ছয় মাসে বৈধ হয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকার অপ্রদর্শিত আয়

| মঙ্গলবার , ৫ জানুয়ারি, ২০২১ at ১০:৪৯ পূর্বাহ্ণ

চলতি অর্থবছরের বাজেটে নির্দিষ্ট হারে কর দিয়ে অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার যে সুবিধা দেওয়া হয়েছে, সেই সুযোগ নিয়ে ছয় মাসে ‘সাদা’ হয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) মোট ৭ হাজার ৬৫০ জন এই সুযোগ নিয়েছেন। তারা ১০ হাজার ২২০ কোটি টাকার অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করায় সরকার মোট ৯৬২ কোটি ৬০ লাখ টাকা কর পেয়েছে।
মহামারীর সঙ্কটের মধ্যে চলতি অর্থবছরের বাজেটে অর্থনীতির মূল স্রোতে অর্থ প্রবাহ বাড়ানোর লক্ষ্যে আয়কর অধ্যাদেশে দুটি ধারা সংযোজন করে ঢালাওভাবে অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার সুযোগ দেওয়া হয়। সেই সুযোগ নিয়েই এই কালো টাকা সাদা করা হয়েছে, যাকে ‘অভূতপূর্ব’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে এনবিআরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে। খবর বিডিনিউজের।
সেখানে বলা হয়, অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার, বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও পুঁজিবাজারের উন্নয়নে চলতি অর্থবছর সরকার অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগে বিশেষ সুযোগ দেয়। এ সুযোগে অভূতপূর্ব সাড়া দিয়েছেন করদাতারা। এর মধ্যে ২০৫ জন করদাতা ২২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এঙচেঞ্জ কমিশনের অনুমোদিত সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করেছেন। আর ৭ হাজার ৪৪৫ জন করদাতা ৯৩৯ কোটি ৭৬ লাখ টাকা অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করেছেন। তাদের সবাইকেই নির্দিষ্ট হারে আয়কর দিতে হয়েছে। এনবিআর বলেছে, এর ফলে দেশের ফরমাল ইকনোমিতে ১০ হাজার ২২০ কোটি টাকা প্রবেশ করেছে, যা বিনিয়োগ বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং কর জিডিপির হার বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে। এই সুযোগ ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বলবৎ আছে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে বলা হয়, দেশের প্রচলিত আইনে যা-ই থাকুক না কেন ১ জুলাই ২০২০ থেকে ৩০ জুন ২০২১ পর্যন্ত ব্যক্তি শ্রেণির করদাতারা আয়কর রিটার্নে অপ্রদর্শিত জমি, বিল্ডিং, ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্টের উপর প্রতি বর্গমিটারে নির্দিষ্ট হারে এবং গচ্ছিত অর্থ, সঞ্চয়পত্র, শেয়ার, বন্ড বা অন্য কোনো সিকিউরিটিজের উপর ১০ শতাংশ কর দিয়ে আয়কর রিটার্নে প্রদর্শন করলে আয়কর কর্তৃপক্ষ বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন করতে পারবে না।
এর পাশাপাশি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে বাজেটে বলা হয়, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের অন্যতম চালিকাশক্তি পুঁজিবাজারকে গতিশীল করতে তিন বছরের লক-ইনসহ কতিপয় শর্তে ১ জুলাই ২০২০ থেকে ৩০ জুন ২০২১ পর্যন্ত ব্যক্তি শ্রেণির করদাতা পুঁজিবাজারে অর্থ বিনিয়োগ করলে এবং ওই বিনিয়োগের উপর ১০ শতাংশ কর দিলে আয়কর কর্তৃপক্ষ বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন করতে পারবে না। এনবিআরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রায় সব সরকারই কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়েছে। চলতি অর্থবছরের আগে গত ১৫ অর্থবছরে এ সুযোগে সব মিলিয়ে ১৪ হাজার কোটি কালো টাকা সাদা হয়েছে। সেখান থেকে সরকার কর পেয়েছে দেড় হাজার কোটি টাকা মত। রিটার্ন বেড়েছে ৯ শতাংশ : সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এবার ২৪ লাখ ৯ হাজার ৩৫৭ জন করদাতা আয়কর রিটার্ন জমা দিয়েছে, যা গত বছরের চেয়ে ৯ শতাংশ বেশি। ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের আয়কর রিটার্ন দাখিলের শেষ সময় ছিল ৩১ ডিসেম্বর। ওই সময় পর্যন্ত সরকার আয়কর পেয়েছে ৩৪ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ১ হাজার ৫৪৫ কোটি টাকা বা ৪ দশমিক ৭৩ শতাংশ বেশি। ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেটে আয়কর খাত থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা আছে ১ লাখ ৫ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধডেস্কটপে নির্দিষ্ট কোনো অংশের স্ক্রিনশট নেয়ার পদ্ধতি
পরবর্তী নিবন্ধসিএসই’তে লেনদেন ৮১.৫০ কোটি টাকা