জুয়ার টাকা যোগাতে প্রতারণার ফাঁদ

২১ জনের কাছ থেকে হাতিয়ে নিলেন ২০ লাখ টাকা জেল খেটেও যায়নি নেশা, আবার গ্রেপ্তার

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২ ডিসেম্বর, ২০২০ at ৫:৫৪ পূর্বাহ্ণ

পেশায় তিনি জাহাজের নাবিক আর নেশা হলো অনলাইনে জুয়া খেলা। জুয়ার টাকা যোগাতে তিনি একটি শিপিং প্রতিষ্ঠানের নাম, সিল, ইমেইল অ্যাড্রেসসহ যাবতীয় ঠিকানা ব্যবহার করে প্রতারণার ফাঁদ পাতেন। সেই ফাঁদে পা দিয়ে শিকার ধরা দিতে থাকে একে একে। জাহাজে চাকরি পাওয়ার আশায় কেউ ক্ষেতের জমি বিক্রি করে, কেউ বাবার পেনশনের সবটুকু টাকা ঢেলে, কেউ আবার বোনের বিয়ের জন্য রাখা অর্থ পাঠিয়ে এগ্রিমেন্ট করেন। অপেক্ষায় থাকেন অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটারের জন্য। কিন্তু সেই লেটার আর আসে না। টাকা হারিয়ে কারো বোনের বিয়ে আটকে যায়, কারো বাবা টাকার শোকে স্ট্রোক করে বিছানায় শয্যাশায়ী হন।
২০১৯ সালে একবার হালিশহর থানায় তিনি ৮ থেকে ১০ জন যুবকের কাছ থেকে জাহাজে চাকরি দেয়ার নাম করে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। সেবার ৩১ দিন জেলও খাটতে হয় তাকে। কিন্তু নেশা তার যায়নি। তাই গত ২০ দিনে ২১ জন থেকে তিনি হাতিয়ে নিয়েছেন প্রায় ২০ লাখ টাকা। প্রতারক শাহাদাত হোসেন রিয়াদ কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম এলাকার অহিদুর রহমানের ছেলে। নগরীর হালিশহরের কর্ণফুলী আবাসিক এলাকার একটি ভাড়া বাসায় থাকেন তিনি। পেশায় তিনি একজন নাবিক ছিলেন। কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন আজাদীকে বলেন, জাহাজে বিভিন্ন পদে চাকরি দেয়ার নাম করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের যুবকদের থেকে শাহাদাত হোসেন হাতিয়ে নিয়েছেন টাকা। এজন্য তিনি কম্পাস শিপিং সার্ভিস নামে একটি প্রতিষ্ঠানের লোগো ও প্যাড ব্যবহার করতেন। এমন প্রতারণার অভিযোগে গত ৩০ নভেম্বর সোমবার সন্ধ্যায় নগরীর নিউ মার্কেটে কম্পাস শিপিং সার্ভিস নামে ওই প্রতিষ্ঠান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর আগে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ পেয়ে কৌশলে তাকে অফিসে ডেকে আনেন প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার মো. মিজানুর রহমান। এ ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। সেটিতে তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
শাহাদাত হোসেন রিয়াদ প্রতারণা করে টাকা নিয়েছেন এমন ২১ জন তার গ্রেপ্তারের সংবাদ পেয়ে কোতোয়ালী থানায় হাজির হয়েছিলেন গতকাল। তাদের মধ্যে আমিনুল ৬০ হাজার টাকা, রাশু এক লক্ষ টাকা, রাকিব এক লাখ ৬৪ হাজার টাকা, বিজয় বড়ুয়া ৬০ হাজার টাকা, সিফাত ৬০ হাজার টাকা, রশিদ ৬০ হাজার টাকা, রহিম এক লক্ষ ৬০ হাজার টাকা, হাসিবুল এক লক্ষ ৭৭ হাজার টাকা, রাজিব ৬০ হাজার টাকা, সাব্বির ৬০ হাজার টাকা, রওনক ৬০ হাজার টাকা, সাজ্জাদ ৬০ হাজার টাকা, তুষার ইমরান ৯২ হাজার টাকা, তারেক ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা, বাকের ১ লাখ ১০ হাজার টাকা, হাবিব এক লাখ ৬০ হাজার টাকা, ওমর এক লাখ ২০ হাজার টাকা, জহিরুল ৮০ হাজার টাকা, আবু সায়েদ ৪০ হাজার টাকা, সেলিম ৪০ হাজার টাকা ও ওমর ফারুক এক লাখ ৭০ হাজার টাকা দিয়েছেন তাকে।
ভুক্তভোগীরা গতকাল বিকেলে আজাদীকে জানান, তারা অধিকাংশই চট্টগ্রামের ন্যাশনাল মেরিটাইম ইনস্টিটিউট নামে একটি প্রতিষ্ঠানের ছাত্র। প্রতারক শাহাদাতও ওই প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেন। গত ২০ দিনের মধ্যে এরা সবাই শাহাদাতের কাছে প্রতারিত হয়েছেন। চাকরি দেয়ার নাম করে নগদ, বিকাশ ও ব্যাংকের মাধ্যমে তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করেন শাহাদাত। চাকরি না পেয়ে বারবার শাহাদাত হোসেনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেন তারা। কিন্তু তাকে পাওয়া যাচ্ছিল না। এক পর্যায়ে তারা শাহাদাতের দেওয়া এপয়েনমেন্ট অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটিতে যোগাযোগ করেন। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন শাহাদাত একজন প্রতারক। পরে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা কৌশলে তাকে সেখানে ডেকে এনে পুলিশে দেয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধসরকারি নির্দেশনার বাইরে ফি নিলে ব্যবস্থা : সুজন