চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়বে চার গুণ

২৫ সালের মধ্যে মাতারবাড়ী পোর্ট ও বে টার্মিনাল প্রস্তুত হওয়ার আশা অর্জন ও সম্ভাবনার কথা শোনালেন বন্দর চেয়ারম্যান

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২৫ এপ্রিল, ২০২২ at ৫:৫৭ পূর্বাহ্ণ

১৩৫তম চট্টগ্রাম বন্দর দিবস আজ। ১৮৮৭ সালে পোর্ট কমিশনার্স অ্যাক্ট প্রণয়ন করে ব্রিটিশ সরকার। তার পরের বছরের ২৫ এপ্রিল সেটি কার্যকর করা হয়। সেই থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে চট্টগ্রাম বন্দর। এদিকে চট্টগ্রাম বন্দর দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। চট্টগ্রাম বন্দর দিবসকে কেন্দ্র করে গতকাল বিকালে চট্টগ্রাম বন্দরের শহীদ মো. ফজলুর রহমান মুন্সী মিলনায়তনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভার আয়োজন করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান।

তিনি বলেন, আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে নির্মাণাধীন মাতারবাড়ী পোর্ট ও বে টার্মিনাল প্রস্তুত হবে বলে আমরা আশা করছি। প্রকল্প দুটি বাস্তবায়ন হলে বন্দরের সক্ষমতা ৩-৪ গুণ বাড়বে। লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, বে টার্মিনাল প্রকল্প এলাকায় ব্যক্তি মালিকানাধীন ৬৭ একর জমির দলিল ২০২১ সালের অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে বন্দর কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। প্রকল্পের আরও ৮০৩ একর জমি প্রতীকী মূল্যে বন্দর কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর করার জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়েছে। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে এ বিষয়ে আলাপ আলোচনা চলছে।

বে টার্মিনালে নিজস্ব অর্থায়নে দেড় হাজার মিটার দীর্ঘ মাল্টিপারপাস টার্মিনাল এবং পিপিপিতে ১ হাজার ২২৫ মিটার ও ৮০০ মিটার দীর্ঘ ২টি কন্টেনার টার্মিনাল নির্মাণের লক্ষ্যে কাজ করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে বন্দর জেটিতে জোয়ারের সময় গড়ে সাড়ে ৪ ঘণ্টা সাড়ে ৯ মিটার গভীরতার ও ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ ভিড়তে পারে। বে টার্মিনাল হলে রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা এর বেশি গভীরতার জাহাজ ভিড়তে পারবে। এছাড়া গত ৩০ মার্চ মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের ২৮৩ দশমিক ২৭ একর জমি কক্সবাজার জেলা প্রশাসন বন্দর কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দিয়েছে। বন্দর নির্মাণকাজের জন্য ঠিকাদার নিয়োগের লক্ষ্যে সহসা দরপত্র আহ্বান করা হবে। মাতারবাড়ী টার্মিনাল হলে ১৬ মিটারের বেশি ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারবে।

বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, ইতোমধ্যে বছরে সাড়ে ৪ লাখ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের লক্ষ্যে পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনালের (পিসিটি) নির্মাণের কাজ ৯০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। বন্দরের ১ হাজার ২২৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকায় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। ৬০০ মিটার জেটিতে একসঙ্গে ১৯০ মিটার লম্বা ও সাড়ে ৯ মিটার ড্রাফটের তিনটি কন্টেনার জাহাজ ও ২২০ মিটার লম্বা ডলফিন জেটিতে একটি তেলবাহী জাহাজ ভিড়ানো যাবে। আগামী জুলাইতে পিসিটির কার্যক্রম শুরু হবে আশা করি।

তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ইউরোপের পথে সরাসরি শিপিং সার্ভিস চালু আরএমজি পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে সমুদ্রপথে নতুন মাইলফলক সৃষ্টি হয়েছে। এমভি সোঙ্গা চিতা ৯৫২ কন্টেনার পণ্য নিয়ে গত ৭ ফেব্রুয়ারি বন্দর ছেড়েছিল। চট্টগ্রাম থেকে ইউএসএ রুটেও সরাসরি জাহাজ চলাচলের সুযোগ রয়েছে। বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে এক দশকে ৫ লাখ ৮০ হাজার বর্গমিটার ইয়ার্ড তৈরি করায় কন্টেনার ধারণক্ষমতা ৫৫ হাজারে উন্নীত হয়েছে। পোর্ট লিমিট ৭ নটিক্যাল মাইল থেকে ৫০ নটিক্যাল মাইলে উন্নীত করা হয়েছে। পোর্ট লজিস্টিক সক্ষমতা বাড়াতে কাণ্ডারী ৬ ও ১২ নামের দুটি টাগবোট, দুটি মুরিং লঞ্চ, দুটি সাইট স্ক্যান সোনার, দুটি ইকো সাউন্ডার, একটি সমুদ্রগামী হারবার টাগবোট সংগ্রহ করা হয়েছে। গত এক দশকে শিপ টু শোর কি গ্যান্ট্রি ক্রেন, মোবাইল হারবার ক্রেন, রাবার টায়ারড গ্যান্ট্রি ক্রেনসহ বিভিন্ন ধরনের ৩৯০টি কার্গো ও কন্টেনার হ্যান্ডলিং ইক্যুইপমেন্ট সংগ্রহ করা হয়েছে।

বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, বেসরকারি আইসিডিতে বিনিয়োগে উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে নানা ছাড় দেওয়া হচ্ছে। বন্দরের এক নম্বর জেটি গেটের কাছে মাল্টি স্টোরেড কার শেড নির্মাণ করা হচ্ছে। বিপজ্জনক, তেজস্ক্রিয় ও রাসায়নিক পণ্য নিরাপদে আমদানি-রপ্তানির সুবিধার্থে স্টেট অব আর্ট কেমিক্যাল শেড গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তিনি জানান, চট্টগ্রাম বন্দরে ২০২১ সালে কন্টেনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ৩২ লাখ ১৪ হাজার টিইইউএস, প্রবৃদ্ধি ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ। জেনারেল কার্গো ওঠানামা হয়েছে ১১ কোটি ৬৬ লাখ টন, প্রবৃদ্ধি প্রায় ১৩ শতাংশ। জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছে ৪ হাজার ২০৯টি, প্রবৃদ্ধি ১৩ শতাংশ। এ অর্জন বন্দরের ৩০ বছর মেয়াদি প্রক্ষেপণ ছাড়িয়ে গেছে।

রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, কর্ণফুলী নদীর বহির্নোঙর থেকে কাপ্তাই ড্যাম পর্যন্ত ডিটেইল হাইড্রোলজিক্যাল এবং হাইড্রোলিক স্টাডি করা হচ্ছে। একটি ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান স্টাডিটি সম্পন্ন করছে। এই স্টাডি সম্পন্ন হলে সহসা চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের এবং ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব হবে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের কোনো জায়গা এখন আর অবৈধ দখলে নেই। কিছুদিন আগে আমরা ফিরিঙ্গিবাজারে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করেছি। এছাড়া কিছু জমিতে মামলা আছে। মামলায় রায় হলেই কর্ণফুলীপাড়ের সব অবৈধ বসতি উচ্ছেদ করা হবে। ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ক্যাপিটাল ড্রেজিং চলছে। চলতি বছরের জুন মাসে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের কাজ শেষ হবে।

মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (অর্থ) কামরুল আমিন, সদস্য (হারবার ও মেরিন) কমডোর মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান, সদস্য (প্রকৌশল) ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান প্রমুখ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচসিকের অস্থায়ীদের স্থায়ী হওয়ার পথ সুগম হচ্ছে
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম বন্দরকে বিশ্বমানের করতে সরকার কাজ করছে : প্রধানমন্ত্রী