জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পগুলোর দ্রুত বাস্তবায়ন চায় নগরবাসী

| শনিবার , ১৮ মার্চ, ২০২৩ at ৫:৫১ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পগুলোর সার্বিক অগ্রগতি পর্যালোচনায় অনুষ্ঠিত এক সভায় বেশ কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে, চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনের স্বার্থে খাল ও নালার ভেতর থাকা অস্থায়ী বাঁধগুলো চলতি মাসের মধ্যে অপসারণ করা হবে। আর চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় নির্মাণকাজ শেষ হওয়া খালগুলো সিটি করপোরেশনকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে। এছাড়া সিডিএর প্রকল্পের আওতায় নির্মাণাধীন জলকপাঁগুলোরও (স্লুইসগেট) রক্ষণাবেক্ষণ করবে সিটি করপোরেশন।

গত বুধবার বিকেলে সিডিএর সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোশাররফ হোসেন। উপস্থিত ছিলেন সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী ও সিডিএর চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ।

জলাবদ্ধতা চট্টগ্রামের বড় একটি সমস্যা। এই সমস্যায় নগরবাসী দীর্ঘদিন ধরে হিমশিম খাচ্ছেন। আগ্রাবাদের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া মহেশ খাল একসময় অনেক বিশাল খাল ছিল। এটি দিয়ে বড় নৌকা আসত। দখল হতে হতে এটি অনেক জায়গায় সরু নালায় পরিণত হয়েছে। এছাড়া আগ্রাবাদের আশপাশে যে বিলগুলো ছিল তা এখন নেই। সমুদ্রের উচ্চতাও বেড়েছে। এতে আগ্রাবাদসহ বিভিন্ন এলাকা তলিয়ে যাচ্ছে। গত ১৯২০ বছর ধরে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছেন লক্ষাধিক বাসিন্দা। ফইল্যাতলী বাজার থেকে মহেশখালের মুখ পর্যন্ত কাজগুলো বর্ষা মৌসুমের আগে শেষ করতে পারলে নগরীর বিশাল একটি অংশ জলজট থেকে মুক্তি পাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলেন, তবে মহেশখালের মুখের স্লুইসগেটের দ্বার উন্মোচন করা এবং মহেশখালের শাখা খাল তথা ঈশান মিস্ত্রী হাটের সম্মুখ অংশে আরেকটি স্লুইসগেট নির্মাণের কাজও শুরু করা দরকার। এছাড়া নগরীর বৃহত্তম পাইকারি বাজার চাকতাই এবং খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীগণ জলাবদ্ধতা নিয়ে প্রায়শই উদ্বিগ্ন থাকেন। প্রতিবছর জলাবদ্ধতায় উল্লেখযোগ্য পণ্য ভিজে নষ্ট হয়ে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয় তাদের। তাই নগরীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হিজড়া খাল, মির্জা খাল ও রাজাখালী খালের কাজসমূহও শুস্ক মৌসুমের মধ্যে শেষ করতে হবে।

বলা বাহুল্য, এই জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রী নিজে সময়ে সময়ে নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তারপরও জলাবদ্ধতা থেকে যাচ্ছে। প্রতিবছর বর্ষা এলেই বৃষ্টিতে জলমগ্ন নগরীতে পরিণত হয় চট্টগ্রাম। চট্টগ্রামের জনগণকে তাই জলাবদ্ধতার কবল থেকে মুক্ত করতে প্রধানমন্ত্রী যে মেগা প্রকল্পের অনুমোদন দেন, যা চট্টগ্রামের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্প। মূলত চট্টগ্রামের জনগণের প্রতি ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পটি।

অল্প কিছুদিন আগে চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের অগ্রগতি জানতে উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. শাহ আলীর সাথে তার দপ্তরে মতবিনিময় করেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন। সেসময় তিনি বলেন, নগরীর অনেকগুলো খাল ছিল। এগুলো বিভিন্ন দখলদারদের দখলের শিকার। নালা এবং ড্রেনগুলোও দখলে দূষণে প্রায় সংকুচিত। বিভিন্ন খাল দখল করে গড়ে উঠেছিল আবাসিক এবং বাণিজ্যিক ভবন। কয়েকটি খাল তো নগরীর মানচিত্র থেকেই মুছে গিয়েছিল। এসব খাল, নালা দখলমুক্ত করে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ শুরু করাটা অনেকখানি চ্যালেঞ্জিং ছিল। তারপরও দক্ষতার সাথে কাজ চালিয়ে যেতে থাকে ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড। এমনকি করোনার সময়েও কাজ চলমান রাখাটা বেশ প্রশংসনীয় ছিল। দীর্ঘ সময় ধরে জলাবদ্ধতা নিরসনের চলমান কার্যক্রম অনেকটা এগিয়ে গেলেও নগরীর বেশকিছু এলাকা এখনো অল্প বৃষ্টিতেই জলমগ্ন হয়ে পড়ে। নগরবাসীর মূল্যবান জিনিসপত্র ভিজে নষ্ট হয়ে যায়। ফলত ভোগান্তির পাশাপাশি আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন তারা। আর এ দুর্ভোগ থেকে জনগণকে মুক্তি দিতে আসন্ন বর্ষা মৌসুমের পূর্বেই খালের ভিতর থেকে সকল মাটি ও আবর্জনা অপসারণ এবং খালের মুখের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে।

বিশেষত তিনি নগরীর স্পর্শকাতর মুরাদপুর, ২নং গেইট, বহদ্দারহাট, চকবাজার এবং চাকতাই এলাকার অবশিষ্ট কাজগুলো দ্রুত সম্পন্ন করতে প্রকল্প পরিচালকের নির্দেশনা কামনা করেন।

আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে খালগুলোর ভেতরে থাকা অস্থায়ী বাঁধ অপসারণের যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা বাস্তবায়ন হলে বৃষ্টির সময় পানি দ্রুত নামতে পারবে। নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চারটি প্রকল্পের কাজ শেষ হলেই নগরবাসী মুক্তি পাবে এই সমস্যা থেকে। তার অপেক্ষায় আছে তারা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে