চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল চিকিৎসা সেবায় সাফল্য ও অগ্রযাত্রার ৪৩ বছর

মো. রেজাউল করিম আজাদ | শনিবার , ৩১ ডিসেম্বর, ২০২২ at ৫:১৭ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল’ চট্টগ্রাম শহরের আগ্রাবাদ এলাকায় অবস্থিত সম্পূর্ণ বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত একটি স্বেচ্ছাসেবী, জনহিতকর ও স্বাস্থ্য সেবামূলক হাসপাতাল। ১৯৭৯ সালের ৩১শে ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক শিশু বর্ষ উপলক্ষে চট্টগ্রামের কিছু মহৎ প্রাণ সমাজ হিতৈষি ব্যক্তিবর্গের উদ্যোগে এই হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ইতোমধ্যে এই হাসপাতাল সফলতার সাথে তার প্রতিষ্ঠার ৪৩ বছর পার করেছে। প্রাথমিক ভাবে শুধুমাত্র শিশু স্বাস্থ্য বহির্বিভাগের মাধ্যমে এই হাসপাতালের যাত্রা শুরু হলেও বর্তমানে এটি সকল বিশেষায়িত চিকিৎসা সেবা সহ ৮৫০ শয্যার একটি পূর্ণাঙ্গ জেনারেল হাসপাতাল হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে। হাসপাতালের আন্তঃ ও বহির্বিভাগে বিশেষায়িত চিকিৎসা সেবা সহ সকল প্রকার চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, মহামারি করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল প্রথম বেসরকারি হাসপাতাল হিসেবে চিকিৎসা সেবায় এগিয়ে আসে। করোনা চিকিৎসায় ২৮৭৭২ জন রোগীকে এই হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিমের মাধ্যমে করোনা আক্রান্ত রোগীদের বাসায় গিয়ে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। করোনা মোকাবেলায় বিভিন্ন রকম সাহায্য সহযোগিতার মাধ্যমে যারা হাসপাতালের পাশে ছিলেন তাদেরকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।

বর্তমানে হাসপাতালের বহির্বিভাগ প্রতিদিন সকাল ৮.০০টা থেকে রাত ৮.০০টা পর্যন্ত খোলা থাকে। এছাড়া ২৪ ঘণ্টা ইমার্জেন্সি ও এএমইউ সার্ভিস, ব্লাড ব্যাংক, লাশবাহী ফ্রিজার এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, সাধারণ এ্যাম্বুলেন্স ও আইসিইউ এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস এবং ল্যাবরেটরী সার্ভিস সহ জরুরি সেবাসমূহ চালু রয়েছে। বর্তমানে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের অধীনে নিম্নবর্ণিত প্রকল্পসমূহ অত্যন্ত সফলতার সাথে পরিচালিত হচ্ছে।

. চট্টগ্রাম মাশিশু ও জেনারেল হাসপাতাল। ২. চট্টগ্রাম মাশিশু হাসপাতাল মেডিকেল কলেজ। ৩. চট্টগ্রাম মাশিশু হাসপাতাল ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথ। ৪. চট্টগ্রাম মাশিশু হাসপাতাল নার্সিং ইনস্টিটিউট। ৫. চমাশিহা শামসুন নাহার খান নার্সিং কলেজ। ৬. চমাশিহা অটিজম এন্ড চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টার। ৭. চমাশিহা ক্যান্সার হাসপাতাল এন্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট (নির্মাণাধীন)। ৮. প্রস্তাবিত চট্টগ্রাম মাশিশু হাসপাতাল মেডিকেল কলেজ ডেন্টাল ইউনিট। ৯. প্রস্তাবিত বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব বৃদ্ধ নিবাস, রাউজান, চট্টগ্রাম। ১০. প্রস্তাবিত সায়মা ওয়াজেদ অটিজম ইনস্টিটিউট এন্ড হোম, রাউজান, চট্টগ্রাম। ১১. প্রস্তাবিতচমাশিহা নিওরোসাইন্স ইনস্টিটিউট।

