চিকিৎসাসেবায় যেন কেউ ভোগান্তির শিকার না হয়

| বুধবার , ১৮ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৫:৪৫ পূর্বাহ্ণ

স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে বাংলাদেশের অন্যান্য সেক্টরের মতো স্বাস্থ্য খাতেও দৃষ্টিগ্রাহ্য অনেক উন্নয়ন হয়েছে। পূর্বে বিভিন্ন জটিল চিকিৎসার জন্য মানুষ ছিল রাজধানী ঢাকার উপর নির্ভরশীল। এখন জেলাউপজেলায় অনেক উন্নত মানের স্বাস্থ্য অবকাঠামো গড়ে উঠেছে। আজ বেসরকারি খাতেও স্বাস্থ্যসেবা বিকশিত হয়েছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, স্বাস্থ্য খাতে আমাদের ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটিবিচ্যুতি এখনো রয়ে গেছে। সরকারিবেসরকারি উভয় খাতেই বিভিন্ন সংকট বিদ্যমান। বর্তমানে গ্রামীণ ও মফস্বল এলাকার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে দোটানায় পড়েছে। অনেকে বেসরকারি হাসপাতালক্লিনিকে চিকিৎসাসেবা নিতে পারছে না ব্যয়বহুল হওয়ার কারণে। সেখানে আস্থার সংকটও আছে। অন্য দিকে সরকারি খাতে অব্যবস্থাপনা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, সেখানে চিকিৎসাসেবা নিতে গিয়ে হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হতে হয় পদে পদে।

পত্রিকান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বাস্থ্য খাতে অনিয়মদুর্নীতির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। অভিযোগ আছে, এখানে অনেক বড় বড় সিন্ডিকেট জড়িত। বলা হয়ে থাকে, এর মাথা থেকে পা পর্যন্ত সর্বত্র পচন ধরেছে। দেশে যখন করোনা মহামারি চলছে, ১২ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে, সাত লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়ে অত্যন্ত যন্ত্রণাময় জীবন কাটাচ্ছে, তখনো স্বাস্থ্য খাতের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। মহামারিকে নাকি অনেকে লুটপাটের সুযোগ হিসেবেই দেখেছে। স্বাস্থ্য খাতের কর্তাব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অদক্ষতার অভিযোগও প্রবল। প্রতিবছর শত শত কোটি টাকার দুর্নীতি হলে স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বাড়িয়েই কি কাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা যাবে?

বিশেষজ্ঞরা বলেন, স্বাস্থ্য খাত আর দশটি খাতের মতো নয়। এখানকার অনিয়ম বহু মানুষের জীবনমৃত্যুর সঙ্গে সম্পর্কিত। নকল এক্সরে ফিল্ম আর ভেজাল বা নিম্নমানের ইনগ্রেডিয়েন্ট দিয়ে সঠিক রোগ পরীক্ষা কখনো সম্ভব হবে না। আর ভুল রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে দেওয়া চিকিৎসা রোগীর কোনো কাজে আসবে না। রোগীর মৃত্যুই শুধু ত্বরান্বিত হবে। আমরা মনে করি, স্বাস্থ্য খাতের অনিয়মদুর্নীতি দূর করা অত্যন্ত জরুরি। এ জন্য বড় ধরনের শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করতে হবে। দুদক ও আর্থিক গোয়েন্দাদের তৎপর হতে হবে। নিয়মিতভাবে কর্মকর্তাকর্মচারীদের সম্পদের হিসাব নিতে হবে। অনিয়মের প্রতিটি ঘটনাকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।

আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে দেশের স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ অনেক পুরনো। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে এখানকার ব্যাপক দুর্নীতির কথা। গণমাধ্যমেও প্রতিনিয়ত এই খাতটিতে চলা দুর্নীতির প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে। কিন্তু অবস্থার কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। অভিযোগ আছে, এখানে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয় কেনাকাটায়। সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে এমনই এক উদ্ভট কেনাকাটার চিত্র। ২৪ কোটি টাকায় কেনা একটি লিনিয়ার অ্যাকসেলারেটর রেডিওথেরাপি মেশিন ১২ বছর ধরে বাক্সবন্দি অবস্থায় পড়ে আছে। এত দিনে মেশিনটির ওয়ারেন্টি পিরিয়ড পার হয়ে গেছে। এটি সচল করা যাবে কি না তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। উপরন্তু এখনো সেটি স্থাপন করার মতো অবকাঠামো গড়ে ওঠেনি। অথচ ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহৃত রেডিওথেরাপি মেশিনের স্বল্পতায় সারা দেশে অনেক রোগীর চিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছে।

দৈনিক আজাদীতে ১৬ জানুয়ারি প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়,চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে স্থাপন করা স্যান্ডর ডায়ালাইসিস সেন্টারে সরকারি ভর্তুকি সুবিধায় প্রদত্ত সেশন কমানোর সিদ্ধান্ত আপাতত কার্যকর হচ্ছে না। আগের (গত বছরের) মতোই ভর্তুকি সুবিধা বহাল থাকছে। অর্থাৎ হাসপাতাল থেকে রেফারড হওয়া রোগীরা আগের মতোই ভর্তুকি সুবিধায় ডায়ালাইসিস সেবা পাচ্ছেন এ সেন্টারে।

চমেক হাসপাতালের নিচতলায় স্থাপন করা স্যান্ডর ডায়ালাইসিস সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, সারি করে বসানো বেডে ডায়ালাইসিস সেবা নিচ্ছেন রোগীরা। সেন্টারের প্রবেশ মুখে বসেছিলেন সেন্টারের দুজন বিলিং স্টাফ। তারা জানান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মৌখিক নির্দেশনায় আগের নিয়মেই ডায়ালাইসিস সেবা দেয়া হচ্ছে। অর্থাৎ একজন রোগী গত বছর যে অনুপাতে ভর্তুকি সেশন পেতেন, সে সুবিধা বহাল রাখতে বলা হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী গত বছরের নিয়মেই আমরা সেবা অব্যাহত রেখেছি।

স্বাস্থ্যখাত খুবই গুরুত্বপূর্ণ খাত। এ খাতের স্বচ্ছতার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে উদ্যোগী হতে হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে কঠোর থেকে কঠোরতর অবস্থান নিতে হবে। চিকিৎসাসেবায় যেন কেউ ভোগান্তির শিকার না হয়, তার দিকে লক্ষ রাখতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে