চাঁদের অভিমান

সুবর্ণা দাশ মুনমুন | বুধবার , ৬ জুলাই, ২০২২ at ১০:৫৮ পূর্বাহ্ণ

লক্ষ লক্ষ যুগ আগের কথা। সে যে কত আগের কথা এখন আর ঠিক মনে নেই। তখনও কোন মানুষের জন্ম হয়নি। পৃথিবীতে ছিলনা কোন প্রানের অস্তিত্ব। আকাশজুড়ে শুধু গ্রহ, উপগ্রহ আর নক্ষত্রের দূরন্ত ছুটোছুটি।

এমনি একদিন ঠিক হলো সূর্যের জন্মদিন পালন করা হবে। নেমন্তন্ন পেল আটটি গ্রহ, সাথে তাদের উপগ্রহেরাও। বাদ গেলনা উল্কা, ধূমকেতু, আর মিষ্টি মিষ্টি তারারাও। পৃথিবীর তখন অল্প বয়েস। চাঁদতো আরো ছোট। সাদা চন্দনের মতো আলোয় রাঙা ধবধবে ফর্সা এক কিশোর যেন।
সন্ধ্যে নামতেই শুরু হলো জন্মদিনের তোড়জোড়।

জন্মদিনের বেলুন ফুলোনো, সারি সারি করে তারাদের সাজানো সব দায়িত্বই সবচেয়ে ছোট্ট গ্রহ বুধের কাঁধে। বুধ আবার সূর্যের সবচেয়ে কাছের বন্ধু কিনা,তাই তার ছুটোছুটিও বেশি।

একটু বাদেই সূর্যের জন্যে ঠান্ডা জলের ঝর্না উপহার নিয়ে এলো সবুজ গ্রহ ইউরেনাস। তার পেছন পেছন ৮২ টি উপগ্রহের দলবল নিয়ে এসে হাজির হলো শনি।
দুচারজন বাদে আমন্ত্রিতরা প্রায় সবাই এসে গেল। গ্রহরাজ বৃহস্পতিও তাই তাড়া দিল এবার যেন কেক কাটার আয়োজন করা হয়।

ওদিকে জন্মদিনকে উৎসবমুখর করতে ধূমকেতুও নানা বুদ্ধি আঁটছিল। হঠাৎ সবাইকে চমকে দিয়ে সে সূর্যের দিকে মুখ করে উড়তে শুরু করল।অমনি সূর্যের উত্তাপে তার গায়ের বরফ গলে গ্যাসের মতো উড়ে যেতে থাকলো। দেখে মনে হলো যেন ঝাড়ুর আকৃতির আলোর রোশনায় ছুটে চলেছে আকাশে।

সবাই এসব দেখে আনন্দে হাততালি দিয়ে উঠলো।এমন হুলুস্থুলের মধ্যেই এল জমজ দুই গ্রহ পৃথিবী এবং শুক্র। সাথে পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদ।যেইনা চাঁদ পা রাখলো অনুষ্ঠানে অমনি তার মখমলে আলোয় ঝলমল করে উঠলো চারপাশ। চাঁদের চোখ ধাঁধানো মিষ্টি রুপে মোহিত হলো সবাই।

লাল গ্রহ মঙ্গল বলে উঠলো,” এতো সুন্দর মিষ্টি আলোয় ভরা এই ছোট্ট অতিথিকে পেয়ে আমরা যারপরনাই খুশি।সৌরজগতে এমন অনুপম সুন্দর একটি উপগ্রহ আছে আমরাতো কেউ জানতামই না।”

তারপর একে একে সবাই চাঁদের খুব প্রশংসা করলো।আর এসব দেখে মনে মনে গাল ফুলিয়ে বসলো সূর্য। তারই জন্মদিনের অনুষ্ঠানে এসে তাকে ফেলে চাঁদের পৃশংসায় মেতেছে সবাই।

মন খারাপ হতেই সূর্যের গায়ে গ্রহণ লাগলো। পৃথিবী আর সমস্ত সৌরজগতের বুকে নেমে এলো অন্ধকার।

একে একে সবাই বুঝালো সূর্যকে কিন্তু কিছুতেই কিছু হলোনা। তার শুধু এক কথা, “সৌরজগতে আমিই রাজা,আমাকে ঘিরেই সবার জীবন। আর প্রশংসার বেলায় কেবল চাঁদ”?

এবার চাঁদের পালা। ছোট্ট চাঁদ এসব দেখে ভয়ে একেবারে জড়োসড়ো। কাঁপাকাঁপা গলায় শুধু বললো, “সূয্যিমামা, আমিতো অনেক দূর থেকে আপনাকে কেবল দেখি আর ভাবি, কত মহানুভব আপনি।সারাদিন নিজে জ্বলে সবাইকে আলো দিয়ে বেড়ান।আর এইযে আমি,আমারতো নিজের বলে কিছুই নেই। আপনার আলোয় আলোকিত আমি, আর সেই আপনি কিনা আমার উপর রাগ করছেন?

ভুল ভাঙলো সূর্যের। বারবার ক্ষমা চাইতে লাগলো চাঁদসহ সবার কাছে।মুখ কালো করে বলতে লাগলো, “আমার অনেক উত্তাপ, সারাদিন আগুনের হলকায় জ্বলতে থাকি আমি। তাই বেশকম হলেই এত রাগ হয় যে নিজেকে সামলাতে পারিনা।

সূর্যের এমন কথায় সবাই আবার হাসিখুশি হয়ে উঠলো। অনেক আনন্দ করে কাটা হলো কেক।জন্মদিনের কেক খেয়ে খুশি মনে বাড়ি ফিরলো সবাই।
কিন্তু ছোট্ট চাঁদের মনে সূর্যের প্রতি একটুকরো অভিমান জমেই রইলো।

মনে মনে শুধু বললো, “এত বিশাল যে সূর্য, এত যার সৌর্যবীর্য তার মনে কেবল অহংকার ভর্তি। এতটুকু মায়াও সে করলো না আমার মতো ছোট্ট একটা চাঁদের প্রতি”?

আর এই অভিমানেই চাঁদ আর কোনদিন সূর্যের সামনে গেলনা।

তখন থেকেই প্রতিদিন সন্ধ্যায় সূর্য ডুবলে পরে আকাশজুড়ে মিষ্টি একটা চাঁদের দেখা মেলে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাচ্চার দুধ কেনার টাকাও নেই, শ্রীলঙ্কায় লঙ্গরখানায় বাড়ছে মুখ
পরবর্তী নিবন্ধখুশির ঈদ