টিকা কেন্দ্রে ভিড়, অচলাবস্থা

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১১ জানুয়ারি, ২০২২ at ৭:৪৫ পূর্বাহ্ণ

১২-১৮ বছরের শিক্ষার্থীদের দ্রুত সময়ের মধ্যে করোনার টিকার আওতায় আনতে গতকাল সোমবার থেকে নগরীর তিনটি কমিউনিটি সেন্টারে টিকাদান শুরু হয়েছে চট্টগ্রামে। এই তিন কমিউনিটি সেন্টারের মধ্যে রয়েছে আসকারদীঘির রীমা কনভেনশন সেন্টার, সিরাজউদ্দৌল্লা রোডের হল সেভেন-ইলাভেন ও আগ্রাবাদ এক্সেস রোডের আব্দুল্লাহ কমিউনিটি সেন্টার। এর মধ্যে রীমা কনভেনশন ও আব্দুল্লাহ কমিউনিটি সেন্টারে ১০ হাজার করে এবং হল সেভেন-ইলাভেনে ৫ হাজারসহ তিনটি সেন্টারে মোট ২৫ হাজার শিক্ষার্থীকে গতকাল সোমবার একদিনে টিকা প্রয়োগে সিডিউল করা হয়। সকালে টিকাদান শুরুর আগে থেকেই কমিউনিটি সেন্টারের সামনে জড়ো হতে শুরু করে শিক্ষার্থীরা। একই সময়ে বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থী জড়ো হওয়ায় এই তিন কেন্দ্রের বাইরে শিক্ষার্থীদের বড় ধরনের ভিড় জমে যায়। কমিউনিটি সেন্টার ছাড়িয়ে রাস্তায়ও শিক্ষার্থীদের জটলা সৃষ্টি হয়। শিক্ষার্থীদের সাথে অভিভাবকরা আসায় এই ভিড় আরো বাড়ে।
এতে করে আশপাশের এলাকাজুড়ে দীর্ঘ যানজট লেগে যায়। বন্ধ হয়ে যায় রাস্তার এক পাশ। চলাচলও অনেকটা স্থবির হয়ে পড়ে। ফলে সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়তে হয় মানুষজনকে। তিন কেন্দ্রের আশেপাশেই এমন অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। তবে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির পাশাপাশি ঝুঁকিতে পড়তে হয়েছে শিক্ষার্থীদেরও। বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থী একই সাথে জড়ো হওয়ায় স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের সুযোগ ছিলনা। প্রচণ্ড জটলায় অনেকটা গাদাগাদি করেই ছিল শিক্ষার্থীরা। অনেকের মুখে মাস্কও দেখা যায়নি। এতে করে টিকা নিতে এসে করোনায় আক্রান্তের ঝুঁকিতে পড়তে হয়েছে বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থীকে। এমন অব্যবস্থাপনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিভাবক ও পথচারীরা। তাঁরা বলছেন, একই সাথে এত বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থীকে কেন্দ্রে জড়ো করে টিকাদানের সিদ্ধান্ত সুবিবেচনাপ্রসূত হয়নি। এখন উল্টো শিক্ষার্থীরাও আক্রান্তের ঝুঁকিতে পড়েছে। মানুষের দুর্ভোগ তো ছিলই। কর্তৃপক্ষ চাইলে আরো আগে থেকেই কেন্দ্র সংখ্যা বৃদ্ধি করে শিক্ষার্থীদের টিকাদানের পরিসর বাড়াতে পারতেন। সেটি হলে একটি কেন্দ্রে একই সাথে দশ হাজার শিক্ষার্থীকে আনার প্রয়োজন পড়তো না। মানুষকেও এভাবে ভোগান্তিতে পড়তে হতো না।
মনির হোসেন নামে হালিশহর এলাকার এক অভিভাবক বলছেন, টিকা নিতে সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া তার ছেলেটি সকাল সাড়ে আটটায় বাসা থেকে বের হয়। কিন্তু টিকা নিয়ে ফিরতে পেরেছে বিকাল ৩টার পর। তার অভিমত স্কুলে স্কুলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের টিকাদানের ব্যবস্থা করলে সবচেয়ে ভালো হতো। মানুষকে দুর্ভোগে পড়তে হতো না। শিক্ষার্থীদেরও ঝুঁকিতে পড়তে হতো না।
সিভিল সার্জন কার্যালয় জানিয়েছে, তিন কমিউনিটি সেন্টারে প্রথম দিন ২৫ হাজার শিক্ষার্থীকে টিকাদানের টার্গেট থাকলেও টিকা নিয়েছে ১৭ হাজার ৭০৬ শিক্ষার্থী। আরো ৭ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী টিকা নিতে আসেনি।
একই সাথে বেশি সংখ্যায় শিক্ষার্থীকে টিকা প্রয়োগের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে কিছুটা জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন চট্টগ্রামের জেলা শিক্ষা অফিসার ফরিদুল আলম হোসাইনী ও চট্টগ্রামের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মো. আসিফ খান। তবে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে সব শিক্ষার্থীকে টিকার আওতায় আনার নির্দেশনার প্রেক্ষিতে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয় জানিয়ে এই দুই কর্মকর্তা বলছেন- টিকা না নেয়া ১২-১৮ বছরের কোনো শিক্ষার্থী ১৫ জানুয়ারির পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শ্রেণি কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেনা মর্মে মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা ছিল। যার ফলে কম সময়ের মধ্যে বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থীকে টিকার আওতায় আনতে কমিউনিটি সেন্টারে টিকান্ন কেন্দ্র স্থাপন এবং একই সাথে বেশি সংখ্যায় শিক্ষার্থীকে টিকা প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কম সময়ের মধ্যে অধিকাংশ শিক্ষার্থীকে টিকার আওতায় আনতেই মূলত এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
জেলা শিক্ষা অফিসার ফরিদুল আলম হোসাইনীর দাবি, স্কুল ভিত্তিক আলাদা আলাদা সময় নির্ধারণ করে কেন্দ্রে আসতে বলে দেয়া হয়। কিন্তু কারা যেন গুজব ছড়িয়েছে যে, টিকা শেষ হয়ে যাবে। মঙ্গলবার থেকে আর টিকা পাওয়া যাবে না। যার কারণে সব শিক্ষার্থী একই সময়ে কেন্দ্রে জড়ো হয়ে যায়। এতে করে কিছু জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। তবে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় আনার যে নির্দেশনা ছিল, তা সোমবার বাড়িয়ে ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত করা হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। এর ফলে শিক্ষার্থীদের টিকাদানে আমরা আরো সময় পাচ্ছি। কেন্দ্রগুলোতে এখন শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমিয়ে টিকা দেয়া যাবে। আর কেন্দ্র বাড়ানোর কথা জানিয়ে ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মো. আসিফ খান বলেন, শিক্ষার্থীদের ফাইজারের টিকা দেয়া হচ্ছে। ফাইজারের এ টিকা প্রয়োগে বেশ কিছু নিয়ম-নীতি মানতে হয়। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) কক্ষ ও জেনারেটর সুবিধা ছাড়া এই টিকা প্রয়োগ করা যায় না। তাই চাইলেই সব স্কুলে টিকা প্রয়োগের সুযোগ নেই। এসি ও জেনারেটর সুবিধা থাকা নগরের বেশ কয়টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত টিকাদান চলছে।
প্রসঙ্গত, শুরুতে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের টিকা প্রয়োগের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয় চট্টগ্রামে। গত ১৬ নভেম্বর থেকে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের এ টিকাদান শুরু হয়েছে। পরবর্তীতে ১২-১৭ বছরের শিক্ষার্থীদের করোনার টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয় গত ৯ ডিসেম্বর। শুরুতে কেবল মহানগরের শিক্ষার্থীদের এ টিকা দেয়া হয়। তবে মহানগরের পর গত শনিবার (৮ জানুয়ারি) থেকে চট্টগ্রামের উপেজলা পর্যায়েও শিক্ষার্থীদের করোনার টিকাদান শুরু হয়েছে।
তবে মহানগরের বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থীকে দ্রুত সময়ের মধ্যে টিকার আওতায় আনতে কমিউনিটি সেন্টারে টিকা প্রয়োগেরে সিদ্ধান্ত নেয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআমাদেরকে মানুষের ভাগ্য গড়তে হবে : প্রধানমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধইপিজেডে আশা মনি হত্যা মামলায় স্বামীর যাবজ্জীবন