জঙ্গল সলিমপুরের ৩১ বাসিন্দা গ্রেপ্তার

উচ্ছেদ ঠেকাতে ঢাকা ও চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে যাচ্ছিল তারা ।।। ঢাকায় আজ উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক

সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি | সোমবার , ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৪:৩০ পূর্বাহ্ণ

সীতাকুণ্ড উপজেলার জঙ্গল সলিমপুর ও আলীনগরে চলমান উচ্ছেদ অভিযান ঠেকাতে ঢাকা ও চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে পৃথক দুই সংবাদ সম্মেলনে যোগদানের পথে ৩১ বাসিন্দাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত শনিবার গভীর রাতে সীতাকুণ্ড পৌরসভার বাইপাস এলাকা এবং গতকাল বিকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব চত্বর থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এদিকে জঙ্গল সলিমপুরের আলীনগর পাহাড়ে ৩ হাজার ১০০ একর সরকারি পাহাড় অবৈধ দখলমুক্ত করার লক্ষ্যে আজ সোমবার সরকারের উচ্চ পর্যায়ে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সীতাকুণ্ড থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুমন বণিক জানান, জঙ্গল সলিমপুর ও আলীনগর থেকে শান্তি পরিবহন ও পাহাড়িকা পরিবহনের দুটি বাসযোগে ৬৩ জন বাসিন্দা ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে
বলে আমরা গোপন সূত্রে জানতে পারি। শনিবার রাত ১টার দিকে পৌর সদর বাইপাস এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৬৩ জনকে আটক করা হয়। পরে যাচাই-বাছাই করে ২২ জনকে মামলার আসামি হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। যাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে তাদের বেশিরভাগ বয়ষ্ক মানুষ। মূল অপরাধীরা এদের নিয়ে যাচ্ছিল মানুষের সহানুভূতি আদায়ের উদ্দেশ্যে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক বাসিন্দারা জানান, জঙ্গল সলিমপুরে উচ্ছেদের প্রতিবাদ গতকাল বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে জঙ্গল সলিমপুর ছিন্নমূল ভূমিহীন কল্যাণ পরিষদ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করার জন্য তারা ঢাকায় যাচ্ছিলেন। পথে তাদেরকে আটক করে সীতাকুণ্ড পুলিশ।
প্রেস ক্লাবের সামনে গ্রেপ্তার ৯ : আলীনগরে প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং পুলিশ-আনসারের ওপর হামলার ঘটনায় গতকাল বিকাল ৩টার দিকে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন মো. হাবিব, তৌহিদুর রহমান, মাহমুদুল হাসান, মো. রাজু, আতাউর হোসাইন, আশীষ বিশ্বাস, সাদেক হোসেন, মুন্না ও সামসু।
হোয়াটসঅ্যাপে একটি বিশেষ গ্রুপের মাধ্যমে আলীনগরের সন্ত্রাসী ইয়াসিন চক্রের ৭৭ জন প্রশাসন ও পুলিশকে চ্যালেঞ্জ জানানোর জন্য নানা পরিকল্পনা গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন করে আসছিল। গ্রেপ্তারকৃতরা এ চক্রের সদস্য বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (এনডিসি) মো. তৌহিদুল ইসলাম। বিশেষ সূত্রের ভিত্তিতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আকতার হোসেন নামে গ্রুপের এক সদস্যের কাছ থেকে একটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। সেটি বিশ্লেষণ করে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে আলীনগরের সন্ত্রাসীদের সরকার ও প্রশাসন বিরোধী কর্মকাণ্ডের সত্যতা পাওয়া যায়। গতকাল বিকালে প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে তাদের সংবাদ সম্মেলন করার কথা ছিল। তবে সংবাদ সম্মেলনের আগে রিজারভেশন বাতিল করে প্রেস ক্লাব কর্তৃপক্ষ।
কোতোয়ালী থানার ওসি জাহেদুল কবির বলেন, আটককৃতদের সীতাকুণ্ড থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
সীতাকুণ্ড থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুমন বণিক বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা ২৩ আগস্ট উপজেলার ফৌজদারহাটে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ছয় ঘণ্টা অবরোধ করে রাখে। ৮ সেপ্টেম্বর পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী জঙ্গল সলিমপুরে আটকে রাখা বাসিন্দাদের নিরাপদে বের করে আনতে গেলে প্রশাসনের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় সন্ত্রাসীরা। এ সময় প্রশাসনের ওপর তারা ককটেল ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও আত্মরক্ষার্থে ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এসব ঘটনায় পুলিশের ওপর হামলা, গাড়ি ভাঙচুর ও হাতবোমা বিস্ফোরণ মামলার আসামি তারা।
সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, পাহাড়ঘেরা দুর্গম জঙ্গল সলিমপুর সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত। বেশ কয়েকজন গডফাদার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এসব সন্ত্রাসী বাহিনী এখানে সরকারি পাহাড় কেটে হাজারও অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলে। সমপ্রতি সরকারের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে খাস জায়গায় থাকা অবৈধ স্থাপনা সরাতে উচ্ছেদ অভিযান চালাচ্ছে জেলা প্রশাসন। আজ সোমবার সরকারের উচ্চ পর্যায়ে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। তার একদিন আগে সন্ত্রাসী চক্র উচ্ছেদ প্রক্রিয়া বানচাল করতে শনিবার রাতে জঙ্গল সলিমপুর ও আলীনগরের ৬৩ জন বাসিন্দাকে দুটি বাসে করে নিয়ে ঢাকার দিকে রওনা হয়। ঢাকায় প্রেস ক্লাবে তারা বিক্ষোভ দেখাতে যাচ্ছিল বলে প্রশাসন খবর পেয়েছে। খবর পেয়ে পৌর সদর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
সমপ্রতি জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে ওই এলাকায় প্রথম দফায় দুই শতাধিক অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। চার শতাধিক পরিবারের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এর মধ্যে সেখানে অবৈধ দখলদারদের কবলে থাকা ৭০০ একর খাস জমি উদ্ধার করা হয়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পর আলীনগরের ৩ হাজারের বেশি বিক্ষুব্ধ নারী-পুরুষ মহাসড়কের ফৌজদারহাট এলাকায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও ভাঙচুর করে। এ ঘটনায় উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ বাদী হয়ে সাতটি মামলা দায়ের করে। এছাড়া সরকারি সিদ্ধান্ত মেনে স্বেচ্ছায় আলীনগর ছাড়তে চাওয়া পরিবারগুলোকে প্রশাসন নিরাপদে বহির্গমনে সহযোগিতা করতে গেলে বৃহস্পতিবার প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর আলীনগরের অবৈধ দখলদার ও সন্ত্রাসী বাহিনী হামলা চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। হামলায় সীতাকুণ্ড থানার এক এসআইসহ ৮ পুলিশ আহত হন। এতে আলীনগরের নিরীহ বেশ কিছু বাসিন্দাসহ আরও ২২ জন আহত হন। হামলার পরদিন পুলিশ বাদী হয়ে ২৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১৪০ জনকে আসামি করে মামলা করে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর ইন্তেকাল
পরবর্তী নিবন্ধপ্রিয় ক্যাম্পাসে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস