চসিকের অস্থায়ীদের স্থায়ী হওয়ার পথ সুগম হচ্ছে

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর প্রাথমিক সিদ্ধান্ত দিয়েছে মন্ত্রণালয়

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২৫ এপ্রিল, ২০২২ at ৫:৫৬ পূর্বাহ্ণ

অবশেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপের পর চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে (চসিক) কর্মরত অস্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের দাবি ‘স্থায়ী’ হওয়ার পথ সুগম হচ্ছে। জনবল কাঠামোভুক্ত শূন্য পদের বিপরীতে অস্থায়ীদের স্থায়ী বা নিয়মিতকরণের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। গতকাল সকালে স্থানীয় সরকার বিভাগে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত দেয়া হয়। বৈঠকে উপস্থিত চসিকের একাধিক কর্মকর্তা বিষয়টি আজাদীকে নিশ্চিত করেছেন। চসিকের সচিব খালেদ মাহমুদ আজাদীকে বলেন, বৈঠকে মোটামুটি পজিটিভ আলোচনা হয়েছে। সমস্যা সমাধানের জন্য ইতিবাচকভাবে চিন্তা করতে বলেছে মন্ত্রণালয়। ‘অস্থায়ীদের স্থায়ী করা হবে কিনা’ জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্থায়ীকরণ হতে পারে। তবে কীভাবে করা যায় তার উপায় নির্ধারণের একটা বিষয় আছে। যে যে পদের জন্য যোগ্য তাকে সে পদের জন্য বাছাই করা হবে। সেক্ষেত্রে রিটেন পরীক্ষা বা ভাইভার মাধ্যমে যোগ্যদের সিলেক্ট করে স্থায়ী করা হতে পারে। তবে যেহেতু এখনো রেজ্যুলেশন পাইনি তাই নিশ্চিত করা বলা যাবে না।

চসিক সূত্রে জানা গেছে, চসিকে অনুমোদিত জনবল কাঠামোর বিপরীতে ১ হাজার ৫৪৫টি শূন্য পদ রয়েছে। অথচ সংস্থাটিতে বর্তমানে অস্থায়ী কর্মরত আছেন ৭ হাজার জন, যাদের অনেকেই গত ২০ বছরের অধিক সময় ধরে কর্মরত। শূন্য পদ পূরণে একাধিকবার উদ্যোগ নিয়েছিল চসিক। সর্বশেষ গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ১৩ পদে ৬০ জন নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। তখন স্থায়ীকরণের মাধ্যমে শূন্য পদ পূরণের দাবিতে আন্দোলন করেন অস্থায়ীরা। পরে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি স্থগিত করে চসিক। মেয়রও চাকরি স্থায়ীকরণের আশ্বাস দেন। ফলে বড় ধরনের কর্মসূচি থেকে সরে আসেন তারা।

পরবর্তীতে ১৬ নভেম্বর স্থানীয় সরকার বিভাগে এ বিষয়ে দাপ্তরিক পত্র দেয় চসিক। এতে সাংগঠনিক কাঠামোভুক্ত শূন্য পদসমূহ অস্থায়ীভাবে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্থায়ীকরণের মাধ্যমে এবং অবশিষ্ট শূন্য পদসমূহ নিয়োগের মাধ্যমে পূরণে নির্দেশনা চাওয়া হয়। গত ৭ মার্চ চিঠিটির জবাব দেয় মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়, সিটি কর্পোরেশন আইন ২০০৯ এবং বিধিমালা ২০১৯ অনুযায়ী মানবিক কারণে অস্থায়ীভাবে কর্মরত কোনো কর্মচারীকে শূন্য পদে নিয়োগ প্রদানের সুযোগ নাই। এ খবরের পর আবারো ক্ষোভ জানায় অস্থায়ীভাবে কর্মরতরা। পরবর্তীতে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী ব্যক্তিগতভাবে বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। এ বিষয়ে অবগত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও।

গতকাল বৈঠকে উপস্থিত চসিকের এক কর্মকর্তা আজাদীকে জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার রাতেও স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিবকে বিষয়টি সমাধানের জন্য নির্দেশনা দেন বলে বৈঠকে আমাদের জানানো হয়। এদিকে গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত একনেক বৈঠকেও এ বিষয়ে নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। ওইদিন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, বৈঠকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে দীর্ঘদিন ধরে কিছু লোক দৈনিক ভিত্তিতে কাজ করার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদেরকে আইন-কানুনের আওতায় এনে সুযোগ দিয়ে রেগুলাইজ (নিয়মিত) করার একটা ব্যবস্থা করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর তৎপর হয় স্থানীয় সরকার বিভাগ। এর প্রেক্ষিতে গতকাল চসিকের অস্থায়ীদের ইস্যুতে বৈঠক আহ্বান করা হয়। সেখানে মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন বিভাগের অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিবরা অংশ নেন। এতে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শহীদুল আলম, সচিব খালেদ মাহমুদসহ বিভাগীয় প্রধানগণ উপস্থিত ছিলেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বিভাগীয় প্রধান বলেন, ঈদের পর থেকে স্থায়ীকরণ কার্যক্রম শুরু হবে। মাস দুয়েকের মধ্যে একটা রেজাল্ট আসবে।
দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলনরত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন অস্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিষদের আহ্বায়ক আবু তাহের বলেন, মন্ত্রণালয়ের বৈঠক থেকে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসায় আমরা সন্তুষ্ট।

উল্লেখ্য, চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে ২০২১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর পৌনে চার ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন অস্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ওই সময় স্থায়ীকরণের আশ্বাস দিলে কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়। পরে ৫ ডিসেম্বর সিটি মেয়রকে স্মারকলিপি প্রদান, ৮ ডিসেম্বর নগর ভবনের সামনে মানববন্ধন করা হয়। এরপর নতুন কর্মসূচির আভাস পেয়ে পুনরায় আশ্বাস দেয় চসিক কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সে আশ্বাস পূরণ হয়নি। সর্বশেষ গতকাল মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে।

এর আগে গত বছর নভেম্বর মাসে মন্ত্রণালয়ে দেয়া এক পত্রে চসিক লিখে, ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসের পর সিটি কর্পোরেশনের অধিকাংশ স্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারী অবসরে যাবেন। তখন সিটি কর্পোরেশনের অধিকাংশ পদই শূন্য হয়ে যাবে। তখন কর্পোরেশনের সার্বিক নাগরিক সেবা কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়বে। সেবা কার্যক্রম চালু রাখার স্বার্থে চলতি ডিম্বেরের মধ্যে আবশ্যিকভাবে শূন্য পদ পূরণ করা প্রয়োজন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধছিনতাইকারী ধরতে চলন্ত শাটল থেকে চবি ছাত্রীর লাফ
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়বে চার গুণ