চালের বাজার বারবার অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা রুখতে হবে

| বৃহস্পতিবার , ২৫ আগস্ট, ২০২২ at ৫:৫০ পূর্বাহ্ণ

চালের দাম বেড়েই চলেছে। সরবরাহে কোনো সংকট নেই। তারপরও চালের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। মানুষ কথায় কথায় একটা কথা বলে। সেটি হলো কারণ ছাড়া কার্যের উৎপত্তি হয় না। চালের দাম বাড়ারও কোনো না কোনো কারণ আছে। সেটা কী? পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর দেশের প্রধান দুটি চালের বাজারে প্রতি কেজি চালের দাম ৪-৫ টাকা বেড়ে গেছে। এ জন্য মিলমালিকেরা ধানের বাড়তি দাম ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিকে দায়ী করছেন। তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে খরচ যতটা বেড়েছে, তার চেয়ে অনেক বেশি দাম বেড়েছে বাজারে। অযৌক্তিক এ মূল্যবৃদ্ধির জন্য ‘চাল সিন্ডিকেট’কে দায়ী করেছেন অনেক মিলমালিক। তাঁরা বলছেন, চালের বাজারে সরকারের তদারকির অভাবে প্রভাবশালী মিলমালিকেরা বাড়তি মুনাফার জন্য ইচ্ছামতো দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। এ সুযোগ নিতে তাঁরা ‘জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিকে’ বড় অজুহাত দেখাচ্ছেন।
ব্যবসায়ীদের কারো কারো বক্তব্য হলো, ধানের বড় অংশই কৃষকের কাছ থেকে কিনে নিয়েছে ফড়িয়া ও মিলাররা। তাদের চাল বাজারে ছাড়ার কথা। তারা তা না করে গুদামে আটকে রেখেছে। মিলারদের কাছ থেকে চালের পর্যাপ্ত সরবরাহ বাজারে আসছে না। এ কারণে চালের সংকট ও দাম দুই বেড়েছে বা বাড়ছে। খুচরা, পাইকারি ও মিলারদের একে অপরকে দোষারোপ করার একটা প্রবণতাও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। খুচরা বিক্রেতারা বলছে, পাইকারি বাজারে দাম বাড়ার কারণে তারা বাড়াতে বাধ্য হচ্ছে। আবার পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছে, মিলাররা চাল সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে, দামও বাড়িয়েছে। ফলে তাদের বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। মিলারদের বক্তব্য, গ্রামে ধান পাওয়া যাচ্ছে না। বিভিন্ন কোম্পানি ধান কিনে আটকে রেখেছে। ধান সংকটের কারণে ধান ও চালের দাম বেড়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, এভাবে পরস্পর দোষারোপের ব্যাপারটি বহু পুরনো। চালের দাম যখন বাড়ে তখন সংশ্লিষ্ট কেউই দায় নিতে রাজি হয় না। একে অপরকে দায়ী করে গা বাঁচানোর চেষ্টা করে। মাঝখান থেকে ক্রেতা-ভোক্তার পকেট কাটা যায়। তাদের সুবিধা-অসুবিধা দেখার কেউ নেই। চাল বা খাদ্যশস্যের বাজারের ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। বাজার ব্যবস্থাপনা বলতে যা বুঝায়, তারও কোনো বালাই নেই। চালের দাম বাড়লে, কেন বাড়ছে তা সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ খোঁজ-খবর করে না। কোথাও কোনো বিভ্রাট, সংকট বা ঘোঁট থাকলে তার মীমাংসার চেষ্টা করে না।
বোরো ও আমনের বাম্পার ফলন এবং জাতীয় পর্যায়ে খাদ্যের মজুত ২০ লাখ টনের বেশি থাকার পরও কীভাবে চালের দাম বাড়ছে তা নিয়ে কিছুদিন আগে প্রশ্ন করেছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধনচন্দ্র মজুমদার। মন্ত্রী হুঁশিয়ার করে বলেছিলেন, লাফিয়ে লাফিয়ে চালের দাম বৃদ্ধি বরদাশত করা হবে না। তিনি বলেন, গত বছর যেখানে আম্পানে ফসলের ক্ষতি হয়েছে, প্রকিউরমেন্ট হয়নি, জাতীয় পর্যায়ে খাদ্যের মজুত ছিল মাত্র ৪ লাখ মেট্রিক টন সেখানেও চালের দাম বৃদ্ধি করতে দেওয়া হয়নি। অথচ এ বছর চালের দাম বাড়ছে।
তিনি বলেন, যারা অবৈধ মজুত করে চালের দাম বৃদ্ধির পাঁয়তারা করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এজন্য মিলাররা ধান ৩০ দিন ও চাল ১৫ দিনের বেশি মজুত করে রাখতে পাারবে না। যারা অবৈধভাবে মজুত করে রাখবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্যদিকে মিলাররা বলেন, তারা চালের দাম বৃদ্ধি করেননি। যারা অবৈধ মজুতদার রয়েছে, মধ্যস্বত্বভোগী রয়েছে তারাই চালের দাম বৃদ্ধি করছে।
সরকারের তরফে যেভাবেই বলা হোক না কেন, দেশে খাদ্যশস্যের কোনো সঙ্কট নেই, দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এ কথা ন্যায়সঙ্গত মূল্য নিশ্চিত করার পক্ষে যথেষ্ট হতে পারে না বলে বিশেষজ্ঞরা মন্তব্য করেছেন। এ কথা সত্যি যে, দেশে ধান-চালের অভাব নেই। প্রয়োজনে আমদানির ব্যবস্থাও আছে এবং আমদানিও হয়ে থাকে। কিনতু তবু কেন চালের দাম বাড়ে, সেটা নিয়ে ভাববার সময় এসেছে। বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে দেশকে একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাওয়ার চক্রান্ত কিনা-সেটা দেখতে হবে। এর পেছনে কোনো কারসাজি থাকলে তা ভেঙে দিতে হবে এবং দায়ীপক্ষের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধউরুগুয়ের জাতীয় দিবস