কন্টেনারের দখলে ৯০ শতাংশ ইয়ার্ড

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ১৫ মে, ২০২২ at ৫:০৫ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে কন্টেনারের পাহাড় গড়ে উঠছে। রাত-দিন বন্দর সচল এবং কন্টেনার ডেলিভারি দেয়ার প্রস্তুতি থাকলেও ঈদের আয়েশের কবলে পড়ে বন্দরে কন্টেনারের সংখ্যা কেবলই বাড়ছে। ঈদের দিন মাত্র একবেলা বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছিল। এছাড়া পুরো সময়টাই সচল রয়েছে বন্দর। অথচ আমদানিকারকদের অনাগ্রহে বন্দরের সব আয়োজন মাঠে মারা যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরে ইতোমধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ ইয়ার্ডই কন্টেনারের দখলে চলে গেছে। সূত্র জানিয়েছে, বিশ্বের নানা দেশ থেকে আসা কন্টেনারের বেশিরভাগই বন্দরে আটকা পড়ছে। ঈদের কয়েকদিন পার হলেও আমদানিকারকদের কন্টেনার খালাস কার্যক্রমে গতি না আসায় বন্দরের অভ্যন্তরে কন্টেনার জড়ো হতে শুরু করেছে। প্রতিদিন জাহাজ থেকে বিপুল পরিমাণ কন্টেনার খালাস হলেও সেই অনুপাতে ডেলিভারি না হওয়ায় ইয়ার্ডে আটকা পড়া কন্টেনারের সংখ্যা বাড়ছে।
বন্দর সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে কন্টেনার ধারণ ক্ষমতা ৪৯ হাজার ১৮ টিইইউএস। বন্দরের কন্টেনার হ্যান্ডলিং কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে ইয়ার্ডের ১৫-২০ শতাংশ জায়গা খালি রাখতে হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বন্দরের ইয়ার্ডে রক্ষিত কন্টেনারের সংখ্যা প্রায় ৪৫ হাজারে উন্নীত হয়েছিল। বিশেষ করে ঈদের সময়টাতে কন্টেনার খালাস একেবারে তলানীতে নেমে আসায় বন্দরের ইয়ার্ডে কন্টেনারের সংখ্যা বাড়তে থাকে।
জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দরে বিভিন্ন জাহাজ থেকে প্রতিদিন ৬ হাজারের বেশি কন্টেনার খালাস হয়। প্রতিদিন গড়ে ৫ হাজারের মতো কন্টেনার বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ড থেকে ডেলিভারি দেয়া হয়। এতে করে বন্দরের ইয়ার্ডে মোটামুটি একটি সামঞ্জস্য থাকে। কিন্তু ঈদের ছুটিতে কন্টেনার ডেলিভারি নেয়ার সংখ্যা একেবারে কমে যায়। ফলে বন্দরের ইয়ার্ডে রক্ষিত কন্টেনারের সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়। ঈদের আগে গত ২৯ এপ্রিল বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ড থেকে ৫ হাজার ১৫৬ টিইইউএস কন্টেনার ডেলিভারি হয়। ওই দিন বন্দর ইয়ার্ডের ৪৯ হাজার ১৮ টিইইউএস ধারণক্ষমতার বিপরীতে কন্টেনার ছিল ৩৫ হাজার ৯৯৩। এরপর ঈদের আমেজ শুরু হওয়ার সাথে সাথে কন্টেনার খালাসের পরিমাণ কমতে থাকে। ৩০ এপ্রিল কন্টেনার ডেলিভারি হয় ৩ হাজার ৩০৫ টিইইউএস। ১ মে ডেলিভারি হয় ২ হাজার ৯৭২ টিইইউএস, ২ মে ১ হাজার ৬৮ টিইইউএস। জাহাজ থেকে কন্টেনার খালাসের পরিমাণ স্বাভাবিক থাকলেও ডেলিভারির সংখ্যা একেবারে কমে যায় ৩ মে। ওইদিন বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ড থেকে মাত্র ২২৭ টিইইউএস কন্টেনার খালাস হয়েছে। ৪ মে বন্দর থেকে একটি কন্টেনারও খালাস হয়নি। ৫ মে ৭০৫, ৬ মে ১ হাজার ৯২, ৭ মে ১ হাজার ৫১২ কন্টেনার ডেলিভারি নেয়া হয়। এতে করে এক সপ্তাহের মধ্যেই বন্দরের ইয়ার্ডে কন্টেনারের সংখ্যা হু হু করে বাড়তে থাকে, একপর্যায়ে তা ৪৫ হাজার টিইইউএস ছুঁই ছুঁই করে। গতকাল বন্দর থেকে কন্টেনার খালাস হয় ৩৮৫৫ টিইইউএস। এ সময় ইয়াডে কন্টেনার ছিল ৪৩ হাজার ৭০৮ টিইইউএস।
এই অবস্থায় বন্দর কর্তৃপক্ষ আমদানিকারকদের কন্টেনার ডেলিভারি দেয়ার সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেও কোনো লাভ হয়নি। জাহাজ থেকে খালাসের গতিতে ইয়ার্ড থেকে ডেলিভারি না হওয়ায় বন্দরের ইয়ার্ডে কন্টেনারের জট লেগে গেছে।
বন্দরের শীর্ষ একজন কর্মকর্তা গতকাল বলেন, পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। কন্টেনার ডেলিভারি পুরোপুরি স্বাভাবিক না হলেও কিছুটা বেড়েছে। আজ থেকে ডেলিভারির সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। আশাকরি চলতি সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। তবে ইয়ার্ডের জট কমতে আগামী সপ্তাহও লেগে যেতে পারে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজীবন যুদ্ধে হেরে গেলেন এসিড দগ্ধ ইয়াসমিন
পরবর্তী নিবন্ধহালদায় নমুনা ডিম ছেড়েছে মা মাছ