গৌরবময় বিজয়ের মাস

মর্জিনা হক চৌধুরী পপি | সোমবার , ১৩ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৮:৪৮ পূর্বাহ্ণ

১৬ডিসেম্বর। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তি সংগ্রামের পর বিজয় অর্জনের দিন। আমাদের মহান বিজয় দিবস। বিজয়ের ৫০ বছর পূর্ণ হয়ে এদিন ৫১ বছরে পদার্পণ করবে সুজলা সুফলা শষ্য শ্যামলে ভরা আমাদের এই মাতৃভূমি। পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষনবঞ্চনার অবসান ঘটিয়ে মুক্তিকামী মানুষ ১৯৭১সালের আজকের দিনে অর্জন করেছিলো বিজয়। গণতন্ত্রের চেতনা স্বাধীনতা অর্জনের মাধ্যমে পূর্ণতা পেয়েছিলো আজকের এই দিনে। অগনিত মানুষের আত্মত্যাগ আর সীমাহীন কষ্টের প্রহর কেটে নতুন সূর্যোদয় ঘটেছিলো ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। বিজয়ের এ মাসের সাথে জড়িয়ে আছে কোটি মানুষের আবেগময় স্মৃতি। বিশেষ করে যারা বিজয় দেখেছেন মুক্তি যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। গোটা বিজয় মাসই তাদের কাছে একটি পরম পাওয়ার মাস। বাঙ্গালি জাতির বীরত্ব সাহসিকতা ও ত্যাগের উজ্বল মহিমায় ভাস্বর এ মাসটি। এ মাসে জাতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবে সেই সব বীর সেনানীর উদ্দ্যেশে, যারা শোষন বঞ্চনার অবসান ঘটিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুখী – সমৃদ্ধ বাংলাদেশ উপহার দেয়ার লক্ষ্যে অবতীর্ণ হয়েছিলেন সর্বস্ব ত্যাগের লড়াইয়ে।।বাংলার শোষিত মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের সংগ্রামকে বুটের তলায় স্তব্ধ করে দেয়ার জন্য ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ রাতের অন্ধকারে বর্বর এক অপারেশনের নামে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। আলোচনার গোল টেবিলে শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ পরিত্যাগ করে তারা বন্দুকের নল আর কামানের গোলা বেছে নেয় সমাধানের উপায় হিসেবে। যুদ্ধ চাপিয়ে দেয় আমাদের উপর। নিরস্ত্র ঘুমন্ত মানুষকে নির্বিচারে হত্যায় মেতে উঠে অস্ত্রের জোরে বলিয়ান সামরিক শাসকগোষ্ঠী। শুরু হয় মুক্তির লড়াই দেশকে শত্রুমুক্ত মুক্তিযুদ্ধ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে দেশের সর্বস্তরের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে ছিনিয়ে আনে স্বাধীনতার লাল সূর্য। দীর্ঘ ৯ মাসের অসম যুদ্ধ শেষে এই ডিসেম্বর মাসে স্বাধীনতা নামক সাফল্য ধরা দেয় এদেশের মানুষের কাছে। বিজয় মাস এলে পাওয়া না পাওয়ার হিসেব আমাদের সামনে এসে দাঁড়ায়। এ অঞ্চলের মানুষের চাওয়া ও বেশী ছিলো না পশ্চিম পাকিস্তানের কাছে। দাবি ছিলো আমাদের যেটুকু প্রাপ্য আমাদের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হোক। বৈষম্য ও শোষন বন্ধ করা হোক।সে স্বপ্ন সাধ ও আকাঙ্‌ক্ষা কোনটাই পূরন হয়নি। তাই সেদিন একটি স্বাধীন দেশের জন্য মুক্তিকামী মানুষরা জীবনের মায়া তুচ্ছ করে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো। ২৬ শে মার্চ থেকে শুরু হয় চূড়ান্ত লড়াই। দীর্ঘ ৯ মাস মুক্তিসংগ্রামের পর পরাজয় মেনে নেয় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। ১৯৭১ সালের আজকের দিনে রেসকোর্স ময়দানে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ৯১ হাজার ৪৯৮ জন নিয়মিত অনিয়মিত আধা সামরিক সৈন্য নিয়ে ইস্টার্ন কমান্ডের প্রধান লে : জেনারেল আমির আব্দুল্লাহ খান নিয়াজি আত্মসমর্পণ করেন সম্মিলিত বাহিনীর প্রধান জেনারেল জগজিৎ সিং আরোরার কাছে। শুরু হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের পথচলা। পৃথিবীর মানচিত্রে নতুন জাতি- রাষ্ট্র হিসেবে অভ্যুদয় ঘটে বাংলাদেশের।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশীতার্তদের পাশে দাঁড়ান
পরবর্তী নিবন্ধস্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি