ডায়রিয়া রোগীদের আরেক বিপদ কিডনি জটিলতা

মে মাসে ডায়রিয়া আক্রান্ত অর্ধশত রোগী ভর্তি কিডনি ওয়ার্ডে শরীরে যাতে পানিশূন্যতা দেখা না দেয় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকার পরামর্শ

রতন বড়ুয়া | মঙ্গলবার , ৬ জুন, ২০২৩ at ৫:১৩ পূর্বাহ্ণ

ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদের আরেক বিপদ হিসেবে দেখা দিয়েছে কিডনি জটিলতা। রোগীদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশের কিডনিও আক্রান্ত হচ্ছে। এটিকে সাময়িক কিডনি বিকলতা বা একিউট কিডনি ইনজুরি (একেআই) বলছেন চিকিৎসকরা। ডায়রিয়ায় ভোগার পাশাপাশি কিডনি জটিলতায় (একেআই) আক্রান্ত প্রায় অর্ধশত রোগী কিডনি ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছে গত এক মাসে (মে মাসে)। যা উদ্বেগজনক হিসেবে দেখছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের কিডনি ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা। ডায়রিয়া রোগীদের কিডনি আক্রান্ত হওয়ার বিষয়ে চিকিৎসকরা বলছেনডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণ পানি বের হয়ে যায়। পানির সাথে লবণও বের হয়ে যায়। এতে করে রোগীর শরীরে পানি শূন্যতা দেখা দেয়। আর পানি শূন্যতার কারণে কিডনি সাময়িক বিকল হয়ে যেতে পারে। ডায়রিয়া রোগীদের একেআই বা সাময়িক কিডনি বিকলতায় আক্রান্ত হওয়ার এটাই অন্যতম কারণ। তাই শরীরে যাতে পানিশূন্যতা দেখা না দেয় বা সৃষ্টি না হয়, সেক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

কিডনি ওয়ার্ড সূত্রে জানা গেছে, স্বাভাবিক সময়ে ডায়রিয়া রোগীদের মধ্যে একেআই (সাময়িক কিডনি বিকলতা) আক্রান্ত হয়ে মাসে সর্বোচ্চ ৮/১০ জন রোগী ভর্তি হয় কিডনি ওয়ার্ডে। তবে গত এপ্রিল থেকে এই সংখ্যা বাড়তে শুরু করে। সদ্য সমাপ্ত মে মাসে এই সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যায়। গত এক মাসে ডায়রিয়া আক্রান্ত ৪৬ জন রোগী কিডনি ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছেন। যারা ডায়রিয়ায় ভোগার পাশাপাশি সাময়িক কিডনি বিকলতা বা একেআইতে আক্রান্ত হন। এই ৪৬ জনের মধ্যে ১২ রোগীকে ডায়ালাইসিস করাতে হয়েছে। ডায়রিয়া রোগীদের মধ্য থেকে একেআই আক্রান্তের সংখ্যা যে হারে বাড়ছে তা আশঙ্কাজনক বলে মন্তব্য করেছেন চমেক হাসপাতালের কিডনি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. নুরুল হুদা। তিনি বলেন, অন্যান্য সময়েও ডায়রিয়া রোগীদের মধ্য থেকে একেআই আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়। তবে এর সংখ্যা মাসে ১০ জনের বেশি নয়। কিন্তু মে এক মাসেই প্রায় অর্ধশত রোগী এ জটিলতায় আক্রান্ত হয়ে ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছেন। যা অনেক বেশি। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলেও অনেকে কিডনি আক্রান্তের বিষয়টি বুঝতেও পারেন না। তারা কিন্তু কিডনি ওয়ার্ডে আসছেন না। তাই এ ধরণের রোগীর প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে বলে মনে করেন কিডনি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. নুরুল হুদা।

সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদের হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি দেয়া হয়। সেখানেই তাদের চিকিৎসা চলে। তবে কিডনি আক্রান্তের বিষয়টি ধরা পড়লে ওই রোগীকে কিডনি ওয়ার্ডে রেফার্ড করা হয়ে থাকে। মেডিসিন ওয়ার্ড থেকে রেফার্ড করার পরও অনেক রোগী কিডনি ওয়ার্ডে ভর্তি হন না বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। অথচ সঠিক সময়ে যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত হলে একেআই (সাময়িক কিডনি বিকলতায়) আক্রান্তরা সুস্থ হয়ে উঠেন বলেও জানান চিকিৎসকরা। ডায়রিয়া রোগীদের মধ্যে একেআই আক্রান্তদের তথ্যউপাত্ত সংগ্রহ করছেন চমেক হাসপাতালের কিডনি ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা। এ তথ্য নিশ্চিত করে কিডনি ওয়ার্ডের রেজিস্ট্রার ডা. বিপ্লব কুমার বড়ুয়া আজাদীকে বলেন, মে মাসে ভর্তি হওয়া ৪৬ জনের মধ্যে ১২ জনকে ডায়ালাইসিস করাতে হয়েছে। এর ৬ জন সম্পূর্ণ নতুন করে কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। আর ৬ জন আগে থেকেই আক্রান্ত। চলতি জুনের প্রথম ৪/৫ দিনেও ৪ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন বলে জানান ডা. বিপ্লব কুমার বড়ুয়া।

কিডনি রোগ ও কারণ : চিকিৎসকরা বলছেনকিডনি রোগ প্রধানত দুই প্রকার। সাময়িক কিডনি বিকলতা (একেআই) এবং দীর্ঘস্থায়ী কিডনি বিকলতা (সিকেডি)। একেআই আক্রান্তের কারণের মধ্যে রয়েছেডায়রিয়া, বমি, পানি শূন্যতা, ইনফেকশন, সেফসিস, নেফ্রাইটিস, অতিরিক্ত রক্ষক্ষরণ বা রক্তচাপ কমে যাওয়া, অতিরিক্ত এন্টিবায়োটিক ও ব্যথানাশক ওষুধের ব্যবহার, কিডনিতে পাথর বা প্রোস্টেটের কারণে হঠাৎ প্রস্রাব আটকে যাওয়া, গর্ভবতী মহিলাদের প্রসবজনিত জটিলতা ও শরীরের মাংস পেশীতে অতিরিক্ত আঘাত। এসবই সাময়িক কিডনি বিকলতায় আক্রান্তের কারণ বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। আর দীর্ঘস্থায়ী কিডনি বিকলতার কারণসমূহের মধ্যে রয়েছেডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনির প্রদাহ, বংশগত বা জন্মগত অসুখ (যেমনপলিসিস্টিক কিডনি ডিজিজ), বারবার কিডনিতে ইনফেকশন, কিডনিতে পাথরজনিত জটিলতা, দীর্ঘস্থায়ী ব্যথানাশক ওষুধের ব্যবহার।

লক্ষণ : কিছু লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা দিলে কিডনি রোগ মর্মে সন্দেহ করে থাকেন চিকিৎসকরা। এসব লক্ষণের মধ্যে রয়েছেশরীর ফুলে যাওয়া, ক্ষুধামন্দা, খাবার অরুচি, বমি বমি ভাব, প্রস্রাব লাল হওয়া, বার বার প্রস্রাবের বেগ অনুভব, প্রস্রাবে জ্বালা পোড়া, দীর্ঘ দিন উচ্চ রক্তচাপে ভোগা অথবা হঠাৎ উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হওয়া, দুর্বলতা বা রক্তশূন্যতা, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া অথবা বেড়ে যাওয়া, শ্বাসপ্রশ্বাসের কষ্ট, শরীর চুলকানো, কোমরে ব্যথা অনুভব করা, বংশগত কিডনি রোগ থাকা। তবে কোনো প্রকার লক্ষণ ছাড়াও কিডনি রোগ হতে পারে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত হলে যথাযথ চিকিৎসায় সাময়িক কিডনি বিকলতা থেকে রোগীরা সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন বলে জানান অধ্যাপক ডা. নুরুল হুদা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআনোয়ারায় মাটি কাটা ও অবৈধ দখল বন্ধে প্রশাসনকে ভূমিমন্ত্রীর নির্দেশ
পরবর্তী নিবন্ধমিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে রাজি চার রোহিঙ্গা পরিবারের খাদ্য সহায়তা বন্ধ