চামড়া শিল্পের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে

| বৃহস্পতিবার , ১৪ জুলাই, ২০২২ at ৬:১০ পূর্বাহ্ণ

গত কয়েক বছরের মতো এবারও প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের অপতৎপরতায় কোরবানির পশুর চামড়া ব্যবসার চরম ক্ষতি হয়েছে। ঈদুল আজহার আগে সরকার কোরবানির পশুর চামড়ার যে দর নির্ধারণ করে দিয়েছিল সেই দরে চামড়া বিক্রি করতে পারেননি বিক্রেতারা। আগের বছরগুলোর ধারাবাহিকতায় এবারো নামমাত্র মূল্যে চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন তারা। চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করে সরকারের দায়িত্ব শেষ হয় না, সেই মূল্য কার্যকর করার পদক্ষেপও নিতে হয়। এবছরও সেই তদারকি না থাকায় বিনিয়োগকারীরা ক্ষতির শিকার হয়েছেন।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোরবানির পশুর চামড়ার দামের বিপর্যয়কর এ অবস্থা এক যুগেরও বেশি সময়ের। তবে ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত যে মহাবিপর্যয়কর ও ভয়াবহ পরিস্থ্‌িতি তৈরি হয়েছিল, এ বছর তেমনটি হয়নি। ন্যায্য মূল্য তো নয়ই, কোথাও সরকারের বেঁধে দেওয়া দরেও চামড়া কেনাবেচা হয়নি। তবে গতবারের তুলনায় চামড়াপ্রতি ঢাকায় ১০০-২০০ টাকা, দেশের অন্যত্র ৫০-১০০ টাকা বেশি দর পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে। ছাগলের চামড়ার বেশিরভাগ গত বছরের মতো নষ্ট হয়েছে। তবে ক্রেতার অভাবে বা দাম না পেয়ে গত বছরের মতো গরুর চামড়া নষ্ট বা পুঁতে ফেলার ঘটনা ঘটেনি। চামড়ার দাম কমার কারণ হিসেবে বড় মৌসুমি ব্যবসায়ী, আড়তদার ও ট্যানারি মালিকদের দাবি, সাভারের চামড়া শিল্প নগরী পুরোপুরি আন্তর্জাতিক ‘কমপ্লায়েন্স’ অনুসরণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রকৃত আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যে রপ্তানি করা যাচ্ছে না। কেমিক্যাল, লবণ ও শ্রমিক মজুরিকেও দায়ী করলেন তাঁরা। তারপরও চাহিদা অনুযায়ী এ বছর চামড়া না পাওয়ায় গতবারের তুলনায় আকার ভেদে চামড়াপ্রতি ১০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত বেশি দাম দিয়েছেন। অর্থাৎ চামড়ার দাম গত বছরের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। তবে এটাও ঠিক, চামড়ার প্রকৃত দাম হওয়া উচিত বা এক যুগ আগের তুলনায়ও এবারের বাজারদর চারভাগের একভাগও নয়। শহরের বাইরের অবস্থা অতটা স্বস্তিদায়ক নয়। গ্রামাঞ্চল তো বটেই সব মফস্বল শহর, এমনকি জেলা ও বিভাগীয় শহরেও বিক্রেতারা চামড়ার ভালো দাম পাননি। ৫ থেকে ৭ লাখ টাকার বড় গরুর চামড়ার দামও কোথাও কোথাও দুইশ টাকা, কোথাও পাঁচশ টাকা সেধেছেন ছোট মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। গত তিন বছরে ব্যবসায় মন্দা থাকায় এ বছর পাড়া-মহল্লাভিত্তিক ছোট মৌসুমি ব্যবসায়ীর সংখ্যা ছিল কম। কোরবানিদাতারাও চামড়া বিক্রির অপেক্ষায় না থেকে মাদ্রাসা, এতিমখানা বা মসজিদে দান করেছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের অপতৎপরতা ন্যক্কারজনক। তাঁরা বলেন, কয়েক বছর ধরে কোরবানির পশুর চামড়ার দাম নিয়ে চামড়া ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট তৈরি করে কৃত্রিমভাবে দাম মাত্রাতিরিক্তভাবে কমিয়ে রেখে অস্বাভাবিক মুনাফা লুটে নেয়। চামড়ার দাম থেকে প্রাপ্ত অর্থের হকদার হচ্ছে গরিব ও এতিমরা। দাম কমানোর ফলে গরিব ও এতিমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গরিবদের ঠকিয়ে একদল ধনী সিন্ডিকেট করে, মুনাফা লুটে নিচ্ছে। এটা কাম্য হতে পারে না। তাঁরা বলেন, সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল বছরের এই সময়ে চামড়ার মূল্য ও বাজারের সঙ্গে কোটি কোটি প্রান্তিক হতদরিদ্র ও ভাগ্যবিড়ম্বিত মানুষের স্বার্থের বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে ব্যর্থ হচ্ছে। কাঁচা চামড়ার মূল্য অস্বাভাবিক কমিয়ে নির্ধারণের ফলে চোরাচালান বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা এবং যথাযথ নজরদারির বিষয়েও তাদের ব্যর্থতা লক্ষ্যণীয়। অন্যদিকে সাভারে চামড়াশিল্প স্থানান্তর প্রক্রিয়া ও অস্বাভাবিক সময়ক্ষেপণ ও স্বেচ্ছাচারিতার ধারাবাহিক ঘটনাবলি সামগ্রিকভাবে দেশের চামড়া শিল্পের ওপর বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করছে।
আমাদের বুঝতে হবে যে আমাদের চামড়া শিল্পের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা প্রচুর। আগামী দশকে চামড়া শিল্প থেকে কমপক্ষে ৫ বিলিয়ন ডলার রফতানি আয়ের আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। ধান, পাট ও লবণ চাষিদের মতো চামড়ার প্রান্তিক যোগানদাতারা মূল্য কারসাজি ও মধ্যস্বত্বভোগীদের খপ্পরে পড়েছে। তাই চামড়ার বাণিজ্যিক সম্ভাবনার পাশাপাশি কোরবানির পশুর চামড়ার সুবিধাভোগি হতদরিদ্র ও এতিম-মিসকিনদের অধিকার বঞ্চনার এ অপকর্মকাণ্ড বন্ধ করতে হবে। ইতোমধ্যে তৈরি সমস্ত সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করা জরুরি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে