জঙ্গল সলিমপুরে সবাইকে উচ্ছেদ করা হবে

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বৈঠকে সিদ্ধান্ত ।। প্রকৃত ভূমিহীন ও গৃহহীনদের স্থায়ী ঠিকানায় পুনর্বাসন প্রকল্প বাস্তবায়নে কয়েকটি টাস্কফোর্স গঠন মাস্টার প্ল্যানের খসড়া প্রস্তুত, দুই সপ্তাহের মধ্যে চূড়ান্ত

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৬:৩৯ পূর্বাহ্ণ

সীতাকুণ্ড থানাধীন জঙ্গল সলিমপুর ও আলী নগর প্রকল্প নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সভা গতকাল সোমবার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সভায় প্রকল্পের মাস্টার প্ল্যানের খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে এবং আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে মাস্টার প্ল্যানটি চূড়ান্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নে আরো বেশ কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে সভায়। সেগুলো হলো, অবৈধ দখলদার থেকে শুরু করে সন্ত্রাস, ভূমিদস্যুতা ও মাদকের রাজত্ব কায়েমে জড়িতদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করা হবে। এই এলাকায় কেউ থাকবে না, সবাইকে উচ্ছেদ করা হবে। যারা প্রকৃত ভূমিহীন ও গৃহহীন রয়েছে তাদেরকে স্থায়ী ঠিকানায় স্ব স্ব উপজেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে পুনর্বাসন করা হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে কয়েকটি টাস্কফোর্স কমিটিও গঠন করা হয়েছে। কমিটিগুলো আগামী এক মাসের মধ্যে উচ্ছেদ পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন এবং উদ্ধারকৃত সরকারি খাস জমিতে জীব-বৈচিত্র্য রক্ষাপূর্বক পরিবেশ বান্ধব কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নে মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করবে। গতকাল সোমবার বেলা ২-৩০টায় এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। যা বিকাল ৫ টা পর্যন্ত চলে। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস। উপস্থিত ছিলেন জননিরাপত্তা বিভাগ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ, ভূমি মন্ত্রণালয়, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, আইন ও বিচার বিভাগের সিনিয়র সচিব, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, পুলিশ, র‌্যাব, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধানরা। আরো উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী, সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ, বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিন ও জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান। জেলা প্রশাসক বলেন, জঙ্গল সলিমপুর প্রকল্প বাস্তবায়নে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অবৈধ দখলবার এবং প্রশাসনের লোকদের উপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করা হবে। অত্র এলাকায় কেউ থাকবে না, অভিযান চালিয়ে সবাইকে উচ্ছেদ করা হবে। যারা প্রকৃত ভূমিহীন ও গৃহহীন রয়েছে তাদেরকে স্থায়ী ঠিকানায় স্ব স্ব উপজেলায় আশ্রয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে পুনর্বাসন করা হবে।
জেলা প্রশাসক আরো বলেন, জঙ্গল সলিমপুরে থাকা ৩১০০ একর জমি উদ্ধারে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা এবং জমি উদ্ধার করা হবে। এরপর সেখানে পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নে গঠিত টাস্কফোর্স কমিটি আগামী এক মাসের মধ্যে উচ্ছেদ পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন এবং উদ্ধারকৃত সরকারি খাস জমিতে জীব-বৈচিত্র রক্ষাপূর্বক পরিবেশবান্ধব অক্ষুণ্ন রেখে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাবে।
প্রায় তিন দশক ধরে জঙ্গল সলিমপুরের পাহাড়ে হাজারো অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে। এছাড়া এখানে বিভিন্ন সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে ওঠেছে। গত এক মাস ধরে জেলা প্রশাসন সেখানে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে আসছে।
উল্লেখ্য, একসময় জঙ্গল সলিমপুর চট্টগ্রামের এক বিচ্ছিন্ন এলাকা হিসেবে পরিচিত ছিল। যেখানে প্রবেশ করতে গেলেও ভূমিখেকো ও সন্ত্রাসীদের দেয়া পরিচয়পত্র ছাড়া কেউ ঢুকতে পারতোনা। প্রশাসনের কেউ যাতে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্যে তাদের নজরদারি ছিল। এলাকাটি ছিল সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য। জঙ্গল সলিমপুর এলাকাটিতে অনেক পাহাড় রয়েছে কিন্তু ভূমিখেকো ও সন্ত্রাসীরা পাহাড় কেটে প্লট বিক্রয় করছিল। পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করেছে যা অবর্ণনীয়। ভূমি খেকোরা পাহাড় কেটে, অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগসহ অবৈধভাবে আবসস্থল তৈরি করেছে। সম্প্রতি এ বিষয়ে নজর দেয় জেলা প্রশাসন এবং প্রকল্প হাতে নেয়। যেখানে নির্মাণ করা হবে সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প। গড়ে তোলা হবে নাইট সাফারি পার্কও। এরই ধারাবাহিকতায় জঙ্গল সলিমপুরের ৩১০০ একর খাস জমি উদ্ধার কার্যক্রম চলছে। জঙ্গল সলিমপুরের ভূমিদস্যু ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা করা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকাল সংবাদ সম্মেলনে আসছেন প্রধানমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