ট্রাম্প-বাইডেন প্রথম বিতর্ক চরম বিশৃঙ্খল বিদ্বেষপূর্ণ

আজাদী ডেস্ক | বৃহস্পতিবার , ১ অক্টোবর, ২০২০ at ৫:১০ পূর্বাহ্ণ

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহ আগে প্রথম মুখোমুখি বিতর্কে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী জো বাইডেন একে অপরকে কদর্যভাবে আক্রমণ করেছেন। গত মঙ্গলবার রাতে ওহাইও’র ক্লিভল্যান্ডে দুই প্রার্থী ৯০ মিনিট ধরে চলা বিতর্কে যেভাবে তর্কে লিপ্ত হয়েছিলেন তাকে হোয়াইট হাউসে যাওয়ার দৌড়ে প্রার্থীদের মধ্যে অনেক বছর ধরে হওয়া বিতর্কগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিশৃঙ্খল ও বিদ্বেষপূর্ণ বলা হচ্ছে। ক্রুদ্ধ চিৎকার ও নাম ধরে ডেকে দুই প্রার্থী করোনাভাইরাস মহামারী, শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদ ও অর্থনীতিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে একে অপরকে আক্রমণ করেছেন।

বিবিসি জানিয়েছে, প্রথম এ নির্বাচনী বিতর্কে বাইডেন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টকে ‘ভাঁড়’ বলে অ্যাখ্যা দিয়েছেন, বলেছেন ‘চুপ করতে’। ট্রাম্পও কম যাননি, তিনি তুলেছিলেন বাইডেনের ছেলের মাদক ব্যবহারের প্রসঙ্গ। সামপ্রতিক বিভিন্ন জনমত জরিপে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী বাইডেনকে রিপাবলিকান ট্রাম্পের চেয়ে সামান্য এগিয়ে থাকতে দেখা গেলেও গুরুত্বপূর্ণ কিছু ব্যাটলগ্রাউন্ডে দুজনের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারে বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। ক্লিভল্যান্ডের এ নির্বাচনী বিতর্কে প্রার্থীদের অতীত কর্মকাণ্ড, সুপ্রিম কোর্ট, মহামারী, বর্ণবৈষম্য, নির্বাচনী অখণ্ডতা ও অর্থনীতিএ ৬টি বিষয়ের প্রত্যেকটির জন্য ১৫ মিনিট করে আলোচনার সুযোগ রাখা ছিল। বিতর্কের এক পর্যায়ে ৭৭ বছর বয়সী বাইডেনকে ৭৪ বছর বয়সী ট্রাম্পের উদ্দেশ্যে অপমানসূচক নানা বাক্যবাণও ছুড়তে দেখা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বাজে প্রেসিডেন্ট আপনি, রিপাবলিকান প্রার্থীকে উদ্দেশ্য করে বলেন বাইডেন।

বিতর্কের এক পর্যায়ে সঞ্চালক ট্রাম্পের কাছে তিনি ‘শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীদের’ নিন্দা জানানোর জন্য প্রস্তুত কিনা, এমন প্রশ্ন ছুড়লে দুই প্রার্থীর দ্বৈরথ জমে ওঠে। ট্রাম্প শুরুতে শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীদের নিন্দা জানাবেন আশ্বাস দিলেও যখন কট্টর ডানপন্থি গোষ্ঠী ‘প্রাউড বয়েজ’ এর নাম ধরে নিন্দা জানানোর প্রস্তাব ওঠে, তখন তিনি পাশ কাটিয়ে যান। প্রাউড বয়েজ, পিছু হটো এবং অপেক্ষা করো। কিন্তু আমি আপনাকে বলতে চাই, কারো না কারো অবশ্যই অ্যান্টিফা (যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাসিবিরোধী আন্দোলন) ও বামদের নিয়ে কিছু করতে হবে, বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এর আগে বাইডেন ট্রাম্পকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ইনি এমন একজন প্রেসিডেন্ট যিনি জাতিগত বিদ্বেষ, জাতিগত বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টায় কুকুরকে শিষ দিয়ে ডাকার মতো সবকিছুকে ব্যবহার করেছেন। এর পাল্টায় ট্রাম্প বাইডেনের ১৯৯৪ সালের ক্রাইম বিল সমর্থনের প্রসঙ্গ টানেন; বলেন, সেসময় ডেমোক্র্যাট প্রার্থী আফ্রিকানআমেরিকানদেরকে ‘ভয়াবহ শিকারি’ অ্যাখ্যা দিয়েছিলেন। ট্রাম্পের এ অভিযোগ অস্বীকার করেন বাইডেন। খবর বিডিনিউজের।

