চিকিৎসকদের উচিত ভালো ব্যবহার করা

গৌরী সর্ববিদ্যা | শুক্রবার , ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ১০:২৭ পূর্বাহ্ণ

আমার ছোটছেলের বয়স তখন ষোল বছর। মানে দুবছর আগের কথা বলছি। শীতকাল আসার সাথে সাথেই তার নাক বন্ধ হয়ে যেতো এবং শ্বাসকষ্ট হতো। মাঝেমাঝে দেখতাম ঘুমের মাঝখানে ওঠে বসে আছে। সারারাত ঘুমাতো না! স্কয়ারের একজন ডাক্তার বললেন, অপারেশন করতে হবে, তবে এখন নয়। আঠারো বছর বয়স হলে তারপর।

এভাবে দুবছর চলে যায়। ২০২২ জুন, আঠারো বছর হবার সাথে সাথেই আমি দুএকজন ডাক্তারের কাছ থেকে পরামর্শ নেয়া শুরু করি। ডাক্তার সেইম কথায় বললেন, অপারেশন করতে হবে। যেহেতু বয়স কম এবং নাক একটা শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অংশ তাই এখানে রিস্ক না নিয়ে কোলকাতায় চিকিৎসা করার সিদ্ধান্ত নিলাম।

ইন্ডিয়া যাবার আগে, কোলকাতার একজন ডাক্তারের এপয়েন্টমেন্ট নিলে বললেন, সামনের বৃহস্পতিবার বারোটা করে আসুন। আমরা মঙ্গলবার ইন্ডিয়া পৌঁছলাম এবং বৃহস্পতিবার বরাবর বারোটায় হাসপাতালে গেলাম। ডাক্তার দেড়টা করে আসলেন, রুগী দেখা শুরু করেছেন। আমি, আবার রিসেপশনে গিয়ে বললাম, বলুন আমরা বাংলাদেশ থেকে এসেছি।

উনি ঘুরে এসে জানালেন ডা. আর রোগী দেখবেন না। ছুটে গেলাম চেম্বারের সামনে।

স্যার আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি, ঐযে আপনি বলেছিলেন আমাকে ছেলে নিয়ে আসার জন্য! আমি এতো দূর থেকে অনেক কষ্ট করে এসেছি স্যার, আপনি যদি একটু সময় দিন তাহলে ভীষণ উপকৃত হই। ডাক্তার বললেন, আপনাকে এতো কষ্ট করে আসতে কে বলেছে? চলে যান আবার বাংলাদেশে! আমি বাড়ি গিয়ে ঘুমাবো,এখন আমার খেয়ে ঘুমানোর সময়। বললাম, স্যার বুঝতে পারছি, আপনি যদি একটু সময় দিতেন!

তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী এসে বললেন, উনারা অনেকক্ষণ ধরে বসে আছেন, একটু যদি দেখতেন স্যার। পারবো না বলে হুট করে গাড়িতে ওঠে পড়লেন। আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। অবাক হলাম ডাক্তারের এইরকম ব্যবহার দেখে। ওখানে শুধু আমি নই আরও অনেকেই ছিলেন যারা সকাল থেকে বসে ছিলেন।

চলে গেলাম বেলভিউতে। ডা. দীপঙ্কর দত্তের কাছে সমস্যার কথা বলতেই বললেন, অপারেশন করতে হবে। নাকের হাড় বাঁকা। কিছু টেস্ট লিখে দিচ্ছি, দুদিনের মধ্যে টেস্ট করিয়ে রিপোর্টগুলো পাঠান। আগামী বুধবার ছেলের অপারেশন হবে। না, কর্কশ মুখে বলেননি, হেসে হেসে খুব শান্ত গলায় কথাগুলো বলছিলেন, কেন অপারেশন করতে হবে সেটাও বুঝিয়ে বললেন। এবং সারাজীবন আর কোন সমস্যা হবে না সেটাও বললেন।

বললেন, আপনারা ডাক্তারকে ভগবান মানেন, অপারেশনের ক্ষেত্রে যাঁরা অ্যানেসথেসিয়া করেন তাঁদেরকেই আমরা ভগবান বলি। কারণ এটা যদি উনিশ বিশ হয় তাহলে রোগীর অনেক বড় ক্ষতি হতে পারে। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলাম, যেন সবকিছু ঠিকঠাক হয়।

ডা. অপারেশনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত খুবই আন্তরিকতার সাথে দেখাশোনা করলেন এবং দশদিন পর আবার যোগাযোগ করতে বললেন। আমরা দশদিন পর গেলাম, চেক আপ হলো এবং কোন সমস্যা হলে হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে যোগাযোগ করতে বললেন। আমরা ডাক্তারের কাছে অনেক আস্থা রেখে রোগী নিয়ে যাই যাতে সুস্থ শরীর নিয়ে ফিরে আসতে পারি। বেশি ক্রিটিক্যাল অবস্থা হলে সেটা অন্য কথা। ডাক্তারদেরও উচিত ভালো ব্যবহার ও চিকিৎসা দিয়ে রোগীকে সুস্থ করে ফিরিয়ে দেয়া।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমাস্টার্স পরীক্ষার রুটিন পরিবর্তন করা হোক
পরবর্তী নিবন্ধনৈতিকতা বিবর্জিত আমাদের ছাত্র রাজনীতি : আমরা কী শিক্ষা দিচ্ছি?