত সেবা রফতানি তিন বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। গ্রামীণ জনগণের রাজনৈতিক সচেতনতা বাংলাদেশের চাইতে পশ্চিমবঙ্গে অনেক বেশি হওয়ায় স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা ওখানে অনেকখানি দুর্নীতিমুক্ত। অথচ, বাংলাদেশের গ্রামীণ জনগণের জীবনের সবচেয়ে বেশি দুর্দশা, যাতনা ও হয়রানি ঘটিয়ে চলেছে স্থানীয় সরকারের দুর্নীতি। এদেশের গ্রামীণ জনগণের জীবনের আরেকটি বিভীষিকার নাম শাসকদলের নেতাকর্মীদের মাস্তানি ও গুন্ডামি। দেশ থেকে সুষ্ঠু নির্বাচন নির্বাসিত হয়ে গেছে। এমনকি গ্রামের ইউনিয়ন কাউন্সিলের নির্বাচনে এবার যে সন্ত্রাস, খুনোখুনি, মাস্তানি ও জালিয়াতি পরিদৃষ্ট হলো তাতে প্রশ্ন উঠছে, অর্থনৈতিক অভাবঅনটন বেশ খানিকটা কমে গেলেও বাংলাদেশের গ্রামের মানুষ কি ভাল আছেন? অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গে সুষ্ঠু গণতন্ত্রের সুফল গ্রামীণ জনগণের তৃণমূল পর্যায়েও পৌঁছে গেছে। ওখানকার পঞ্চায়েতগুলো জনগণের অংশগ্রহণমূলক ও জবাবদিহিমূলক স্থানীয় সরকারের অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বিধানসভা এবং লোকসভার নির্বাচনগুলোও পশ্চিমবঙ্গে জালিয়াতিমুক্ত বলা চলে। সাম্প্রতিক বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি’র ভরাডুবি তারই অকাট্য প্রমাণ বহন করছে। পশ্চিমবঙ্গে জনগণের আয়বৈষম্য বাংলাদেশের চাইতে কম, যার ফলে প্রান্তিক জনগণের ভোগের মান বাংলাদেশের চাইতে ভাল হওয়ার কথা। অবশ্য, বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ এখনো দারিদ্র্য সীমার নিচে অবস্থান করছে।

লেখক : সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি, একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ও অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

পূর্ববর্তী নিবন্ধকাল আজ কাল
পরবর্তী নিবন্ধপাঁচলাইশ থানা তাঁতী লীগের সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু