ড. মইনুল ইসলামের কলাম

| বৃহস্পতিবার , ১৭ আগস্ট, ২০২৩ at ৮:৩৯ পূর্বাহ্ণ

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, তিনবার পাঁচ বছরের মেয়াদে ক্ষমতাসীন থাকার পর এবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হারানোর বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে পারে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে কিংবা ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশে সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সংসদীয় নির্বাচনে ব্যাপক ব্যালট জালিয়াতির অভিযোগের কারণে গত সাড়ে চার বছর ধরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে দেশের বিরোধী দলগুলোর পাশাপাশি বিশ্বের অনেক দেশেরও কূটনৈতিক আক্রমণের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলেও আওয়ামী লীগ ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করতো বলে সাধারণ ধারণা থাকলেও নির্বাচনের আগের রাতে পুলিশি প্রহরায় এবং প্রশাসনের সহযোগিতায় ব্যালট বাক্সগুলো ভরে ফেলার যে ন্যক্কারজনক ঘটনাটি দেশের অধিকাংশ এলাকায় ঘটানো হয়েছিল তার সত্যতা সম্পর্কে সিংহভাগ জনগণের মনে বিশ্বাস দৃঢ়ভাবে গেড়ে বসেছে। কিছুদিন আগে বাংলাদেশে জাপানের সদ্যসাবেক রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি এবং বাংলাদেশ সফরে আসা মার্কিন কূটনীতিক ডোনাল্ড লু আগামীতে জালিয়াতিমুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে তাদের দেশের দৃঢ় অবস্থান ব্যক্ত করায় ২০১৮ সালের নির্বাচনের অগ্রহণযোগ্যতার ব্যাপারটি আবারো সামনে চলে এসেছে। এ সম্পর্কে আওয়ামী লীগ যতই গলাবাজি করুক ওয়াকিবহাল মহল ঠিকই বুঝতে পারার কথা যে এই ব্যাপারটা আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তায় বিরাট ধস নামিয়েছে। তার কিছুটা আলামত আমরা দেখলাম রংপুর ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন মেয়র নির্বাচনে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি এই ফলাফলগুলোকে ব্যতিক্রমী বাস্তবতা মনে করেন তাহলে চরম ভুল করবেন, এটাই সারা দেশের আসল বাস্তবতা। অতএব, আগামী সংসদ নির্বাচন যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয় তাহলে একই রকম বিপর্যয় আওয়ামী লীগের জন্য হয়তো সারা দেশে অপেক্ষা করছে। সময় থাকতে দুর্নীতি, পুঁজিলুন্ঠন এবং পুঁজিপাচারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ না করলে ২০২৩/২০২৪ সালের নির্বাচনেও জালিয়াতি করা ছাড়া তাদের জয়ের কোন পথ খোলা থাকবে না। কিন্তু, এবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘ এরকম জালিয়াতি কোনমতেই মেনে নেবে না। এরকম আলামত দেখলে তাদের পক্ষ থেকে নির্বাচনের আগেই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানা নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হওয়ার আশংকা রয়েছে। এমনকি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী থেকে বাংলাদেশকে বাদ দেওয়াও হতে পারে।

আওয়ামী লীগের এবারের সাড়ে চৌদ্দ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রশংসনীয় গতিশীলতা সৃষ্টির পাশাপাশি দেশের কয়েক হাজার পুঁজিপতিদেরকে অস্বাভাবিক পৃষ্ঠপোষকতা প্রদানের অভিযোগ উঠেছে জোরেশোরে। ২০১২ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে বাংলাদেশ ধনাঢ্য সৃষ্টির ক্ষেত্রে ‘বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশীপ’ অর্জন করেছে বলে মার্কিন গবেষণা সংস্থা ‘ওয়েলথ এক্স’ তাদের ২০১৮ সালের প্রতিবেদনে দাবি করায় এক্ষেত্রে জনমনে দৃঢ় বিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে দুর্নীতিবাজ, পুঁজিলুটেরা এবং পুঁজিপাচারকারীদের দল হিসেবে চিহ্নিত করে হয়তো মন থেকে ঝেড়ে ফেলেছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণের অঙ্গীকার করেছিল। কিন্তু, গত সাড়ে চার বছরে দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রম একেবারেই ‘বাত্‌ কা বাতে’ পর্যবসিত হয়েছে। আমাদের স্মরণে আছে যে ২০০১ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত পরপর পাঁচ বছর বার্লিনভিত্তিক দুর্নীতি গবেষণা সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের বিশ্বর‌্যাংকিং অনুযায়ী বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তক্‌মা অর্জন করেছিল। ঐ পাঁচ বছরের মধ্যে প্রথম বছর ক্ষমতাসীন ছিল আওয়ামী লীগ, পরের চার বছর ক্ষমতাসীন ছিল বিএনপিজামায়াত জোট। এরপর সামরিক বাহিনীসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দু’বছরের শাসনামলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রচন্ড দমননীতি বাস্তবায়নের কারণে বাংলাদেশ ঐ ‘ন্যক্কারজনক চ্যাম্পিয়নশীপ’ থেকে নিষ্কৃতি পেয়েছিল। কিন্তু, ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতাসীন হয়ে পরিকল্পিতভাবে ঐ দুর্নীতিদমন অভিযানকে গলা টিপে মেরে ফেলার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে ‘নখদন্তহীন ব্যাঘ্রে’ পরিণত করেছে। ফলে, আবার দেশে দুর্নীতির তাণ্ডব পুরোদমে চালু হয়ে গেছে। ২০১৪ সাল থেকে গত নয় বছর ধরে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় আফগানিস্তানের পর সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তক্‌মা অর্জন করে চলেছে, সর্বশেষ বিশ্বর‌্যাংকিং অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত বারো নম্বর দেশ হিসেবেই নির্ণীত হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদিও দাবি করে থাকেন যে তাঁকে কেনা যায় না তবুও সাধারণ জনগণের মনে বিশ্বাস গেড়ে বসেছে যে দুর্নীতির ব্যাপকতায় বর্তমান সরকারের আমল বিএনপি ও জাতীয় পার্টির আমলকে ছাড়িয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অধিকাংশই গত সাড়ে চৌদ্দ বছরে ‘আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ’ হওয়ার ব্যাপারটা তৃণমূল পর্যায়ে জনগণের কাছে পুরোপুরি দৃশ্যমান। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের আত্মীয়স্বজন এবং উদার পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত ব্যবসায়ী ও আমলারা ‘ক্ষমতার আলাদীনের চেরাগ’ পেয়ে কোটিপতির কাতারে উত্তীর্ণ হওয়ার ব্যাপারটা লুকোনোর কোন উপায় আছে কি? দুর্নীতির অবশ্যম্ভাবী ফল হিসেবে বিদেশে পুঁজিপাচার এখন দেশের অর্থনীতির ‘এক নম্বর সমস্যায় পরিণত হয়েছে।

গত ৬ আগস্ট ২০২৩ তারিখে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ দেশের নেতৃস্থানীয় ইংরেজী দৈনিক সংবাদপত্র ‘ডেইলী স্টারে’ ৪ আগস্ট ২০২৩ তারিখে প্রকাশিত হেডলাইন সংবাদের সূত্র অনুসরণে একটি ‘সুয়ো মোটো’ রুল জারি করে দুর্নীতি দমন কমিশন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইনেন্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট এবং সিআইডিকে নির্দেশ দিয়েছেন যে চট্টগ্রামের এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম কিভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ব্যতিরেকে দেশ থেকে এক বিলিয়ন ডলারেরও বেশি বিদেশে পাচার করেছে সে সম্পর্কে তদন্ত প্রতিবেদন আগামী দু’মাসের মধ্যে হাই কোর্টে জমা দিতে হবে। ঐ আদেশে দি ডেইলী স্টারকেও তাদের প্রকাশিত সংবাদের সাথে সংশ্লিষ্ট সমস্ত নথিপত্র বেঞ্চে জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বহুদিন ধরে যে কথাগুলো আমি আমার সংবাদপত্রের কলামগুলোতে বলে চলেছি তার প্রত্যক্ষ সমর্থন হাইকোর্টের এই ‘সুয়ো মোটো’ বা স্বপ্রণোদিত রুলে পাওয়া গেলো। এর দু’দিনের মাথায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিক রিচার্ড নেফিও বাংলাদেশে এসে বলে গেলেন যে স্যাংশানকে তার দেশ দুর্নীতির বিরুদ্ধে হাতিয়ার হিসেবে বিবেচনা করে। অতএব, বাংলাদেশের বহু দুর্নীতিবাজ ও পুঁজিপাচারকারী ব্যক্তির বিরুদ্ধে অচিরেই ‘ভিসা নীতির’ নিষেধাজ্ঞা জারি হতে পারে। বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পুঁজিপাচারের সবচেয়ে বড় গন্তব্যের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ‘এক নম্বর’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অতএব, সম্পর্কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি সত্যিকারভাবে কঠোর দমন নীতি বাস্তবায়ন করতে শুরু করে তাহলে বাংলাদেশের বর্তমান সময়ের ‘এক নম্বর সমস্যা’ পুঁজিপাচার সম্পর্কে কিছুটা আশার আলো দেখা দিতেও পারে। এস আলম বাংলাদেশের সাতটি ব্যাংকের ওপর তার একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করে ফেলেছে বলে কয়েক বছর ধরে দেশের ওয়াকিবহাল মহল কর্তৃক অভিযোগ উত্থাপন সত্ত্বেও বাংলাদেশ ব্যাংক এব্যাপারে রহস্যজনক নীরবতা ও নিষ্ক্রিয়তা পালন করছে। (অভিযোগ রয়েছে যে বেনামী ঋণের মাধ্যমে এস আলম এই সাতটি ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা বাগিয়ে নিয়ে অবৈধভাবে বিদেশে পাচার করে দিয়েছে। সিঙ্গাপুরে এই অর্থের সিংহভাগ পাচার হয়েছে বলে মনে করা হয়, এস আলম নিজেও এখন সিঙ্গাপুরের অধিবাসী। একইসাথে সাইপ্রাস ও বৃটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডের নামও এসেছে এস আলমের পুঁজিপাচারের গন্তব্য হিসেবে)। সামিট গ্রুপের আজিজ খানও সম্প্রতি সিঙ্গাপুরের ৪২তম ধনকুবের হিসেবে অভিহিত হয়েছেন। তিনিও প্রায় এক বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাচার করেছেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। তিনিও সিঙ্গাপুরে বসবাস করছেন। শুধু এস আলম বা আজিজ খান ব্যতিক্রমী পুঁজিপাচারকারী নয়, এদেশ থেকে হাজার হাজার পুঁজিপাচারকারী বিদেশে পুঁজি পাচার করছে।

দেশ থেকে বিদেশে পুঁজিপাচার এখন অর্থনীতির সবচেয়ে বড় সংকটে পরিণত হয়েছে। ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে সরকারের ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি) এর বরাত দিয়ে দেশের পত্রপত্রিকায় খবর বেরিয়েছিল যে শুধু হুন্ডি প্রক্রিয়ায় দেশ থেকে বর্তমানে বছরে ৭৫ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। এর সাথে আমদানির ওভারইনভয়েসিং, রফতানির আন্ডারইনভয়েসিং এবং রফতানি আয় দেশে ফেরত না আনার মত মূল সমস্যাগুলো যোগ করলে দেখা যাবে প্রত্যেক বছর এখন কমপক্ষে ১৫/১৬ বিলিয়ন ডলার পুঁজি বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাচার হয়ে চলেছে (অথবা বিদেশে হুন্ডিওয়ালাদের কাছে বিক্রিত ডলার ও অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আসছে না, কিন্তু তার সমপরিমাণ টাকা হুন্ডিওয়ালাদেরকে প্রদানের মাধ্যমে দেশ থেকে বিদেশে হুন্ডি প্রক্রিয়ায় অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে), যার অর্ধেকের মত পাচার হচ্ছে হুন্ডি প্রক্রিয়ার বেলাগাম বিস্তারের মাধ্যমে। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন যে টালমাটাল অবস্থায় পৌঁছে গেছে সেটার জন্য প্রধানত দায়ী পুঁজিপাচার। পুঁজিপাচারের চাহিদার প্রধান গ্রাহক হলো দুর্নীতিবাজ আমলা, প্রকৌশলী, লুটেরা রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী এবং ব্যাংকঋণ গ্রহীতারা। হুন্ডি প্রক্রিয়ায় যে পঁচাত্তর হাজার কোটি টাকা পাচার হওয়ার দাবি করছে সরকারের ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি) তার সমপরিমাণ ডলার বা অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রার সিংহভাগ চাহিদাকারী ওপরে উল্লিখিত গোষ্ঠিগুলো। এই গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের আত্মীয়স্বজন এবং উদার পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত ব্যবসায়ী ও আমলারা যে উল্লেখযোগ্য অংশ হিসেবে পুঁজিপাচার করে দেশেবিদেশে আরামআয়েশে দিন গুজরান করছেন সেটাও বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তি বিপ্লবের ফসল সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে দেশেবিদেশে ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। টরোন্টোর বেগমপাড়া, সিডনির ফ্রেটারনিটি কিংবা মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোম এখন দেশে আলোচনার কেন্দ্রে অবস্থান করছে।

