চার মাসেও সচল হয়নি ব্র্যাকিথেরাপি মেশিন

চমেক হাসপাতালের ক্যান্সার ওয়ার্ড বিপাকে জরায়ু ক্যান্সারের রোগীরা

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৫:৫৩ পূর্বাহ্ণ

জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত নারীদের ৯০ শতাংশেরই একটা সময়ে ব্র্যাকিথেরাপি নিতে হয়। অর্থাৎ জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্তদের জন্য এই থেরাপি অনেকটা অপরিহার্য। তবে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের রেডিওথেরাপি (ক্যান্সার) ওয়ার্ডে থাকা একমাত্র ব্র্যাকিথেরাপি মেশিনটি প্রায় চার মাসেও সচল হয়নি। কয়েকটি পার্টস নষ্ট হওয়ায় গত ৬ জুন থেকে মেশিনটি অকেজো হয়ে পড়ে আছে।
ফলে প্রায় চার মাস ধরেই ব্র্যাকিথেরাপি সেবাও বন্ধ রয়েছে এ হাসপাতালে। এতে করে চরম বিপাকে পড়েছেন জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত চট্টগ্রামের রোগীরা। চিকিৎসকরা বলছেন, চমেক হাসপাতাল ছাড়া সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে চট্টগ্রামের অন্য কোন প্রতিষ্ঠানেই এই ব্র্যাকিথেরাপি মেশিন নেই। কিন্তু এ অঞ্চলের একমাত্র মেশিনটি (চমেক হাসপাতালের) অচল থাকায় বাধ্য হয়ে ঢাকায় গিয়েই এই ব্র্যাকিথেরাপি সেবা নিতে হচ্ছে বৃহত্তর চট্টগ্রামের রোগীদের। মেশিনটি অকেজো হওয়ার পরপরই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে লিখিত ভাবে বিষয়টি অবহিত করা হয় বলে জানান রেডিওথেরাপি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সাজ্জাদ মোহাম্মদ ইউসুফ।
আর এ বিষয়ে সিএমএসডি (কেন্দ্রীয় ওষুধাগার)’র সাথে দফায় দফায় যোগাযোগ রাখা হচ্ছে জানিয়ে চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান আজাদীকে বলেন, ডিপার্টমেন্ট থেকে অবহিত হওয়ার পরপরই বিষয়টি আমরা সিএমএসডি- কে লিখিত ভাবে জানাই। মাঝখানে মেশিনটি সচল হয়েছে কী না, তা চিঠি দিয়ে সিএমএসডি আমাদের কাছে জানতে চেয়েছিল। তবে মেশিনটি সচল না হওয়ার বিষয়টি আমরা পুনরায় সিএমএসডি-কে জানিয়ে দিই। সিএমএসডি’র পক্ষ থেকে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে কয়েক দফায় তাগাদা দেয়া হয়েছে জানিয়ে হাসপাতাল পরিচালক বলেন, তবে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মেশিনটি সরবরাহ বাবদ বিলের একটি অংশ বকেয়া থাকার কথা জানিয়েছে। যদিও এখন সে জটিলতার সমাধান হয়েছে বলে সিএমএসডি জানিয়েছে। অর্থাৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান তাদের বকেয়া বিল পেয়ে যাচ্ছে। এতে করে অল্প সময়ের মধ্যেই ব্র্যাকিথেরাপি মেশিনটি সচল হবে বলে আশ্বস্ত করেন হাসপাতাল পরিচালক। ক্যান্সার ওয়ার্ড সংশ্লিষ্টরা বলছেন, থেরাপি সেবা দেওয়ার সময় গত ৬ জুন ব্র্যাকিথেরাপি মেশিনটি হঠাৎ করে অকোজে হয়ে পড়ে। এর পরপরই মোবাইল ও ই-মেইলের মাধ্যমে মেশিনটির সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে বিষয়টি জানানো হয়। গত ১৫ জুন তাদের (সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের) প্রকৌশলী এসে মেশিনটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। নষ্ট হওয়ায় তারা মেশিনটির কয়েকটি পার্টস (টাউথ বেল্ট ও লাইট বেরিয়ার) পরিবর্তন ও সার্ভিসিংয়ের কথা বলেছেন।
বিষয়টি গত ১৬ জুন লিখিত ভাবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে রেডিওথেরাপি বিভাগ। এর প্রেক্ষিতে ২১ জুন সিএমএসডির পরিচালক বরাবর চিঠি দেয় হাসপাতাল প্রশাসন। হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. অং সুই প্রু মারমার স্বাক্ষরে ওই চিঠি দেয়া হয়। ব্র্যাকিথেরাপি মেশিনটি ব্যবহার অনুপযোগী হওয়ায় চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে উল্লেখ করে জরুরি ভিত্তিতে মেশিনটি মেরামতের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয় চিঠিতে।
এ নিয়ে গত ২৬ জুলাই দৈনিক আজাদীর প্রথম পাতায় ‘৬ কোটি টাকার ব্র্যাকিথেরাপি মেশিন দুই মাস ধরে অচল/চমেক হাসপাতালের ক্যান্সার ওয়ার্ড’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তবে এরপর আরো দুই মাস কেটে গেলেও মেশিনটি সচল হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রেডিওথেরাপি বিভাগে সপ্তাহে দুদিন এই ব্র্যাকিথেরাপি সেবা দেয়া হয়ে থাকে। জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৩-৪ বার এ ব্র্যাকিথেরাপি দিতে হয়। প্রতিবার থেরাপিতে খরচ পড়ে দেড় হাজার টাকা। কিন্তু একমাত্র মেশিনটি অচল থাকায় বিপাকে পড়েছেন চট্টগ্রামের জরায়ু ক্যান্সারের রোগীরা। জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্তদের ৯০ শতাংশ রোগীর এই ব্র্যাকিথেরাপি গ্রহণ অপরিহার্য জানিয়ে রেডিওথেরাপি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আলী আসগর চৌধুরী বলছেন- জরায়ু ক্যান্সার ছাড়াও খাদ্য নালীর ক্যান্সার, মুখের ক্যান্সার ও জিহ্বার ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের যাদের বাইরে থেকে রেডিওথেরাপি দিয়েও কাজ হয় না এবং যাদের অপারেশনও করা যায়না, সেসব রোগীকে ব্র্যাকিথেরাপি দেওয়ার সুযোগ থাকে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চট্টগ্রামের সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে অন্য কোন স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানে দ্বিতীয় কোন ব্র্যাকিথেরাপি মেশিন নেই। দ্বিতীয় কোন মেশিন না থাকা এবং চমেক হাসপাতালের একমাত্র মেশিনটির সেবা বন্ধ থাকায় চট্টগ্রামের জরায়ু ক্যান্সারের রোগীরা কষ্টে পড়েছেন। রোগীদের মধ্যে যাদের জরুরি ভাবে ব্র্যাকিথেরাপি প্রয়োজন, তাদের এখন ঢাকায় গিয়ে এই থেরাপি দেওয়া ছাড়া উপায় নেই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৮ বিয়ে, বহু প্রতারণা কোটিপতি নীলা এবার জেলে
পরবর্তী নিবন্ধসাইফ পাওয়ারটেকের সঙ্গে দুবাইয়ের শাফিন ফিডারের চুক্তি