নগরের জলাবদ্ধতার কারণ খুঁজতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) সমন্বয়ে ৪ সদস্য বিশিষ্ট উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ৭ দিনের মধ্যে সরেজমিন পরিদর্শন করে কমিটির সদস্যরা পানি প্রবাহে খালে কোনো সমস্যা আছে কীনা তা খুঁজে বের করবে। অর্থাৎ কোনো খালে এখনো বাঁধ রয়ে গেছে কীনা বা কোন প্রতিবন্ধকতার জন্য পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করছে তা চিহ্নিত করবে। একইসঙ্গে ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে প্রতিবন্ধকতা দূর করার জন্য ক্রাশ প্রোগ্রাম পরিচালনা করবে।
গতকাল বুধবার বিকেলে নগরে জলাবদ্ধতার প্রকোপ নিরসনে করণীয় নির্ধারণ সংক্রান্ত বিশেষ সভায় এই কমিটি গঠন করা হয়। টাইগারপাসস্থ চসিকের অস্থায়ী প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। বক্তব্য রাখেন সিডিএ চেয়ারম্যান এম. জহিরুল আলম দোভাষ, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মো. মিজানুর রহমান, চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান, সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর। সভা শেষে সাংবাদিকদের কমিটি গঠনের বিষয়টি জানান সিটি মেয়র।
সভায় একটি সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ও গুরুত্বপূর্ণ চট্টগ্রাম নগর কয়েকদিন ধরে পানিতে ডুবে রয়েছে। এটি তো হতে পারে না। এ জন্য খুব দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
কমিটিতে যারা আছেন : ৪ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির প্রধান সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস। অন্য সদস্যরা হচ্ছেন চসিকের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনের মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল ও প্রকল্প পরিচালক মো. শাহ আলী ও চসিকের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোবারক আলী।
সভায় ক্ষোভ প্রকাশ : সভায় উপস্থিত পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের তথ্য অনুয়ায়ী, নগরের ১৮টি খালে ২০টি স্থানে প্রতিবন্ধকতা রয়ে গেছে। পতেঙ্গায় কর্ণফুলী টানেলের মুখে ৬০ ফুটের একটি খালকে ৩ ফুটের নালায় পরিণত করা হয়েছে। ফ্লাইওভার নির্মাণকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাঙ গ্রুপ নগরের ভিআইপি সড়কের পাশের একটি খাল মাটি দিয়ে ভরাট করে ফেলেছে।
অভিযোগ-প্রতিবাদ : জলাবদ্ধতার জন্য চসিকের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ঘাটতির কথা বলেন সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস। তবে তার প্রতিবাদ জানান চসিকের সচিব খালেদ মাহমুদ।
মেয়র যা বললেন : সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, নিম্নাঞ্চলে প্রতিবছর জলাবদ্ধতা হয়। কিন্তু এবার জলাবদ্ধতার প্রকোপ বেড়েছে এবং ভোগান্তিও বেড়েছে। জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ চলছে। স্বাভাবিকভাবে যে কোনো প্রকল্পের কাজ চলার সময় ভোগান্তি হয়। জলাবদ্ধতার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। কিন্তু ভোগান্তি বেড়ে যাওয়ায় মানুষ ধৈর্য্য হারিয়েছে। বিষয়টা সব কর্তৃপক্ষকে নাড়া দিয়েছে। জনগণকে ভোগান্তি থেকে মুক্তি দিতে আমরা একযোগে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ শুরু করেছি।
কমিটি গঠন প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, কেন পানি জমেছে, জলাবদ্ধতার প্রকোপ কেন বেড়েছে, সেটা নির্ধারণ করার জন্য আমরা একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি করেছি। তারা এক সপ্তাহের মধ্যে সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখবে কোথায় বাঁধ আছে, কোথায় কী প্রতিবন্ধকতা আছে। যেখানে বর্জ্য আছে, সেগুলো অপসারণ করা হবে। যেখানে বাঁধ আছে, সেটা অপসারণ করা হবে। পানিপ্রবাহে যেন প্রতিবন্ধকতা তৈরি না হয়, জনগণের ভোগান্তি যেন লাঘব হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই কমিটিটা করা হয়েছে। ইনশাআল্লাহ, জনগণের ভোগান্তি কমে যাবে।
তিনি বলেন, সিএমপি বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, বন্দর, ওয়াসা, জেলা প্রশাসনসহ সব সেবা সংস্থা গঠিত কমিটিকে সহযোগিতা করবে। তিনি বলেন, বারবার বলছি, পানি উঠবে। কিন্তু সেটি যেন দ্রুত নিষ্কাশিত হয়, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। এবার বৃষ্টিপাত বেশি হয়েছে, জলাবদ্ধতাও বেশি হয়েছে, ভোগান্তিও বেশি হয়েছে। মানুষের ধৈর্যের একটা সীমা আছে। মানুষের ভোগান্তি আমাদের সবাইকে নাড়া দিয়েছে।
সিডিএ চেয়ারম্যান এম. জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে নগরীর সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো পরস্পরের প্রতি কোনো দোষারোপ করার সুযোগ নেই। জনভোগান্তিতে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে কী করা প্রয়োজন তা করাই আমাদের প্রধান কর্তব্য।
অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মো. মিজানুর রহমান বলেন, চট্টগ্রাম নগরীতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা নিরসনে আশু পদক্ষেপ গ্রহণে গঠিত কমিটি দ্রুততার সাথে সমস্যা চিহ্নিত করে জরুরি ভিত্তিতে স্বল্পমেয়াদী ব্যবস্থা নেয়ার মাধ্যমে জনভোগান্তি রোধ করবে। এ জন্য সকল সেবা সংস্থাকে একযোগে কাজ করতে হবে।
সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, সম্প্রতি অতি বর্ষণের কারণে সৃষ্ট দীর্ঘ সময়ের জলাবদ্ধতায় চট্টগ্রামবাসীকে অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। সামনে আরো ব্যাপক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। তাই জরুরি ভিত্তিতে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে হবে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে রয়েছে। বে-টার্মিনাল এবং মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়ে গেলে চট্টগ্রাম নগরী পৃথিবীর অন্যতম একটি বন্দর নগরীতে রূপান্তরিত হবে। তাই চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে তিনি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আধুনিকরণের মাধ্যমে কর্ণফুলী নদীতে মানবসৃষ্ট বর্জ্য না পড়ার ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানান।