চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ে গতি

সিংগাপুর-কলম্বো থেকে সকালে আসা জাহাজ বিকেলেই ভিড়ছে জেটিতে

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ১ অক্টোবর, ২০২১ at ৫:৩৭ পূর্বাহ্ণ

বিশ্বের প্রথম সারির বন্দরগুলোতে ভয়াবহ রকমের জট বিরাজ করলেও চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ ভিড়ছে সরাসরি। গত দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ হ্যান্ডলিং কার্যক্রম অভাবনীয় পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে। সকালে এসে বিকেলে বার্থিং নেয়ার মতো ঘটনা ঘটছে। গত প্রায় দুই মাসে ২৯৯টি জাহাজ কন্টেনার নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে এলেও এরমধ্যে পরিবহন ধর্মঘটের সময় কেবলমাত্র ২টি জাহাজকে চারদিন অপেক্ষা করতে হয়েছে। এর বাইরে মাত্র ১৮টি জাহাজকে তিনদিন অপেক্ষা করতে হয়েছে। ৪৯টি জাহাজকে বার্থিং নিতে হয়েছে দুইদিন অপেক্ষার পর। বাকি সব জাহাজই এক দিনের মধ্যে বার্থিং পেয়েছে। ইউরোপ আমেরিকা এবং এশিয়ার শীর্ষস্থানীয় বন্দরগুলো জট নিয়ে যখন দিশেহারা তখন চট্টগ্রাম বন্দরের এই বিশেষ ম্যাকানিজম আন্তর্জাতিক শিপিং সেক্টরে পজেটিভ ইমেজ সৃষ্টি করছে।
বন্দর সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেনার এবং জাহাজ জট প্রকট আকার ধারণ করেছিল। বিশেষ করে বিগত লকডাউন, ঈদের ছুটি এবং প্রাকৃতিক প্রতিকূলতায় বন্দর পরিস্থিতি বেসমাল হয়ে উঠেছিল। বন্দরে জাহাজ জট এবং কন্টেনার জটে দিশেহারা হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। খালি কন্টেনারের অভাব, বেসরকারি আইসিডি থেকে পণ্য সরবরাহে সংকটসহ নানা কারণে জট কেবলই তীব্র হচ্ছিল। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছিল যে জাহাজ থেকে কন্টেনার খালাসে সংকট তৈরি হয়েছিল। ইয়ার্ডে দেখা দিয়েছিল স্থান সংকট। বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং আমদানি রপ্তানিকারকেরা বিষয়টি নিয়ে যখন উদ্বিগ্ন তখন বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রস্তাবনায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়। বেসরকারি আইসিডিগুলোকে ব্যবহার করা হয় বন্দরের মতোই। ৩৮ ধরনের পণ্যের পাশাপাশি আমদানিকৃত সকল ধরণের পণ্যই গত ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বেসরকারি ১৯টি আইসিডি থেকে খালাস করা হয়। একই সাথে বন্দরের শীর্ষ কর্মকর্তারা অফিসের পরিবর্তে ইয়ার্ডে গিয়ে কন্টেনার হ্যান্ডলিং কার্যক্রম তদারকি করতে থাকেন। এতে করে অতি দ্রুতই বন্দর পরিস্থিতির উন্নতি ঘটতে থাকে। এর ফলে সিংগাপুর কলম্বো থেকে শুরু করে হংকং, সাংহাই, কিংবা ইউরোপ আমেরিকার বন্দরগুলোতে করোনাকালে জট তৈরি হলেও বিনা জটে কন্টেনার এবং জাহাজ হ্যান্ডলিং করছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। আমদানিকারকেরা বলেছেন, সকালে এসে বিকেলের মধ্যে জেটিতে কন্টেনার নামতে শুরু করলে স্বস্তি তো দেখা দেবেই।
বন্দর কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা গত ৮ আগস্ট এবং ৩০ সেপ্টেম্বর প্রায় দুই মাসে বন্দরে ২৯৯টি কন্টেনার জাহাজের উপর পরিচালিত সমীক্ষার কথা উল্লেখ করে বলেন, এই সময়ে কেবলমাত্র ২টি জাহাজকে বহির্নোঙরে চারদিন অপেক্ষা করে বার্থিং নিতে হয়েছে। মাত্র ১৮টি জাহাজকে অপেক্ষা করতে হয়েছিল ৩দিন। ৪৯টি জাহাজ ২দিন অপেক্ষা করে বার্থিং নেয়। ১১০টি জাহাজ বার্থিং নিয়েছে ১দিন অপেক্ষার পর। সিংগাপুর কিংবা কলম্বো থেকে সকালে বহির্নোঙরে পৌঁছে বিকেলে কিংবা বহির্নোঙরে কোনো ধরনের অপেক্ষা না করে সরাসরি বার্থিং নিয়েছে ১২৩ টি জাহাজ। অথচ গত জুলাই মাসেও বার্থিংয়ের জন্য দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হচ্ছিল। ৫/৭দিন অপেক্ষা না করে কোনো জাহাজই বার্থিং নিতে পারছিল না। জোয়ার ভাটা নির্ভর চট্টগ্রাম বন্দরে অনেক সময় জোয়ারের জন্যও জাহাজকে বাড়তি অবস্থান করতে হয়। জোয়ারের আগে বহির্নোঙরে না পৌঁছলে ওই জাহাজকে ওইদিন ভিড়ানো সম্ভব হয় না। এরমাঝেও দিনে দিনে বহির্নোঙরে পৌঁছে জেটিতে বার্থিং নিয়ে কন্টেনার খালাসের ঘটনা বেশ ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলেও মন্তব্য করেছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা। তারা বলেন, এই ধারা ধরে রাখতে পারলে বিশ্বের শিপিং সেক্টরে চট্টগ্রাম বন্দরের ইমেজ ভিন্ন উচ্চতায় পৌঁছাবে।
বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, আমরা বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছি। এর সুফল মিলতে শুরু করেছে। সকালে এসে বিকেলে জেটিতে বার্থিং নেয়ার ব্যাপারটিতেই প্রমাণ হয়, বন্দরের সার্বিক কার্যক্রমে ব্যাপক গতিশীলতা তৈরি হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনাসির-তামিমাকে আদালতের সমন
পরবর্তী নিবন্ধঢাবির ক ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা আজ চবিতে