চট্টগ্রামে কোরবানির জন্য প্রস্তুত ৭ লাখ দেশি পশু

বাজারে কোনো ধরনের সংকট হবে না-অভিমত সংশ্লিষ্টদের

হাসান আকবর | শুক্রবার , ৯ জুন, ২০২৩ at ৫:০৭ পূর্বাহ্ণ

আসন্ন কোরবানি উপলক্ষে চট্টগ্রামে প্রায় ৭ লাখ পশু প্রস্তুত করা হচ্ছে। কোরবানি উপলক্ষে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার পশুর বাজারের সবকিছু ঠিকঠাক রাখতে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। চট্টগ্রামের খামার এবং বাড়িতে লালিত পশুগুলো চাঁদ দেখার দিন থেকে বিক্রি শুরু হবে। আসন্ন কোরবানিতে চট্টগ্রামে পশুর কোনো অভাব হবে না বলে জানিয়ে সূত্র বলেছে, কোরবানির বিশাল বাজার যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে প্রশাসনসহ সবার সতর্ক দৃষ্টি কামনা করা হয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রামে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ৩৫০টি খামার রয়েছে। গত বছর কয়েকে চট্টগ্রামে গরুর খামার খাতের বেশ বিস্তার ঘটেছে। বাজারে দাম পাওয়ায় অনেকেই ঝুঁকছে এই ব্যবসার দিকে। বহু শিক্ষিত লোকজনও খামার গড়ে তুলে শত শত গরু মোটাতাজা করছে। গরুর পাশাপাশি অসংখ্য মহিষ ছাগল ভেড়াও প্রস্তুত করা হয়েছে। এসব খামারে বিভিন্ন ব্যাংক কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। বিশ থেকে পঞ্চাশ কোটি টাকার গরু মহিষ রয়েছে এমন খামারের সংখ্যাও খুব কম নয়। পরিকল্পিত খামারের বাইরেও চট্টগ্রামের গ্রামেগঞ্জে পারিবারিকভাবে হাজার হাজার গরু ছাগল লালন পালন করা হচ্ছে। গ্রামেগঞ্জেও গড়ে উঠেছে অসংখ্য খামার। দুই থেকে দশবিশটি গরু মহিষ নিয়ে এক একটি খামার গড়ে তোলা হয়েছে। আবার ঘরের পাশে ছোট্ট একটি ঘর করে দুইটি গরু লালন পালন করছে এমন পরিবারের সংখ্যাও অনেক। বিভিন্ন এনজিও সংস্থাগুলোও পশু পালনে ঋণ প্রদান করেছে। অনেকেই বন্ধুবান্ধব বা আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়েও পশু পালন করছে। আবার অনেকেই পশু লালন পালনের জন্য টাকা পয়সা বিনিয়োগ করেছে। সবকিছু মিলে চট্টগ্রামে পশু পালন খাত বেশ বিকশিত হয়ে উঠেছে বলেও জেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগের একজন কর্মকর্তা মন্তব্য করেছেন।

চট্টগ্রামের নাহার এগ্রো লিমিটেডের পরিচালক মোহাম্মদ তানজিব জাওয়াদ রহমান বলেন, কোরবানি উপলক্ষে প্রস্তুতি চূড়ান্ত। খামারে সাড়ে পাঁচশ’র মতো গরু মোটাতাজা করা হয়েছে। এবার চট্টগ্রামের প্রতিটি খামারেই গরু মহিষ মোটাতাজাকরণ করা হয়েছে। তবে খরচ বেড়ে যাওয়ায় পশুর দাম অনেক বেশি পড়বে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ এবং পশুখাদ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। যার প্রভাব পড়বে কোরবানির বাজারে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রাণীসম্পদ বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় প্রচুর খামার গড়ে উঠেছে। এসব খামারে পরিকল্পিতভাবে গরু মহিষ ছাগল ও ভেড়া লালন পালন করা হয়েছে। চট্টগ্রামে এবার পশুর কোনো অভাব হবে না বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমদানির প্রয়োজন নেই। চট্টগ্রামেই পর্যাপ্ত পশু রয়েছে। বিদেশ থেকে কোনো পশু না আসলেও আমাদের পশু দিয়ে কোরবানির চাহিদা মিটিয়ে আরো উদ্বৃদ্ধ থাকবে। এর বাইরে দেশের উত্তরাঞ্চল থেকেও চট্টগ্রামে প্রচুর গরু মহিষ আনা হয়। বাজারে কোনো ধরনের সংকট পড়বে না বলে তিনি মন্তব্য করেন। তবে দাম বেশি হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, সবকিছুর দামই তো নাগালের বাইরে। পশুর দাম নাগালে থাকার আশা করে লাভ কি!

জেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগের অপর একজন কর্মকর্তা বলেছেন, চট্টগ্রামে সাত লাখেরও বেশি গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। এরমধ্যে ৪ লাখেরও বেশি গরু। প্রয়োজনীয় গরু চট্টগ্রামের খামারগুলোতে প্রস্তুত রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

চট্টগ্রাম জেলা ডেইরী এসোসিয়েশনের একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছে, কোরবানির বিশাল বাজার নিয়ে একটি চক্র সবসময় সক্রিয় থাকে। তারা বিদেশ থেকে পশু আমদানি এবং চোরাপথে পশু এনে দেশের খামারিদের ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করে। এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে বছর কয়েকের মধ্যে বিকশিত হওয়া বিরাট খাতটি ধ্বংস হয়ে যাবে। চোরাপথে দেশে যাতে কোনো পশু আনা না যায় সেদিকে সতর্ক থাকার জন্যও প্রশাসনের প্রতি আহবান জানানো হয়েছে।

গতকাল চট্টগ্রামের একাধিক খামারি বলেছেন, প্রচুর গরু মহিষ ছাগল ও ভেড়া প্রস্তুত। কোরবানির বাজার নিয়ে উদ্বেগ বা উৎকণ্ঠার কিছু নেই। প্রয়োজন মেটানোর মতো সক্ষমতা চট্টগ্রামে এই খাত অর্জন করেছে বলে মন্তব্য করে একাধিক খামারি বলেছেন, এই খাতকে লালন করতে হবে। অন্যথায় আগের মতো কোরবানির বাজারে পরনির্ভরতা বেড়ে যাবে। যা দেশের জন্য কল্যাণকর হবে না বলেও তারা মন্তব্য করেছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএইচএসসি পরীক্ষা শুরু ১৭ আগস্ট
পরবর্তী নিবন্ধখুলশীতে ১৭ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তার