জঙ্গল সলিমপুরকে নিয়ে সরকারের মহাপরিকল্পনা অভিনন্দনযোগ্য

| বুধবার , ৩১ আগস্ট, ২০২২ at ১১:৪০ পূর্বাহ্ণ

সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুর দীর্ঘদিন ধরে সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত। এখানকার অবৈধ বসতি উচ্ছেদ নিয়ে তুলকালাম কাণ্ড ঘটে গেলো। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে উচ্ছেদকারীরা প্রতিরোধ করার ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালিয়েছে। সেই জঙ্গল সলিমপুরে উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে সরকার। সেখানে স্পোর্টস ভিলেজ থেকে শুরু করে নাইট সাফারি পার্ক, ইকোপার্ক, কেন্দ্রীয় কারাগার ও হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা প্রতিষ্ঠা করা হবে। এসব প্রতিষ্ঠান স্থাপন হলে চাপ কমবে চট্টগ্রাম শহরের ওপর। কর্মসংস্থান হবে মানুষের। আমূল পরিবর্তন ঘটবে অর্থনীতির।
দৈনিক আজাদীতে ২৯ আগস্ট প্রকাশিত ‘১৫ দিনের মধ্যে মাস্টার প্ল্যান’ শীর্ষক প্রতিবেদনে জানা যায়, আগামী ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে প্রণয়ন হতে যাচ্ছে মাস্টার প্ল্যান। এরই ধারাবাহিকতায় এ এলাকায় পাহাড় কাটা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। পাহাড় ও টিলা শ্রেণীর জমি ক্রয়, বিক্রয়, হস্তান্তর সম্পূর্ণরূপে নিষেধ করা হয়েছে। নেপথ্যে থাকা ১৫ টি সমবায় সমিতিকে চিহ্নিত করে নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। ভূমিদস্যু ইয়াছিনসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অনুমতি ব্যতিরেকে যেকোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। বহিরাগতদের প্রবেশ সম্পূর্ণ বন্ধ করা হয়েছে। অত্র এলাকার প্রবেশ পথে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। এর দায়িত্বে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৩০-৪০ জনের একটি টিম। কে প্রবেশ করছে, কে বের হচ্ছে সে বিষয়গুলো সার্বক্ষণিক নজরদারি করছে এ চেকপোস্ট। এ ছাড়া পুরো জঙ্গল সমিলমপুরজুড়ে বসানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, জঙ্গল সলিমপুর পাল্টে যাবে। আগামী আড়াই তিন বছরের মধ্যে এটি একটি উপশহরে রূপ নিবে। সে জন্য এ এলাকায় থাকা অবৈধ দখলদারদের সরাতে হবে। ইতিমধ্যে কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে বড় ধরনের উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। জঙ্গল সলিমপুর ও এর পাশের আলীনগরে বর্তমানে আড়াই থেকে তিন হাজার নিম্ন আয়ের পরিবার বসবাস করছে। এ পরিবারের সাথে আছে প্রায় ২০ হাজার মানুষ। এর মধ্যে ভোটার ৭ হাজার।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব প্রতিষ্ঠান জঙ্গল সলিমপুরে হলে চাপ কমবে শহরের ওপর। তৈরি হবে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান। অর্থনৈতিক অবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটবে। সেইসঙ্গে এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যবদল হবে। এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামসের বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে অন্য গণমাধ্যমে। সেখানে তিনি বলছেন, ‘জঙ্গল সলিমপুরকে ঘিরে যে মহাপরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে, তা বাস্তবায়ন হলে এটি স্মার্ট সিটি কিংবা উপশহর হিসেবে গড়ে উঠবে। এখানে সরকারি অনেকগুলো অফিস ও ভবন হবে। এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলে চট্টগ্রাম শহরে চাপ কমবে। চট্টগ্রামে উন্মুক্ত কোনও পার্ক নেই। সলিমপুরে ইকোপার্ক ও নাইট সাফারি পার্ক প্রতিষ্ঠার কথা চলছে। এখানে কারাগার হবে। যেটি হবে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার-২। এই কারাগার হলে চট্টগ্রাম কারাগার থেকে বন্দির চাপ কমবে। সেইসঙ্গে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প প্রতিষ্ঠার প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। তবে এর আগে পুরো জমি সরকারের আয়ত্তে নিতে হবে। এরপর সার্ভে করে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু করতে হবে।’
আমাদের অবাক হতে হয় অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের উচ্ছেদে সরকারের বা প্রশাসনের এতো বেগ পেতে হলো। আরো অবাক হই, যখন জানি ওখানে ওয়াসার লাইন গেছে, বিদ্যুতের লাইন গেছে। এই লাইন পেতে যে কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট অফিসে জমা দিতে হয়, সেই কাগজগুলো জমা দেওয়া হয়েছিল? যদি জমা দিয়ে না থাকে, তাহলে সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষ কীভাবে ওখানে লাইন দিয়েছে এবং বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ করেছে?
অন্য প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান বলেন, জঙ্গল সলিমপুরে পাহাড় কাটা বন্ধ করে দিয়েছি। পাহাড় কাটায় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি জব্দ করা হয়েছে। জমি বেচাকেনার সাথে জড়িত সমবায় সমিতিগুলোর নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। স্বেচ্ছায় জঙ্গল সলিমপুর ছাড়তে ৩০ আগস্ট সময় বেধে দেয়া হয়েছে। আগামী মাসের শুরুর দিকে বড় অভিযান পরিচালনা করা হবে। এ এলাকায় অবৈধ বসতি থাকবে না।
আমরাও চাই, সলিমপুরে গড়ে উঠুক সুন্দর স্মার্ট সিটি। সরকার যে মহাপরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে, তার বাস্তবায়ন হোক। এ পরিকল্পনা অভিনন্দনযোগ্য।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে