স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি

বিভাস গুহ | সোমবার , ১৩ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৮:৪৮ পূর্বাহ্ণ

১৯৭১ সালের ডিসেম্বর বাঙালি জাতির জন্য অবিস্মরণীয় এক মাস। আনন্দ বেদনার মহাকাব্যিক এক মাস। এ মাসেই বাঙালি জাতি অর্জন করেছিল বহু কাঙ্ক্ষিত প্রত্যাশিত স্বাধীনতা। হাজার হাজার মানুষের নির্মম নির্যাতন নিপীড়ন আর অত্যাচারের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের লাল সবুজের পতাকা আমাদের প্রিয় স্বাধীনতা।
স্বাধীনতা অর্জনের ৫০ বছরে পদার্পণ করেছি আমরা। স্বাধীনতার এ সুবর্ণ জয়ন্তীতে এসে আমাদের অর্জন অনেক। সাফল্যের চূড়ায় যুক্ত হয়েছে হাজারো পালক। আমাদের প্রিয় স্বদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত হয়েছে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানিরা এদেশকে ধ্বংস স্তুপে পরিণত করে দিয়েছিল। সে যুদ্ধবিধ্বস্ত ধ্বংসস্তুপের উপর দাঁড়িয়ে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন তখনই ১৯৭৫ এর আগস্ট মাসে স্বাধীনতা বিরোধীদের চক্রান্তে বিপদগামী উচ্চবিলাসী কিছু সেনাসদস্যের হাতে বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর পরিবারকে জীবন দিতে হল। শুরু হল সামরিক শাসকের অভুত্থান। সামরিক শাসন কোনোদিন কোনোকালে কোনোদেশে দেশ এবং জনগণের জন্য সুফল বয়ে আনতে পারে না। বাংলাদেশেও পারে নি। অবশেষে ১৯৯০ সালে এসে সামরিক শাসকের পতন ঘটল মুক্তি পেল দীর্ঘদিন অবরুদ্ধ থাকা গণতন্ত্র। পুনরায় শুরু হল গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা। কিন্তু জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হল না। মানুষ জেগে উঠল। ২০০৮ সালে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তিকে জনগণ ক্ষমতায় বসাল। ক্ষমতায় এসে দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেকে সঁপে দিলেন। বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং আদর্শের ধ্বজা বহনকারী দল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন। এ দেশকে যারা স্বাধীন করেছে তাঁদের ঋণ কো কোনোদিন শোধ করা যাবে না তবুও তাঁদের ত্যাগকে সম্মান দেখিয়ে সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বৃদ্ধি করেছে নিঃসন্দেহে একটি সময়োপযোগি পদক্ষেপ সরকারের। দেশের জন্য যাঁরা নিজের প্রাণের মমতা ছেড়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল তাঁদের ঋণ অপরিশোধ্য। তারপরও ক্ষুদ্র প্রচেষ্ঠা সরকারের।
স্বাধীনতার মহানায়ককে যাঁরা হত্যা করেছে রাতের আঁধারে, তাদের বিচারের রায় কার্যকর হয়েছে। দুর্নীতি, বেকারত্ব অভিশাপ থেকে দেশ অনেকটা মুক্ত হয়েছে। বেড়েছে মাথাপিছু আয়। সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গীবাদ থেকে মুক্ত আজ দেশ। নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ এগিয়েছে অনেক দূর। সারা দেশ বিদ্যুতায়নের আওতায় এসেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ আজ আর স্বপ্ন নয় বাস্তবে রূপ লাভ করেছে। অজ পাড়া গাঁয়ের মানুষও আজ মোবাইলে বিশ্ব দেখছে। শিক্ষার আশানুরূপ অগ্রগতি হয়েছে, কমেছে দারিদ্রের হার, কমেছে শিশু মৃত্যুর হার। করোনাকে জয় করতে পেরেছে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় খুব সহজেই। চিকিৎসা সেবায় প্রভূত উন্নত হয়েছে। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ও আদর্শ বাস্তবায়নের পথে যে অগ্রযাত্রা তা যেন অব্যাহত থাকে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে জনগণের সেটাই প্রত্যাশা।
লেখক : শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক

পূর্ববর্তী নিবন্ধগৌরবময় বিজয়ের মাস
পরবর্তী নিবন্ধবঙ্গবন্ধু : যাঁর মৃত্যু নেই, যাঁর ক্ষয় নেই