চট্টগ্রামে মণ্ডপে হামলা যুব অধিকার পরিষদের ইন্ধনে

নূরের এ সংগঠনের ১০ জন গ্রেপ্তার এরা জামায়াত-শিবিরের সাবেক নেতাকর্মী : পুলিশ

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ২৩ অক্টোবর, ২০২১ at ৫:১৫ পূর্বাহ্ণ

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবের দশমী দিন জেএমসেন হলের পূজামণ্ডপে হামলা চালানো হয়েছে বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদের ইন্ধনে, যে সংগঠনটির মূল সংগঠন বাংলাদেশ গণ অধিকার পরিষদ। এটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর। গত ২১ অক্টোবর বৃহস্পতিবার নগরী ও জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে সংগঠনটির শীর্ষ দশ নেতা কর্মীকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ এ কথা জানায়। শুধু তা-ই নয়, পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদে এও জানতে পেরেছে যে গ্রেপ্তারকৃতরা ইতোপূর্বে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন যুব অধিকার পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগরের আহ্বায়ক মো. নাছির, সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার মিজানুর রহমান, বায়েজিদ বোস্তামী থানার আহ্বায়ক ডা. মো. রাসেল, নগর ছাত্র অধিকার আন্দোলনের দপ্তর সম্পাদক মো. ইমন, কর্মী ইয়ার মোহাম্মদ, জিয়া উদ্দিন, ইয়াসিন আরাফাত, হাবিবুল্লাহ, ইমরান হোসেন ও মো. মিজান।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নেজাম উদ্দিন আজাদীকে বলেন, আমরা জেএমসেন হলের পূজামন্ডপে হামলার চেষ্টার সময় ধারণকৃত ছবি এবং সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদের নেতাদের শনাক্ত করেছি। এ সংগঠনটির মূল সংগঠন বাংলাদেশ গণ অধিকার পরিষদ। গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে এ ঘটনায় জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। এরা জামায়াত শিবিরের সাবেক নেতা কর্মী। এদের মধ্যে হামলার পরিকল্পনাকারী, নেতৃত্বদাতাও আছে। তিনি বলেন, তাদের মোবাইল ফোনে গ্রুপ ম্যাসেজ থেকে তাদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে আমরা চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য পেয়েছি। আসামিদের মধ্যে সাতজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন মহানগর হাকিম শফিউদ্দিনের আদালত।
ওসি নেজাম উদ্দিন জানান, হামলার ঘটনার পরপরই টেরিবাজারের ব্যবসায়ী সমিতির এক নেতার আত্মীয় ইমরান মাজেদ রাহুলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তার মাধ্যমেই সেদিন টেরিবাজার এলাকার দোকান কর্মচারী, ঘাটফরহাদবেগ, খলিফাপট্টি এলাকার লোকজনকে মিছিলে সম্পৃক্ত করা হয়েছিল বলে তারা তদন্তে জানতে পেরেছেন। সে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, সেদিন মিছিলে বিএনপি জামায়াতের পাশাপাশি অপরিচিত কিছু লোক অংশ নেয় এবং তারা মিছিলকারীদের বারে বারে উত্তেজিত করার চেষ্টা করতে থাকে। পরিকল্পিতভাবে মিছিল করে তারা মণ্ডপে হামলার চেষ্টা চালায়। হামলার পরপর অভিযান শুরু হলে তারা বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে যায়। এরপর সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তাদের শনাক্ত করা হয়। তাদের গতিবিধি নজরে রেখে সাতকানিয়া উপজেলা থেকে নাছিরকে এবং নগরীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে অন্যদের গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, হামলার ঘটনার আগের দিন তারা হালিশহরে বৈঠক করেছিল। সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কোরআন অবমাননার দায়ে প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ করবে, পরে গোয়ালপাড়ার দিকে মিছিল সহকারে যাবে। ঘটনার দিন সংবাদ পায় তাদের কিছু লোক খলিফাপট্টি ও টেরিবাজার থেকে বের হয়ে আন্দরকিল্লা জামে মসজিদে নামাজ পড়ছে। সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে তারা ১৪ জন তিনটি সিএনজি টেক্সি যোগে আন্দরকিল্লা আসে। তাদের নেতৃত্ব দেন ইঞ্জিনিয়ার মিজান এবং ডা. রাসেল। মিছিল শুরু হলে তাদের উস্কানিতেই কিছু লোক জেএমসেন হলের দিকে ছুটে যায় এবং মণ্ডপে হামলা চালানোর চেষ্টা চালায়। না পেরে রাস্তার উপর থাকা পূজা উদযাপন পরিষদের বিভিন্ন ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে এবং মণ্ডপ লক্ষ্য করে ইট পাটকেল ছুঁড়ে। পরে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
ওসি বলেন, যুব অধিকার পরিষদ নেতা ইঞ্জিনিয়ার মিজানুর রহমান আগে ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। ফেইসবুক গ্রুপ বাঁশের কেল্লার অ্যাডমিন প্যানেলেরও সদস্য ছিলেন তিনি। শুধু তিনিই নন, গ্রেপ্তারকৃত প্রত্যেকেরই ব্যাকগ্রাউন্ড যাচাই করে আমরা জামায়াত শিবিরের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছি। তিনি বলেন, মিজান আমাদের কাছে স্বীকার করেছেন, বর্তমানে জামায়াত শিবির কোণঠাসা অবস্থায় থাকায় কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য তাদের একটা প্ল্যাটফরম প্রয়োজন ছিল। গত ছয় মাস আগে তারা যুব অধিকার পরিষদে যোগ দিয়েছেন।
এদিকে গতকাল শুক্রবার (২২ অক্টোবর) ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে চট্টগ্রামে পূজামণ্ডপে হামলার অভিযোগে বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদের নেতাকর্মী আটকের প্রতিবাদে কর্মসূচি থেকে সাবেক ভিপি নূর বলেন, মিছিলের ছবি দিয়ে হামলাকারী চিহ্নিত করা যায় না। এটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক কর্মকাণ্ড। আমরা এই সহিংসতার পেছনে বিএনপি বা আওয়ামী লীগকে দোষ দিতে চাই না। এসব হামলার সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধইকবালকে কুমিল্লা পুলিশের কাছে হস্তান্তর
পরবর্তী নিবন্ধদল করলে মানতে হবে দলীয় সিদ্ধান্ত