যে কথাটা বলতেই হবে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিকে ‘বাত্‌ কা বাত্‌’ বানিয়ে রেখে পুঁজিলুন্ঠন ও পুঁজিপাচার সমস্যার সমাধান পাওয়া যাবে না। অবশ্য, এটাও বলা প্রয়োজন এখন থেকে যদি সত্যিকারভাবে দুর্নীতি, পুঁজিলুন্ঠন এবং পুঁজিপাচারের বিরুদ্ধে বিশ্বাসযোগ্যভাবে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করা হয় তাহলে আগামী কয়েক মাসে আওয়ামী লীগের হারানো জনপ্রিয়তা কিছুটা পুনরুদ্ধার হতেও পারে। ২০০৭ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত সামরিক বাহিনীসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার যে অভূতপূর্ব জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল তার জন্য এককভাবে দায়ী ছিল ঐ সরকারের সফল দুর্নীতিদমন অভিযান। মানুষের কাছে দুর্র্নীতি ও পুঁজিলুন্ঠনের জন্য চিহ্নিত হোমরাচোমড়াদেরকে ঐ সময় যেভাবে নাকানিচুবানি খেতে হয়েছিল সেটা এখনো আমরা ভুলে যাইনি, আওয়ামী লীগের নেতাদেরও ভুলে যাওয়ার কথা নয়। ঐ ধরনের আরেকটি অভিযান যদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবিলম্বে শুরু করেন তাহলে তাঁর নেতৃত্বে অর্জিত দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি, মাথাপিছু জিডিপি’র প্রসার এবং ২০২২ সাল ও ২০২৩ সালে বাস্তবায়িত মেগাপ্রজেক্টগুলোর সুফল তিনি আগামী নির্বাচনে ঘরে তুলতে সক্ষম হবেন বলে আমার বিশ্বাস। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের শীর্ষনেতৃত্ব যদি ভেবে থাকেন যে ২০১৮ সালের মত আবারো ব্যালটজালিয়াতি বা ভোটকেন্দ্র দখল করে তাঁরা বাজিমাত করবেন তাহলে চরম ভুল হবে। ব্যাপারটা দেশেবিদেশে ‘আনচ্যালেঞ্জড্‌’ যাবে না। ইতোমধ্যেই বিরোধী দলগুলোর আন্দোলনের পালে হাওয়া লাগার ব্যাপারটি কি অস্বীকার করা যাবে? আমার আশংকা, এফবিসিসিআই নেতৃবৃন্দের সমর্থন সত্ত্বেও এবার আওয়ামী লীগের খবর আছে। ভারতের কৃপাধন্য হলেও এবার সহজে পার পাওয়া যাবে না। ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে বিএনপি’র মিছিলগুলো যে অনেক বেশি বড় হয়ে উঠেছে সেটা কি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর চোখে পড়ছে না? আগামী দিনগুলোতে দেশে রাজনৈতিক সংঘাত মারাত্মকভাবে বেড়ে যাওয়ার ব্যাপারটা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। সাধু সাবধান!

লেখক : সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি, একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ও অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

পূর্ববর্তী নিবন্ধকংগ্রেস-মুসলিম লীগের চেয়েও আওয়ামী লীগের সাফল্য বেশি
পরবর্তী নিবন্ধমাতামুহুরী নদীতে অজ্ঞাত যুবকের লাশ