চকরিয়ায় বন্ধ করা যাচ্ছে না চোরাচালানির পশুর হাট

অস্তিত্ব রক্ষার সংকটে দেশীয় খামারি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা

চকরিয়া প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৫:৫৪ পূর্বাহ্ণ

সীমান্ত পেরিয়ে চোরাচালানির মাধ্যমে দেশে ঢোকা অবৈধ পশুর অবৈধ হাট বন্ধ করে দেওয়া হবেএমন সিদ্ধান্ত চকরিয়া উপজেলা প্রশাসন থেকে নেওয়া হলেও বস্তুত তা কাগজেকলমেই সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে। গত ১২ জানুয়ারি আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় বিষয়টি উত্থাপনের পর তা রেজুলেশন আকারে লিপিবদ্ধ করা হয়। কিন্তু একমাসের বেশি সময় পার হলেও সেই সিদ্ধান্ত অকার্যকরই রয়ে গেছে। এরইমধ্যে গতকাল বুধবার ফের অনুষ্ঠিত হয়েছে চলতি মাসের আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা। সভায় পূর্বের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন কমিটির অনেক সদস্য।

অবশ্য উপজেলার বিভিন্ন স্থানে যারা অবৈধ পশুর হাট বসিয়েছেন তারা সরকারি দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এই কারণে প্রশাসনের কর্মকর্তারাও বেশ বেকায়দায় রয়েছেন এবং সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হচ্ছে না বলেও জানান কমিটির অনেক সদস্য।

এদিকে চকরিয়ার বেশ কয়েকটি জায়গায় চোরাচালানির মাধ্যমে দেশে ঢোকা থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারের গবাদি পশুর বিকিকিনি চলছে অনেকটা প্রকাশ্যেই। উপজেলার ফাঁসিয়াখালীর হাসেরদীঘির ঝনঝনি ব্রিজ, ডুলাহাজারার রংমহল, খুটাখালীসহ বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে হাট বসিয়ে এসব গবাদি পশুর বিকিকিনি অব্যাহত থাকায় মাথায় হাত উঠেছে দেশীয় খামারি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের। এসব হাটের সঙ্গে কারা জড়িত রয়েছে, এর অনুসন্ধান করতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে সরকারি দলের নেতাকর্মীদের জড়িত থাকার বিষয়টি।

গতকালের আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় সুরাজপুরমানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম বলেন, চোরাচালানির মাধ্যমে দেশে ঢোকা থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারের গবাদি পশুর কারণে দেশীয় খামারি এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা পথে বসার উপক্রম হয়েছে। গতবারের সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল, যেখানে অবৈধ পশুর হাট বসবে সেগুলো ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বন্ধ করা হবে। কিন্তু এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি। এতে সরকার যেমন এক টাকাও রাজস্ব পাচ্ছে না, তেমনি মার খাচ্ছে দেশীয় খামারি এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধি অভিযোগ করেন, চোরাচালানির এই অবৈধ পশু নিয়ে অবৈধ কারবারের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত রয়েছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের কিছু নেতা। সাথে রয়েছেন কিছু চিহ্নিত ও দাগী অপরাধীও। সিন্ডিকেটটি ফাঁসিয়াখালীর হাসেরদীঘির কাছে ঝনঝনি ব্রিজ এলাকায় মহাসড়কের পশ্চিম পাশে অবৈধ হাট বসিয়ে দিব্যি পশু বিকিকিনি করছেন। আর পূর্বাংশে গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ টার্মিনালও। যেখানে অর্ধশত ট্রাক সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে।

ফাঁসিখালীর ঝনঝনি ব্রিজ এলাকায় চোরাচালানির অবৈধ পশুর হাটে গেলে কথা হয় পৌরসভার চার নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবলু করিমের সঙ্গে। এ সময় প্রশ্নোত্তরে বাবলু করিম দাবি করেন, হাটটি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই পরিচালনা করেন।

অবশ্য চোরাচালানির পশুর কারবারে জড়িত আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কঙবাজারের বিভিন্ন উপজেলায় এই ধরনের পশু বিকিকিনি চলছে। তাই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও চকরিয়ায় ব্যবসা করছে। এতে দোষের কিছু দেখছি না। যদি প্রশাসন বন্ধ করে দেয়, তাহলে সেটা ভিন্ন বিষয়।

চকরিয়া থানার ওসি চন্দন কুমার দাশ গতকালের সভায় বলেন, চোরাচালানির অবৈধ পশুর হাট বন্ধে পুলিশের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। তবে স্ব স্ব ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা যদি এগিয়ে আসতেন তাহলে বিষয়টি ভালোভাবেই রোধ করা যেত।

এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি ও চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান আজাদীকে বলেন, কোথায় কোথায় চোরাচালানির পশুর বিকিকিনি চলছে, সেই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। অচিরেই এসব অবৈধ হাট বন্ধ করে দেওয়া হবে। যাতে দেশীয় খামারী এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা টিকে থাকতে পারে।

এদিকে আমাদের নাইক্ষ্যংছড়ি প্রতিনিধি জানান, গত এক সপ্তাহর ব্যবধানে নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ বিজিবি ৮৯টি বার্মিজ চোরাই গরু জব্দ করেছে। বুধবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বিজিবি জানায়, তারা নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের বিভিন্ন পযেন্টে অভিযান চালিয়ে এ সব গবাদি পশু জব্দ করে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ১৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া সম্ভব নগরের বর্জ্য থেকে
পরবর্তী নিবন্ধপতেঙ্গায় নারীসহ তিন প্রতারক গ্রেপ্তার