আইনশৃক্সখলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর তহবিল কাঁটছাঁটের প্রস্তাবে সমর্থন জানানো ডেমোক্র্যাট প্রার্থীকে উসকে দিয়ে ট্রাম্প আরও বলেন, আপনি এমনকি ‘আইন প্রয়োগকারী’ এ শব্দগুলোও উচ্চারণ করতে পারবেন না, কেননা তাহলে আপনি আপনার উগ্র বাম সমর্থকদের হারাবেন। করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে কেইস ওয়েস্টার্ন রিজার্ভ ইউনিভার্সিটিতে হওয়া এই বিতর্কে দর্শকসারিতে উপস্থিত ছিলেন অল্প কয়েকজন; তাদেরকে বসতে হয়েছে সামাজিক দূরত্ব মেনে। ভাইরাসজনিত সতর্কতার কারণে রীতি অনুযায়ী দুই প্রার্থীর মধ্যে হাত মেলানোর পর্বও বাদ রাখা হয়। বিতর্কে বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রে ২ লাখের বেশি প্রাণ কেড়ে নেওয়া করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবেলায় ট্রাম্পের নেতৃত্বের ব্যর্থতার কড়া সমালোচনা করেন। হয় তিনি আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন অথবা তিনি শেয়ার বাজারের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। অনেক মানুষ মারা গেছে, আরও মারা যাবে যদি না তিনি দ্রুত আরেকটু স্মার্ট হন, অর্থনীতি সচলে বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার সমর্থক ট্রাম্পকে উদ্দেশ্য করে বলেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী। বাইডনের ‘স্মার্ট’ শব্দ ব্যবহারে আপত্তি জানান ট্রাম্প। বলেন, আপনি হয় ক্লাসের সবচেয়ে খারাপ কিংবা তার কাছাকাছি ধরনের ছাত্র হিসেবে ডিগ্রি নিয়েছেন। কখনো স্মার্ট শব্দটা আমার সামনে উচ্চারণ করবেন না। কখনো করবেন না।

বিবিসি জানিয়েছে, স্থানীয় কর্তৃপক্ষের দেওয়া বিধিনিষেধ অনুযায়ী বিতর্ককক্ষে উপস্থিত সবার মুখে মাস্ক থাকার কথা থাকলেও ট্রাম্পের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কেবল ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পকে বিতর্ক চলাকালে মাস্কে মুখ ঢেকে রাখতে দেখা গেছে।

স্বাস্থ্যসেবা ইস্যুতে বাইডেন ডেমোক্র্যাট পার্টির সোশালিস্টদের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন বলেও বিতর্কে অভিযোগ করেন ট্রাম্প। বলেন, তারা আপনার উপর আধিপত্য করতে যাচ্ছে, জো, আপনি জানেন সেটা। জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেন, এখন আমিই ডেমোক্র্যাটিক পার্টি। বাইডেন মার্কিন প্রেসিডেন্টকে ‘মিথ্যাবাদী’ বলেও অ্যাখ্যা দেন। সবাই জানে সে মিথ্যাবাদী, বলেন তিনি।

ট্রাম্প এরপর যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টে প্রয়াত বিচারপতি গিন্সবার্গের শূন্য আসন দ্রুত পূরণের সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি দেন। নির্বাচিত হলে বাইডেন কাকে কাকে সর্বোচ্চ আদালতের বিচারক বানাতে চান, ডেমোক্র্যাট প্রার্থীর কাছে তার তালিকাও চান ট্রাম্প। বারাক ওবামা আমলে ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করা বাইডেন অবশ্য ট্রাম্পের ‘ফাঁদে পা দেন নি’। উল্টো নিয়মিত তার বক্তৃতার সময়ে হস্তক্ষেপ ও কথা বলায় রিপাবলিকান প্রার্থীর বিরুদ্ধে চটে যান তিনি। এক পর্যায়ে ডেমোক্র্যাট প্রার্থীর আক্রমণ আরও ধারালো হয়ে ওঠে, তিনি বলেন, এই ভাঁড়ের সঙ্গে কোনো কথা বলা কঠিন, এই লোকটির সঙ্গে। ট্রাম্পকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ‘কুকুরছানা’ বলেও টিটকারি করেন বাইডেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট একদা সেনাবাহিনীর সদস্যদের ‘লুজার’ বলেছিলেন বলে অজ্ঞাত সূত্রের বরাত দিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে সে প্রসঙ্গে নিজের রিপাবলিকান প্রার্থীর কথার মধ্যেই বাইডেন চিৎকার করে বলেন, আরও অনেকের মতো আমার ছেলেরও মাদক সংক্রান্ত সমস্যা ছিল। সে অতিরিক্ত মাত্রায় নিতো। সে তা কাটিয়ে উঠেছে। সে এটা নিয়ে কাজ করছে এবং আমি তাকে নিয়ে গর্বিত।

সিএনএনের জরিপে এগিয়ে বাইডেন : এদিকে বিতর্ক চলাকালে মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন দর্শকদের সামনে রাখা প্রশ্নের মাধ্যমে তাঁদের মতামত জানার চেষ্টা করে। এ ক্ষেত্রে তারা এসএসআরএস প্রযুক্তি ব্যবহার করে। এতে দেখা যায়, সরাসরি বিতর্ক দেখেছেন এমন ভোটারদের মধ্যে ৬০ শতাংশই মনে করেন, প্রথম নির্বাচনী বিতর্কে জো বাইডেন জয়ী হয়েছেন। আর ট্রাম্প জয়ী হয়েছেন বলে মনে করেন ২৮ শতাংশ ভোটার। এই ফল আগের নির্বাচনের সময় হিলারি ক্লিনটন ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে হওয়া প্রথম প্রেসিডেনশিয়াল বিতর্কের পর পরিচালিত জরিপের ফলের অনুরূপ বলা চলে। ২০১৬ সালের প্রথম প্রেসিডেনশিয়াল বিতর্কের পর পরিচালিত জরিপে ৬২ শতাংশ ভোটার হিলারি জয়ী হয়েছেন বলে মত দিয়েছিলেন। বিপরীতে ট্রাম্পকে বিজয়ী মনে করেছিলেন ২৭ শতাংশ ভোটার।

সিএনএনের জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে নির্দলীয় ভোটার হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন ৩৬ শতাংশ, সাধারণভাবে যা ৪০ শতাংশের মতো। শুধু তাই নয়, বিতর্কের দর্শকদের মধ্যে ডেমোক্র্যাটদের সংখ্যাই বেশি। সিএনএনের জরিপে অংশ নেওয়া নিবন্ধিত ভোটারদের ৩৯ শতাংশই ছিল ডেমোক্রেটিক পার্টির সমর্থক। অন্যদিকে ট্রাম্পের সমর্থক ছিল ২৫ শতাংশ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশুভ প্রবারণা পূর্ণিমা আজ
পরবর্তী নিবন্ধঅবৈধ পার্কিং ও সড়কে অলস গাড়ি নিয়ে সুজনের ক্ষোভ