জীবন যুদ্ধে হেরে গেলেন এসিড দগ্ধ ইয়াসমিন

রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি | রবিবার , ১৫ মে, ২০২২ at ৫:০৫ পূর্বাহ্ণ

রাঙ্গুনিয়ায় এসিডে ঝলসে যাওয়া ইয়াসমিন আক্তার (২০) মারা গেছেন। কথিত প্রেমিক নুরুল আজিমের (২৮) ছোড়া এসিডে গত ১০ দিন ধরে জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করছিল ইয়াসমিন। অবশেষে গতকাল শনিবার বিকালে ঢাকা শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। সে উপজেলার বেতাগী ইউনিয়নের ডিঙ্গেল লোংগা এলাকার আবুল বাশারের মেয়ে। ঘটনার পর পরই তার প্রেমিক নুরুল আজিমকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অভিযুক্ত আজিম রাঙ্গামাটি জেলার চন্দ্রঘোনা থানাধীন রাইখালী ইউনিয়নের খন্তকাটা গ্রামের রুহুল আমিনের ছেলে। পেশায় সে সিএনজি অটোরিকশা চালক।
বিষয়টি নিশ্চিত করে রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি মো. মাহবুব মিলকী বলেন, গত ৪ মে রাত ২টা ১০ মিনিটের দিকে দাহ্য পদার্থ দিয়ে দগ্ধ করা হয়েছিল ইয়াসমিনকে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। সেখান থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ও পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ৭ মে ঢাকায় নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
তিনি বলেন, এই ঘটনায় আজিম নামে তার কথিত এক প্রেমিককে ওইদিন রাতেই গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। থানায় তাকে আসামি করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও একজনকে বিবাদী করে মামলা করেছিল ইয়াসমিনের ভাই। এসিড মামলার সঙ্গে এখন হত্যা মামলার আসামি করা হবে আজিমসহ পালিয়ে থাকা অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে। ইয়াসমিনের লাশ ঢাকা মেডিকেলে ময়নাতদন্ত করার প্রক্রিয়া চলছে।
নিহতের বড় ভাই ও মামলার বাদী মো. আবু তাহের বলেন, আমার এক ভাতিজিকে খন্তকাটা বিয়ে দিয়েছিলাম। মাঝেমধ্যে আজিমের অটোরিকশায় আমার ভাতিজি বাপের বাড়ি আসতো। এর সুযোগ নিয়ে ইয়াসমিনের সঙ্গে নুরুল আজিম প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে। একপর্যায়ে ইয়াসমিন জানতে পারে আজিম বিবাহিত। তার দুটি সন্তানও রয়েছে। তাই আজিমকে সে এড়িয়ে চলতে শুরু করে এবং সম্পর্ক রাখবে না বলে জানান। এরমধ্যে আজিমের মা ঘরে বিয়ের প্রস্তাবও নিয়ে এসেছিল। কিন্তু ছেলেটা বিবাহিত জেনে তাতে আমরা রাজি না হওয়ায় সে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। এসব ঘটনার জেরে ইয়াসমিনকে সেদিন রাতে জানালা দিয়ে ডেকে তার সঙ্গে আনা এসিড ইয়াসমিনের মুখে ও শরীরে ছুড়ে মারে। এতে তার শরীরের ৪৫ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল বলে চিকিৎসকরা জানান।
তিনি বলেন, আমরা দুই ভাই ও পাঁচ বোনের মধ্যে সবার ছোট ইয়াসমিন। সে সেলিমা কাদের চৌধুরী কলেজে পড়াশোনা করতো। দীর্ঘদিন প্রবাস জীবন কাটিয়ে ছুটিতে এসেছিলাম বোনকে বিয়ে দেবো বলে। কিন্তু তার আগেই আমার বোনকে হত্যা করা হলো।
মেয়ে হত্যার বিচার চেয়ে তার মা গুলবানু বলেন, আমার মেয়ে খুব যন্ত্রণা ভোগ করে কষ্ট পেয়ে মরেছে। বাড়িতে আমার মেয়ের কক্ষে এখনো তার শরীর থেকে খসে যাওয়া ছামড়া ছড়িয়ে আছে। আজিমের কারণে আমার মেয়েকে আজ মরতে হলো। আমি তার ফাঁসি চাই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকীভাবে ফেরত পাওয়া যাবে?
পরবর্তী নিবন্ধকন্টেনারের দখলে ৯০ শতাংশ ইয়ার্ড