চট্টগ্রাম স্বপ্ন দেখে, স্বপ্ন দেখায়

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ৪ ডিসেম্বর, ২০২২ at ১০:৫২ পূর্বাহ্ণ

অমিত সম্ভাবনার দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে অপ্রতিরোধ্য গতিতে। চট্টগ্রাম যদি এগিয়ে যায়, তাহলে বাংলাদেশ এগোবে। চট্টগ্রাম সব কাজে এগিয়ে থাকে-এটা পরীক্ষিত সত্য। আমরা চট্টগ্রামের মানুষ যা বিশ্বাস করি, তাই পারি। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রথম সংগ্রাম শুরু হয় এ চট্টগ্রাম থেকেই। তিন দিনের জন্য আমরা চট্টগ্রাম ব্রিটিশের দখলমুক্ত রেখেছিলাম। ভাষা আন্দোলনের প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়েছিল চট্টগ্রামের কোহিনূর প্রেস থেকে। ১৯৭১ সালের ১৭ ডিসেম্বর দৈনিক আজাদীর পৃষ্ঠা জুড়ে বাংলাদেশের বিজয় তথা স্বাধীনতা লাভের প্রথম সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। স্বাধীনতার ঊষালগ্নে প্রকাশিত প্রথম দৈনিক ‘আজাদী’র লাল কালির ব্যানার শিরোনাম ছিল ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জয় বাংলাকে জাতীয় স্লোগান হিসেবে ঘোষণা করেছেন। নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস, তিনিও চট্টগ্রামের কৃতী সন্তান। এক কথায় বলা যায়, বিপ্লবী সূর্যসেন আর প্রীতিলতার স্মৃতিধন্য চট্টগ্রাম ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ থেকে সব সংগ্রামে বাংলা আর বাঙালিকে পথ দেখিয়েছে।

ইংরেজ সরকারের কাছে চট্টগ্রাম ছিল প্রাচ্যের রানি। ১৯২০ সালে অসহযোগ আন্দোলনে চট্টগ্রামের মানুষের গণজোয়ার দেখে মহাত্মা গান্ধী ‘তরুণ ভারত’ সাপ্তাহিকে লিখেছিলেন, ‘চট্টগ্রাম সবার আগে’। বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে একুশে পদকপ্রাপ্ত সমাজবিজ্ঞানী ড. অনুপম সেন আজাদীকে বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আর সেই রাষ্ট্রটিকে বিশ্বসভায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনা।

চট্টগ্রামের প্রতি তাঁর এক ধরনের দুর্বলতা যেমন আছে, একইভাবে তাঁর দূরদৃষ্টির মধ্য দিয়ে তিনি অনুধাবন করেছিলেন, দেশের উন্নয়ন করতে হলে চট্টগ্রামের উন্নয়ন জরুরি। তাছাড়া চট্টগ্রামের প্রতি, চট্টগ্রামের মানুষের প্রতি শেখ হাসিনার এক ধরনের মায়া আছে। তিনি নিজেই বলেছেন, ‘চট্টগ্রামের সাথে আমার পৃথক সম্পর্ক রয়েছে। আপনারা বলতে পারেন… ছোটবেলা থেকে এটি আমার দ্বিতীয় বাড়ি।’

ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে চট্টগ্রামের গুরুত্ব অপরিসীম। পৃথিবীর সম্ভাবনাময় দুটি অর্থনৈতিক জোট সার্ক এবং আশিয়ানের সংযোগস্থল এই চট্টগ্রাম। তাই আঞ্চলিক যোগাযোগ উন্নয়নের ক্ষেত্রে এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে এই শহরের গুরুত্ব অত্যধিক। অনুপম সেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ করেছেন, যাতে কর্ণফুলীর দুই পাড়ে সাংহাইয়ের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ হিসেবে গড়ে তোলা যায়।

কর্ণফুলী নদীর তীরে অবস্থিত চট্টগ্রাম শহর ঐতিহাসিক কাল থেকেই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র। কর্ণফুলী নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায় অবস্থিত চট্টগ্রাম বন্দর দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের প্রধান মাধ্যম। দেশের মোট আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের শতকরা নব্বই ভাগ চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েল কোম্পানির প্রধান কার্যালয় ও ডিপো চট্টগ্রামে। চট্টগ্রামেই অবস্থিত দেশের একমাত্র জ্বালানি তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারি। বর্তমান সরকারের গৃহীত বেশ কিছু উন্নয়ন প্রজেক্ট বাস্তবায়নের মাধ্যমে চট্টগ্রাম এখন উন্নয়নের মহাসড়কে হাঁটছে। আর চট্টগ্রামের উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশও হাঁটছে উন্নয়নের মহাসড়কে।

ড. অনপুম সেন বলেন, শেখ হাসিনার হাত ধরে চট্টগ্রাম বন্দর পেয়েছে নতুন রূপ, সংযুক্ত হয়েছে আধুনিক যন্ত্রপাতি, চালু হয়েছে সিটিএমএস, সংযোজিত হয়েছে নতুন নতুন ইয়ার্ড ও সার্ভিস জেটি, বন্দরের সক্ষমতা বেড়েছে বহু গুণ। বেড়েছে রাজস্ব অর্জনের পরিমাণ। পতেঙ্গা এলাকায় ৪টি জেটি নিয়ে চালু হতে যাচ্ছে পিসিটি। পতেঙ্গা, হালিশহর, কাট্টলী অংশের সমুদ্র পাড়ে তৈরি হচ্ছে জোয়ার-ভাটার যেকোনো সময়েই মাদার ভেসেল বার্থিং করতে সক্ষমতা সম্পন্ন বে টার্মিনাল।

এছাড়া মহেশখালীতে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের কাজও এগিয়ে চলেছে। বাঁশখালীর গণ্ডামারা ও মহেশখালীর মাতারবাড়িতে নির্মিত হচ্ছে বৃহৎ আকারের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। দক্ষিণ চট্টগ্রাম, বান্দরবান, কক্সবাজারের সাথে সারা দেশের যোগাযোগ সহজতর করতে কর্ণফুলীর তলদেশ দিয়ে দুই টিউব বিশিষ্ট দক্ষিণ এশিয়ার দীর্ঘতম সুড়ঙ্গ সড়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণ করা হচ্চে। পতেঙ্গা হতে ফৌজদারহাট পর্যন্ত সমুদ্র তীর ধরে নির্মিত হয়েছে মেরিন ড্রাইভ সিটি আউটার রিং রোড। বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরী, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন হচ্ছে। এছাড়া যোগাযোগে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। এর ফলে চট্টগ্রামসহ এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক, সামাজিক অবস্থা এবং মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর দূরদৃষ্টির মাধ্যমে চট্টগ্রামের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হচ্ছে, তেমনি ত্বরান্বিত হচ্ছে দেশের উন্নয়ন; অর্থাৎ চট্টগ্রামের উন্নয়নের মাধ্যমে পুরো বাংলাদেশেরই উন্নয়ন হবে এবং দেশ এখন উন্নয়নের সেই মহাসড়কেই হাঁটছে। এ উন্নয়ন ও দিন বদলের নেতৃত্বে রয়েছেন বিশ্বব্যাপী সমাদৃত, জাতির জনকের কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হবে ছয় লেনের
পরবর্তী নিবন্ধশীঘ্রই হবে বিশেষায়িত প্রতিবন্ধী স্কুলের শিক্ষকদের এমপিওভুক্তি