ক্যান্সার হাসপাতাল এন্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট

চট্টগ্রামে ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসা সেবার জন্য আমরা চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের অধীনে অন্যতম প্রকল্প হিসেবে একটি অত্যাধুনিক ক্যান্সার হাসপাতাল ও রিসার্চ ইনস্টিটিউট স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। উক্ত ক্যান্সার হাসপাতাল স্থাপনের নির্মাণ কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। ইতোমধ্যে বাংকার নির্মাণসহ ৪ তলা পর্যন্ত ছাদ ঢালাইয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। অত্যাধুনিক ক্যান্সার মেশিন খরহবধৎ অপপবষবৎধঃড়ৎ মেশিন আমদানীর জন্য এলসি খোলা হয়েছে। উক্ত মেশিনের কিছু কিছু যন্ত্রাংশ ইতোমধ্যে আসা শুরু হয়েছে। আমরা আশা করি আগামী ১ জুলাই ২০২৩ থেকে পূর্ণাঙ্গ রূপে এই ক্যান্সার হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু করা যাবে এবং ক্যান্সার রোগীদের রেডিওথেরাপি সহ পরিপূর্ণ চিকিৎসা সেবা শুরু করা যাবে। ক্যান্সার হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম শুরু করা গেলে এই অঞ্চলের ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসার জন্য আর বাইরে যেতে হবে না। এই প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামবাসীর প্রতিষ্ঠান।

অত্যাধুনিক সিসিইউ ও ক্যাথল্যাব

চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের অধীনে নতুন ভবনে ইতোমধ্যে আমরা ৩৪ শয্যা বিশিষ্ট অত্যাধুনিক সিসিইউ ও ক্যাথ ল্যাব চালু করেছি। আমাদের জানা মতে বেসরকারী পর্যায়ে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের এই সিসিইউ সর্ববৃহৎ পরিসরে পরিচালিত হচ্ছে। এই বিভাগের অধীনে সম্প্রতি স্থাপিত হয়েছে অত্যাধুনিক ক্যাথ ল্যাব। হাসপাতালের অন্যতম মেগা ডোনার মরহুম সৈয়দ মোহাম্মদ নুরুদ্দিন সাহেব ও তার পরিবারের অর্থায়নে এই ক্যাথ ল্যাব চালু করা হয়েছে। নামমাত্র মূল্যে প্রতিদিন ক্যাথ ল্যাবে এনজিওগ্রাম সহ ইন্টারভেনশন প্রসিডিউর করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের জন্য এটি আরেকটি মাইল ফলক।

অত্যাধুনিক আইসিইউ ও এইচডিইউ

আমরা আরো আনন্দের সাথে জানাচ্ছি যে, ৩১ শে ডিসেম্বর হাসপাতালের ৪৩ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে নতুন হাসপাতাল ভবনে শুরু হতে যাচ্ছে ৩০ শয্যা বিশিষ্ট অত্যাধুনিক আইসিইউ ও এইচডিইউ। বেসরকারি পর্যায়ে এটিও হবে চট্টগ্রামে সর্ববৃহৎ আইসিইউ ও এইচডিইউ। নতুন এই আইসিইউ ও এইচডিইউ চালুর মাধ্যমে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল চিকিৎসা সেবায় আরেকটি মাইলফলক অতিক্রম করবে। নতুন বছরে এটি হবে চট্টগ্রামবাসীর জন্য আরেকটি বড় সুখবর।

৮৫০ শয্যা বিশিষ্ট নতুন হাসপাতাল ভবনের নির্মাণ কাজ

আমাদের স্বপ্নের মেগা প্রকল্প ৮৫০ শয্যা বিশিষ্ট নতুন হাসপাতাল ভবনের ১৩ তলা পর্যন্ত নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে ফিনিশিং কাজ চলমান আছে। ৬ষ্ঠ তলা পর্যন্ত ইতোমধ্যে চালু করা হয়েছে এবং হাসপাতালের প্রশাসন বিভাগ, বহির্বিভাগসহ আন্তঃ বিভাগের অধিকাংশ বিভাগ স্থানান্তর করা হয়েছে। বাকি বিভাগগুলোও পর্যায়ক্রমে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। ইতোমধ্যে ৫ হাজার কেভিএ বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন চালু করা হয়েছে এবং সেন্ট্রাল এয়ারকন্ডিশন (এইচভিএসি) এর কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সম্পন্ন হওয়ার পথে। নতুন হাসপাতাল ভবন সম্পূর্ণভাবে চালু হলে এটি চিকিৎসা সেবায় বৃহত্তর চট্টগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

৩১শে ডিসেম্বর চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের ৪৩ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে হাসপাতালের সকল আজীবন সদস্য, পৃষ্ঠপোষক, ডোনার, ডাক্তার, নার্স, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি রইল প্রাণঢালা অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।

লেখক : জেনারেল সেক্রেটারি, কার্যনির্বাহী কমিটি, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিদায়ী সূর্যের চুম্বন
পরবর্তী নিবন্ধহল্যান্ড থেকে